Advertisement
E-Paper

ছয় দশক পেরিয়ে স্বমহিমায় উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্র

সালটা ১৯৫৬-র শেষ বেলা। জনা কয়েক যুবক রাতভর কলকাতার এক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলন শুনে উত্তরপাড়ায় বাড়ি ফিরছিলেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছিল সদ্য শুনে আসা শিল্পীদের সুরসাধনা নিয়ে।

রাজন ও সাজন মিশ্র।

রাজন ও সাজন মিশ্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৪৬
Share
Save

সালটা ১৯৫৬-র শেষ বেলা। জনা কয়েক যুবক রাতভর কলকাতার এক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলন শুনে উত্তরপাড়ায় বাড়ি ফিরছিলেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছিল সদ্য শুনে আসা শিল্পীদের সুরসাধনা নিয়ে। কিন্তু শীতের রাতে দূরে কলকাতায় গিয়ে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শোনার বদলে যদি এখানে উত্তরপাড়াতেই সেই আয়োজন করা যায় তা হলে কেমন হয়! সেই শুরু, গুটিকয় সঙ্গীতপ্রেমী যুবকদের হাত ধরেই পথ চলা শুরু হয়েছিল ইতিমধ্যেই সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে আসা এবং দেশ-বিদেশের শিল্পী মহলে সম্ভ্রম আদায় করে নেওয়া হুগলির উত্তরপাড়া সঙ্গীত সম্মেলনের। ঝড়-ঝাপটা যে ছিল না তা নয়, কিন্তু ১৯৫৭-র ১৯ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত এক নাগাড়ে পথচলায় তা কখনওই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এক সময় রাজ্যে বিশেষত কলকাতাকে কেন্দ্র করে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজক কম ছিল না। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই আজ অস্তিত্বহীন। যাঁরা এখনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছেন তাঁদের মধ্যে উজ্জ্বল উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্র।

একটা সময় ছিল যখন কলকাতা শহরে শীত নামলেই বসে যেত একাধিক শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর। দেশ-বিদেশের প্রথিতযশা শিল্পীরা হাজির হতেন তাঁদের সুরের ঐশ্বর্য নিয়ে। সুররসিক কলকাতার মানুষের সম্পর্কে প্রশংসা ঝরে পড়ত তাঁদের গলায়। সঙ্গীতের আসর কমে গেলেও যা আজও শোনা যায় শিল্পীদের মুখে। রাতের পর রাত শীতের চাদর মুড়ি দিয়ে শ্রোতারা মজে যেতেন সুরের সাগরে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলেছে ছবি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আয়োজনে আগের তুলনায় অনেকটাই ভাটা। সম্মানের সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ডোভার লেন এবং গুটিকয়েক সংস্থা। সেখানে উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্র ব্যাতিক্রম বইকী। পিছনে ফেলে আসা নানা সুখস্মৃতি নিয়ে আজও সঙ্গীতরসিকদের কাছে নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন এঁরা। আর এর জন্য বোধহয় সবচেয়ে বড় সম্পদ সংস্থার প্রবীণ কিছু মানুষ। যাঁদের কাছে এই সংস্থা সন্তানতুল্য। একইসঙ্গে তাঁরা দায়বদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মকে তৈরি করে সংস্থার ভিত মজবুত করার ক্ষেত্রেও।

প্রারম্ভে অবশ্য জুটেছিল অনেক উপহাস, সন্দেহ। অনেকেই ভেবেছিলেন কম বয়সের উচ্ছ্বাস। কিন্তু সে সব তুচ্ছ করে শিল্পী ও শ্রোতৃমহলে আজ স্বমহিমায় এই সংস্থা। এই বছরেও ২৩, ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি-তিনদিনব্যাপী আয়োজন ও সেইসঙ্গে হীরকজয়ন্তীর সাড়ম্বর অনুষ্ঠান। উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্রের অনুষ্ঠান যেখানে হয় স্থানমাহাত্ম্যে তার গরিমাও কম নয়। গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে সেই উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ সাধারণ গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ বহু ইতিহাসের সাক্ষী। মাইকেল মধুসূদন, ঋষি অরবিন্দের স্মৃতিধন্য উত্তরপাড়া। বিদ্যাসাগর এসেছিলেন এই গ্রন্থাগারে।

উত্তরপাড়ার এই সঙ্গীত ঐতিহ্য, গরিমা এখন আর শুধু তার নিজের নয়, সমস্ত সঙ্গীতপ্রেমীদের।

uttarpara sangeet chakra gautam bandopadhay

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}