জুটি। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।
তখন বিকেল। অফিস থেকে হেঁটেই পৌঁছলাম সবচেয়ে কাছের হোটেলে। লিফটে চড়ে ওপরে উঠতেন দেখা মিলল তাঁদের। ধুতি-পাঞ্জাবিতে প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় এবং শাড়ির মায়ায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ‘‘একটু ওয়েট কর। সকাল থেকে একটানা চলছে। কস্টিউম চেঞ্জ করে নিই’’ বললেন প্রসেনজিত্। পাশাপাশি দু’টো ঘরে চেঞ্জের জন্য ঢুকে পড়লেন তাঁরা।
যাঁদের জন্য ১৪ বছরের বিরতির পরেও হল ভরিয়েছিলেন দর্শক। সৌজন্যে ‘প্রাক্তন’। যাঁদের জন্য ‘প্রাক্তন’-এর পর থেকে ফের অপেক্ষা শুরু করেছেন সেই আম-আদমি। প্রসেনজিতের কথায়, ‘‘কাজটা করি শুধু দিনের শেষে একটা দর্শকের বাহ! শুনব বলে।’’ সেই বাহ্ বলার জন্য আম-আদমির অপেক্ষা শেষ হবে আগামী ২৭ এপ্রিল। সৌজন্যে ‘দৃষ্টিকোণ’। কেয়ার অফ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। সে জন্যই এই আড্ডা সেশন।
তখন সন্ধে। হোটেলের বারান্দায় চেয়ার সাজিয়ে আমরা রেডি। ততক্ষণে কস্টিউম চেঞ্জ করে আমার আগে পৌঁছনো সাংবাদিক বন্ধুকে সাক্ষাত্কার দিচ্ছেন জুটি। শেষ হতেই প্রসেনজিত্ বললেন, ‘‘রেডি তো?’’ ঢকঢক করে ঘাড় নাড়লাম।
আরও পড়ুন, ‘আমি কি তোমায় খুব...’
সাজানো চেয়ারে এসে বসলেন দু’জন। সর্বক্ষণের সঙ্গী রামের হাত থেকে ফোন নিয়ে দ্রুত চেক করে নিলেন প্রসেনজিত্। আর ঋতুপর্ণা পাফ বুলিয়ে নিলেন আরও একবার। কয়েক সেকেন্ড পর প্রসেনজিত্ বলে উঠলেন, ‘‘শুরু করি?’’
শুরু হল আড্ডা। ‘দৃষ্টিকোণ’-এ দৃষ্টি দিলেন সেই চরিত্ররা। যাঁদের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন আম-আদমি। যাঁদের বাহ্ শুনবেন বলে প্রতিটি মুহূর্ত ‘সিনেমা’য় বাস করেন প্রসেনজিত্ এবং ঋতুপর্ণা।
আরও পড়ুন, ‘দেব বলেছিল, নাও ইউ হ্যাভ টু জাস্টিফাই ইওরসেল্ফ’
সে দিন শেষ চৈত্রের হাওয়ায় মাতাল কলকাতা। আর হোটেলের ভিতর এসিতে বসেও চৈতি হাওয়ার ছোঁয়া ঋতু-প্রসেনজিতের মনে। ‘‘আমরা দু’জন এবং কৌশিকদা। এই তিনজনের একসঙ্গে প্রথম কাজ দৃষ্টিকোণ’’ শুরু করলেন ঋতুপর্ণা। ‘প্রাক্তন’ এর পর বড় পর্দায় ফিরতে এত সময় নিলেন যে! ঠিক এখান থেকেই সূত্র ধরলেন প্রসেনজিত্। ‘‘আসলে আমাদের দায়িত্ব এখন অনেকটা। আগে যেমন অনেক ছবি করতাম একটা না চললেও আর একটা দিয়ে ম্যানেজ করার সুযোগ থাকত। কিন্তু এখন তা নয়। উই হ্যাভ টু বি ভেরি পারফেক্ট। আমাদের একসঙ্গে করার মতো স্ক্রিপ্ট যেমন হতে হবে, তেমন পরিচালকও চাই। আর কৌশিক সেটা জাস্টিফাই করেছে। স্ক্রিপ্ট শোনার পর আমি যে এটা করব সেই সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্ত সময় লাগেনি।’’
‘দৃষ্টিকোণ’-এ প্রসেনজিত্ এবং ঋতুপর্ণা। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।
‘‘কৌশিকদা কিন্তু খুব ভাল অভিনয়ও করেছে।’’ গল্পের আর একটা নতুন চ্যাপ্টার শুরু করলেন ঋতুপর্ণা। ‘‘অসাধারণ’’ বলে উঠলেন প্রসেনজিত্। ‘‘আসলে এই ছবিতে আমরা ছাড়া বাকি অভিনেতারাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কৌশিকদার গল্প সাজানো দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। যখন শুটিং করেছি বুঝিনি। পরে ডাবিংয়ে মনে হয়েছে, এটার পর ওইটা! চমকে গিয়েছি। তাই না?’’ প্রসেনজিতের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়লেন ঋতুপর্ণা। ‘‘কৌশিকের মাথায় সব সময় এডিট চলে’’ সমর্থনের সুর শোনা গেল প্রসেনজিতের গলায়।
আরও পড়ুন, অর্ডিনারি কিছু করতে চাইব না: স্বস্তিকা
এ ছবির লুক, এ ছবির গান, শুটিংয়ের ভাল-মন্দরা আড্ডায় বসত করল। প্রসেনজিত্ শেয়ার করলেন, ‘‘সবচেয়ে কঠিন সিন থাকলে কৌশিক সবচেয়ে হালকা মেজাজে থাকে।’’ খেই ধরিয়ে দিয়ে ঋতুপর্ণা বললেন, ‘‘আমরাই বরং বলেছি একটু সিনটা পড়ে নিই। হা হা..।’’
জানতে চেয়েছিলাম, এত বছর পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে আগের কোনও মুহূর্ত মিস করেন? চোখে চোখ রেখে উত্তর দিলেন যুগল। ‘‘ক্যামেরা অন হলে চরিত্ররা কথা বলে ওঠে। আমাদের আর অন্য কিছু মনে থাকে না।’’
মুহূর্তরা ঋণী হয়ে রইল মুহূর্তদের কাছেই।
ভিডিও: অজয় রায়।
লোকেশন সৌজন্য: দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy