ছবি: অম্লান দত্ত
হঠাৎ করে কি বদলে গেলেন রণবীর কপূর? মুম্বইয়ের মিডিয়া তো তেমনই বলছে এবং তাঁরা নাকি কপূর পরিবারের এই তরুণ তুর্কির বদলে যাওয়া হাবভাব দেখে রীতিমত বিস্মিত। রণবীরের স্মিত হাসি, কখনও সৌজন্য না হারানো এবং সবচেয়ে বেশি যেটা চোখে লাগছে, সেটা হল ক্যাটরিনাকে আবার নতুন করে খুশি রাখার চেষ্টা। এত দিন পর্যন্ত তো পরস্পরকে যতটা পারতেন এড়িয়ে চলতেন। এবং তাঁদের ছবি তোলার চেষ্টা করলে ফোটোগ্রাফারদের উপর রীতিমত চটে যেতেন। কিন্তু এখন তাঁর ভাঁড়ারে হিটও নেই, তাই সে মেজাজও নেই।
ইদানীং কতটা বদলেছেন রণবীর, সেটা বুঝতে গেলে একটু ফ্ল্যাশব্যাকে তো যেতেই হবে। আপাতদৃষ্টিতে রণবীরকে নেহাতই শান্তশিষ্ট মনে হলেও বংশ গরিমার কারণে অহংকার, তাঁর ব্যবহারেও উপচে পড়ে। তা ছাড়া নিজের অভিনয় দক্ষতা, সুদর্শন চেহারা নিয়েও নাকি তাঁর রয়েছে সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন। বেশ কিছু দিন আগের ঘটনা। মধ্যরাতের শহরে ফোটোগ্রাফাররা বেরিয়েছেন টহল দিতে খবরের সন্ধানে। সে দিন ‘জালে’ উঠেছিলেন রণবীর। তাঁর বান্দ্রার পালি হিলের নতুন কেনা ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে বাবার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পিছু-পিছু ফোটোশিকারীর দলও। বাড়িতে পৌঁছে ফোটোগ্রাফারদের সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করেন তিনি। একজনের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যান। তার পর বোধহয় বাড়ি থেকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ক্যামেরা ফেরত দিতে বলা হয় এবং তিনিও ‘বাধ্য’ ছেলের মতো সেটাই করেন।
আরও পড়ুন: গাঁজাখুরির ওভারডোজ, হয়রানি দর্শকের
তবে এখানেও ভাববেন না এই স্বঘোষিত ‘মাম্মাজ বয়’ মায়ের কথায় চলেন। মায়ের কথা শুনলে হয়তো ক্যাটরিনার সঙ্গে তাঁর প্রেমটাই হতো না। কারণ তাঁদের পরিবারে কোনও দিনই ক্যাটরিনা ‘ফিট’ করেন না। যাই হোক, ‘অজব প্রেম কী গজব কহানি’-র সেটে তাঁদের প্রেমের শুরুয়াত। ‘রাজনীতি’র শ্যুটিংয়ের সময় রণবীর হাবুডুবু খাচ্ছেন তাঁর প্রেমে। তখনও দীপিকার সঙ্গে ব্রেকআপ হয়নি। যদিও ক্যাটকে নিয়ে দীপিকার সন্দেহের কারণে প্রবল অশান্তি চলছিল তাঁদের মধ্যে। শোনা যায়, ভোপালে ‘রাজনীতি’র শ্যুটিংয়ে কাউকে না জানিয়েই দীপিকা পৌঁছে যান এবং দু’জনকে একসঙ্গে ‘রংগে হাত পকড় লিয়া’! সেখানেই বিচ্ছেদে সিলমোহর লাগিয়ে দেন ‘মস্তানি’।
তার পর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রেম এগোচ্ছিল। কিন্তু সেখানেও ছিল অস্বস্তির কাঁটা। কারণ একদিকে এই প্রেমকে পরিণতি দিতে গিয়ে রণবীর ঠকিয়েছেন দীপিকাকে, অন্য দিকে ক্যাটের সঙ্গে সলমন খানের বিচ্ছেদ। তার পর এক সময় রণবীর ক্যাটেরও ব্রেকআপ হল। রণবীর যতটা পারলেন ‘প্রাক্তন’ বান্ধবীকে এড়িয়ে চলতে লাগলেন। ক্যাটরিনা নাকি সম্পর্কটা জোড়া লাগাতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন, পারেননি। এর পর গোল বাঁধল যখন ক্যাট ‘জগ্গা জাসুস’-এর বাকি কাজ শেষ করতে গড়িমসি করতে লাগলেন। রণবীর এ ছবির প্রযোজকও বটে। অনেক কষ্টে কথাবার্তার পর অবশেষে নায়িকা ডেট দিলেন ছবির কাজ শেষ করার। ‘তামাশা’, ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এ রণবীরের অভিনয় প্রশংসিত হলেও, ছবি প্রত্যাশিত ব্যবসা করেনি। উলটো দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী রণবীর সিংহের সঙ্গে দীপিকার জোরদার রসায়ন এবং দু’জনের পরের পর হিট ও বিগবাজেট ছবি পকেটস্থ করা, মিডিয়ায় সমনামীর জনপ্রিয়তা... সব কিছু ভীষণ ভাবে দিশেহারা করে দিয়েছিল মি. ক্যাসানোভাকে।
সেখান থেকেই বোধহয় এই সংযম। অনুদ্ধত আচরণ। ‘জগ্গা জাসুস’-এর মিউজিক লঞ্চে তাই ক্যাটরিনার প্রতি রণবীরের আচরণ দেখে বিস্মিত উপস্থিত মিডিয়া। তিনি প্রশংসা করে বলেন, ক্যাটরিনা হলেন হিটমেশিন। ক্যাটরিনা নাকি প্রচণ্ড ভাল নাচেন এবং তিনি মোটেই ওঁর মতো নাচতে পারেন না। এই কথায় অবশ্য ক্যাটরিনাও সায় দিয়ে বলেন, ‘ও তো হ্যায়’! রণবীর যে ভাল অভিনেতা মিউজিক লঞ্চের মঞ্চেও তার স্বাক্ষর রাখলেন, ক্যাটরিনা যথারীতি সেখানে
পিছিয়ে পড়লেন।
আসলে আরব সাগর পারের এই স্বপ্নের শহরটা মোটেই স্বপ্নালু নয়। বড় নির্মম। এখানে বক্স অফিসই শেষ কথা। যত বড় পরিবার থেকে আসুন না কেন বা যত ভাল অভিনেতাই হোন, ছবি ‘হিট’ তকমা না পেলে কেউ ফিরে তাকাবে না। সেটা বোধ হয় বুঝে গিয়েছেন কপূর-সন। ফ্যামিলি ব্যাগেজ ঝেড়ে ফেলে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে উঠে এসে এখন তাঁর লক্ষ্য স্থির। তাঁর আচরণই সে কথা বলে দিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy