ঘটনার প্রতিবাদে কোনও বাক্যব্যয় করেননি বলিউডের প্রথম সারির প্রায় কোনও তারকাই। উজান স্রোতে সাঁতার কেটে কালো হাইনেকে দীপিকা প্রতিবাদীদের পাশে আগাগোড়াই ছিলেন নীরব। কিন্তু তাঁর নিরুচ্চার উপস্থিতিতেই সোশ্যাল মিডিয়া দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেল। এক দল রইলেন তাঁর পাশে। আর এক দল আবার একেবারে ‘হাতেনাতে’ তাঁর ‘অভিনয়’ ধরে ফেলে দাবি করল, সেটা নাকি ছিল ‘ছপক’-এর প্রচারকৌশল।
তবে বাকি সকলকে ছাপিয়ে সুশান্তকাণ্ডে ‘অভিযুক্ত’ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘অপরাধী’ হয়ে গিয়েছেন রিয়া চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবার। প্রেমিক সুশান্তকে ইচ্ছাকৃত মানসিক রোগী সাজিয়ে রাখা, নিয়মিত ওষুধ দেওয়া থেকে শুরু করে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ন্ত্রণ করা, সুশান্তের অ্যাকাউন্টের টাকা নয়ছয় করা-সহ অসংখ্য অভিযোগে বিদ্ধ হন সপরিবার রিয়া। বেশ কয়েক দিনের জন্য জেলে যেতে হয় রিয়া এবং তাঁর ভাই শৌভিককে। অভিনয়ের গুণে না হলেও সোশ্যাল আদালতের ‘রায়ে’ শিরোনামে চলে আসেন রিয়া।
সুশান্ত-কাণ্ড ঘটার আগে ফিরে যাওয়া যাক বছরের শুরুতে। তখন ‘মেয়ে’ শব্দটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল অনুরাধা পড়োয়ালের জীবনে। কেরলের জনৈক কারমালা মোডেক্স দাবি করেন অরুণ এবং অনুরাধা পড়োয়ালই তাঁর বাবা-মা। ব্যস্ত সময়সূচির জন্য তাঁরা শৈশবেই নাকি কারমালাকে দিয়ে দিয়েছিলেন পোন্নাচান এবং অ্যাগনেসকে। তার পর থেকে তাঁরাই তাঁর পালক বাবা-মা। নিজের দাবি আদালতে পেশ করেছেন কারমালা। অনুরাধার সঙ্গে অবশ্য দেখা করতে পারেননি। ঘটনাচক্রে এ বছরই সেপ্টেম্বরে ছেলে আদিত্যকে হারিয়েছেন অনুরাধা। প্রতিশ্রুতিমান মিউজিক অ্যারেঞ্জার আদিত্য মাত্র ৩৫ বছর বয়সে জীবন ছেড়ে চলে গিয়েছেন কিডনি বিকল হয়ে।
২০২০ আগাগোড়াই ‘তারকাদের সন্তান’ এবং ‘স্বজনপোষণ’ টিনসেল টাউনে মূল ইস্যু হয়ে উঠেছে। কর্ণ জোহর, মহেশ ভট্ট, অনুপম খের, সলমন খানের মতো তারকাকে এখনও কাঠগড়াতেই দাঁড় করিয়ে রেখেছেন নেটাগরিকরা। এই নামগুলোর জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা পান না বহিরাগতরা— এই অভিযোগে সোশ্যাল মিডিয়া সোচ্চার হয়ে ওঠে। স্টারকিডদের বয়কট করার জেরে চরম ব্যর্থ হয় মহেশ ভট্টের ‘সড়ক টু’। ‘ডিসলাইক’-এর রেকর্ড করে ছবির ট্রেলর।
সুশান্ত-কাণ্ড পরবর্তী স্বজনপোষণ বিতর্কে কমবেশি জড়িয়ে গিয়েছেন বলিউডের এই প্রজন্মের প্রায় সব কুশীলব। তাঁদের মধ্যে সবথেকে বেশি আলোচিত কঙ্গনা রানাউত। স্বজনপোষণ প্রশ্নে প্রথম থেকেই সরব পর্দার ‘কুইন’। কর্ণ জোহরকে বিদ্ধ করে কঙ্গনার সরাসরি অভিযোগ ছিল, সুশান্তের মতো প্রতিভার অকালে ঝরে যাওয়ার কারণ স্টারকিডদের প্রতি ইন্ডাস্ট্রির ‘পক্ষপাতিত্ব’।
তাঁর স্পষ্টবাদী স্বভাবের জন্য কঙ্গনা বরাবর একইসঙ্গে নন্দিত ও নিন্দিত। লকডাউনে ঘরবন্দি নেটাগরিকরা মজেছিলেন তাপসী পন্নু এবং স্বরা ভাস্করের সঙ্গে তাঁর বাকযুদ্ধে। পরবর্তীতে দিলজিৎ দোসাঞ্জের মতো তারকার সঙ্গেও বচসায় জড়িয়ে পড়েন কঙ্গনা। অভিনেত্রী কঙ্গনা নন, ২০২০ জুড়ে খবরে রইলেন ‘ভুল করা’ এবং ‘ভুল ধরা’ কঙ্গনা।
টিনসেল টাউনে পা রাখলে তাঁরা হতে পারতেন স্বজনপোষণের আদর্শ উদাহরণ। দু’জনেরই অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ নিয়ে কথা চলছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু সে সব থেকে অনেক দূরে অন্য কারণে খবরে এলেন শাহরুখ-কন্যা সুহানা এবং আমিরের মেয়ে ইরা। গায়ের রঙের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য উড়ে এসেছে সুহানার দিকে। আমিরের মেয়ে ইরাকে আবার কটাক্ষ করা হয়েছে মানসিক অসুখ নিয়ে। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরা জানিয়েছিলেন তিনি অতীতে মানসিক অসুখের সঙ্গে লড়াই করেছেন।
যে অঙ্কিতা লোখান্ডে নেটাগরিকদের অনুকম্পার পাত্রী হয়েছিলেন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক সুশান্তের মৃত্যুর পরে, ট্রোলিং থেকে মুক্তি পাননি তিনিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের বর্তমান বয়ফ্রেন্ড ভিকি জৈনের সঙ্গে ছবি দেওয়ার পর তাঁর উদ্দেশেও উড়ে আসে কটূক্তি। ছোট বা বড় পর্দায় সে রকম কাজের মধ্যে না থেকেও প্রাক্তন সম্পর্কের খাতিরে কার্যত বছরভর শিরোনামে থাকলেন অঙ্কিতা।
মিলিন্দ সোমান অবশ্য ট্রোলিং নিয়ে মাথা ঘামান না প্রাক্ সোশ্যাল মিডিয়া যুগ থেকেই। অতীতে বহু বিতর্কের নায়ক মিলিন্দ নগ্ন হয়ে দৌড়েছেন গোয়ার সৈকতে। এর জেরে অশ্লীলতাকে ‘উৎসাহ’ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর নামে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারা (অশ্লীল কর্মকাণ্ড) এবং ৬৭ ধারায় (অশ্লীল ছবি প্রকাশ) মামলা রুজু হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
সুশান্ত-কাণ্ড ছাড়া যে সব তারকা চলে-যাওয়া ২০২০ সালে খবরে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে মিলিন্দ ছাড়াও আছেন অভিনেত্রী সানা খান। চলতি বছরের অক্টোবরে ১৫ বছরের সুদীর্ঘ কেরিয়ারে ইতি টানেন অভিনেত্রী। ইনস্টাগ্রামের পোস্টে অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। গ্ল্যামার দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ইসলামের পথে চলতে চান বলে জানিয়েছিলেন সানা।
বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেও বিতর্কিত হওয়া যায়— বলিউডের পুরনো এই ধারায় এ বার শামিল নীনা গুপ্ত, নিমরত কউর, সায়নী গুপ্ত এবং আলায়া এফ। বিখ্যাত গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থার ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনের বার্তা ছিল, দীপাবলি হওয়া উচিত শব্দহীন আলোর উৎসব। ওই বিজ্ঞাপন ঘিরে জোরালো হয় বিতর্ক। নেটাগরিকদের একাংশের অভিযোগ ছিল, হিন্দুধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করেছে এই বার্তা। ট্রোলিং থেকে রেহাই পাননি বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়া চার অভিনেত্রীও। তার আগে একই সংস্থার আরও একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছিল।
বিতর্ক-ট্রোলিং-ভুল কারণে শিরোনামে আসার ভূরি ভূরি নজির ছড়িয়ে আছে বাংলাতেও। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি এ বারও বিতর্কের কেন্দ্রে। নেট দুনিয়ায় সৃজিতের ‘ফেলুদা ফেরত’-এর ট্রেলর পৌঁছন মাত্র শুরু হয় বিতর্ক। কারণ, টাইটেল কার্ডে লেখা ছিল ‘রিটন অ্যান্ড ডিরেকটেড বাই সৃজিত মুখোপাধ্যায়’। অর্থাৎ কাহিনি এবং পরিচালনা, দু’টি বিভাগেই তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম হয়ে ওঠে ফেলুদা-ভক্তদের ক্ষোভে। কারণ, ‘ফেলুদার’ লেখক তো সত্যজিৎ রায়।
‘ফেলুদা ফেরত’-এ থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের দু’টি কাহিনি আছে—‘ছিন্নমস্তার অভিযান’ এবং ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’। ট্রেলর মুক্তির পরে একাংশের বক্তব্য ছিল, সত্যজিতের কাহিনির লেখক কী ভাবে হতে পারেন সৃজিত? অন্য একাংশের দাবি ছিল, টাইটেল কার্ডের প্রথমেই লেখা ছিল ‘সত্যজিতের কাহিনি অবলম্বনে’। ফলে বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই।
তবে সৃজিতকে ঘিরে বিতর্ক এতেই শেষ হয়নি। সুশান্তের মৃত্যুর পরে অভিনেত্রী শ্রীলেখা ফেসবুক লাইভ করেন টলিউডে স্বজনপোষণ নিয়ে। সেখানে তাঁর মুখে উঠে এসেছিল সৃজিতের নাম। আরেক পরিচালক সুমন ঘোষের সঙ্গে ‘রুচি’ সংক্রান্ত বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন সৃজিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পুরস্কার এবং সম্মানের বিবরণ দিয়েছিলেন সৃজিত। সেখানেই সুমন প্রশ্ন তোলেন তাঁর ‘রুচি’ নিয়ে। পাল্টা উত্তর দিতে ছাড়েননি সৃজিতও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy