Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

কেন এই অবমাননা

‘মহানায়ক’ সিরিয়ালে তাঁদের বাবা-কে দেখে তিতিবিরক্ত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্যা রাণু ও পুত্র জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। শুনলেন সর্বাণী মুখোপাধ্যায়‘মহানায়ক’ সিরিয়ালে তাঁদের বাবা-কে দেখে তিতিবিরক্ত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্যা রাণু ও পুত্র জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। শুনলেন সর্বাণী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

রাণু মুখোপাধ্যায়

এত অপমানিত কোনও দিন লাগেনি! কী না কী বানানো হল বাবাকে! লোভী, মদ্যপ, মিথ্যেবাদী, মেয়েবাজ, ধান্দাবাজ!

উত্তমকুমারের হাজার ‘সাইকোফ্যান্টস’ অর্থাৎ চামচাদের বাবা একজন! ছিঃ! ছিঃ!

আমার সৌম্যকান্তি বাবার একটা ‘অ্যরা’ ছিল। ‘মহানায়ক’-এর হেমেন মুখোপাধ্যায়ের মতো কখনওই বম্বে-বম্বে করে হেঁদিয়ে মরত না হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। বরং কেরিয়ারের সব চেয়ে ক্রুশিয়াল সময় বাবা বম্বে থেকে পালিয়ে আসতে চেয়েছিল। স্টেশন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যান ‘ফিল্মিস্তান’ -য়ের শশধর মুখোপাধ্যায়।

সব থেকে আপত্তিকর তার মদ খাওয়ার দৃশ্য (এপিসোড ৫০)। যে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মদ ছুঁতো না গন্ধ সহ্য হতো না বলে, সে একলা বার-এ বসে মদ খাচ্ছে!

আবার হঠাৎই দেখা হয়ে যাওয়া মহানায়ককে অনায়াসে মিথ্যে কথা বলে দিচ্ছে আগে থেকে প্ল্যান করে অন্য মতলবে আসা হেমেন ওরফে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়!— ‘এখানে একটু একা থাকতে এলাম...নিজের সাথে।’ এতেও রেহাই না পেয়ে বিব্রত মুখে বলছে—‘একজন গেস্ট আসার কথা।’

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কোনও মহিলাকে বার-এ ডাকার মতো হীন রুচির মানুষ ছিল না। কোনও মহিলা সম্পর্কে ‘ছিনে জোঁকের মতো লেগে রয়েছে’ এমন অভব্য কথা তার মুখ থেকে কখনও বেরোত না। আর ‘চাওয়া পাওয়া’ নিয়ে ওরকম জড়ানো গলার অশালীন টুইস্ট তার সম্পর্কে চিন্তাও করা যায় না। এবং কাজের লোভ দেখিয়ে মহিলাসঙ্গ করার লাম্পট্য কিংবা কাপুরুষের মতো মিথ্যে সাফাই বা কৈফিয়ত দেবার চরিত্র তার নয়। উত্তমকুমার যেমন ‘মহানায়ক’, আমার বাবা তেমন ‘সঙ্গীত সম্রাট’।

অথচ ‘মহানায়ক’ সিরিয়ালের সঙ্গীত সম্রাট ‘বম্বের দরকারি ফোনের’ ছুতো দেখিয়ে লবিতে পালিয়ে যায়। মহানায়ক ও তার উঠতি নায়িকার তর্ক-বিতর্কে মহানায়ক ‘হেমেন’ অর্থাৎ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে জড়িয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বসে— ‘যাও, অন্ধকার লবিতে গিয়ে দেখো তোমার দাদা কী করছে...’ কিংবা ‘ব্যস্ততা দেখিয়ে উঠে গেল, হয়তো আমাকে ইঙ্গিত করছিল আমি যাতে তাড়াতাড়ি উঠে যাই।’ (এপিসোড ৫০)

বারবার কথায় কথায় ‘তোমার ওই বম্বের দাদা’ অথবা ‘তোমার ওই বম্বের দাদাকে গাড়িতে চড়িয়ে জুহু বিচ-এ নিয়ে ঘোরাও, তা হলে অনেক কাজ পাবে হিন্দি ছবিতে’ (এপিসোড ৫৬) — এই সব সংলাপে কোন সম্পর্কের ইঙ্গিত? — ‘কাস্টিং কাউচ?’ কাজ পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ নিয়ে সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন!

বলতে বাধ্য হচ্ছি, জোর করে এই নোংরামো যাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই ‘হেমেন’ অর্থাৎ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর ‘প্রিয়া’ অর্থাৎ সুপ্রিয়াদেবীর আজীবন সম্পর্ক ছিল বড় দাদা আর ছোট বোনের।

‘মহানায়ক’ সিরিয়ালে এ ছাড়াও নানা ভাবে আক্রান্ত ‘হেমেন’-এর কভারে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। মহানায়কের মুখের ওপর ফোনের লাইন কেটে দিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখা (এপিসোড ৫৫) — যে অভদ্রতা কখনও আমার বাবার স্বভাবে ছিল না! আবার, মহানায়কের স্ত্রী যখন বলে — ‘সবাই ওকে ঠকাবে, প্রত্যেকে ফাঁসাতে চাইবে, আর ও বুঝতেও পারব না’ ... তখন ফ্ল্যাশকাট-এ মহানায়ক ও তার সেই নতুন নায়িকার নাচের সিকোয়েন্সে ব্যাকগ্রাউন্ডে বারবার ‘হেমেন’ অর্থাৎ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মুখ! হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করছে (এপিসোড ৫৬)।

আসল মহানায়ককে যারা ঠকিয়েছিল, ফাঁসিয়েছিল, আমার বাবা কি তাদেরই একজন?

‘বায়োপিক’-এর প্রধান শর্তই হল, আসল ক্যারেকটারকে যথাযথ ভাবে তুলে ধরা। কিন্তু এখানে? কী দেখলাম এ সব!

কেন এই অবমাননা? কেন?

জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়

আর দেখতে পারছিলাম না। বন্ধ করে দিয়েছি দেখা! আমার বাবা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে এত নীচে নামাতে পারল ওরা!

কেবলই ভুল তথ্য, বিকৃত তথ্য। কত ঘটনা বলব? বেশি বলতেও যেন বাধছে।

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

শুধু একটা ঘটনা বলি। এক জায়গায় দেখানো হয়েছে, মহানায়ককে অন্যায় ভাবে নিজের হিন্দি ছবি থেকে বাদ দিয়ে ‘বিশ্বনাথ’ অর্থাৎ, বিশ্বজিৎকে কাস্ট করছে বাবা।

ডাহা মিথ্যে। বাবার প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘বিশ সাল বাদ’-এর কাস্টিং-এ মহানায়ক অর্থাৎ উত্তমকুমার কোথাও ছিল না।

স্টার থিয়েটারে বিশ্বজিৎকে দেখে আমার বাবা বম্বের বীরেন নাগকে নিয়ে তাকে ‘বিশ সাল বাদ’-এর নায়কের চরিত্রে সিলেক্ট করে।

এ ধরনের ভুল, বিকৃত তথ্য দিয়ে ‘মহানায়ক’ সিরিয়ালে আমার বাবাকে পদে পদে হেয় করা হয়েছে।

এই নোংরামোটা কেন করা হল আমার কাছে কোনও স্পষ্ট কারণ জানা নেই।

আমি কৈফিয়ত চাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Hemanta Mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE