যিশু ও পরম। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
দু’সেকেন্ড ক্রিকেটীয় আড্ডায় বসলেও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের চোখ চকচক করে ওঠে; বলেন, ‘‘জােনন, গাওস্করের ক্যাপটেন্সিতেও খেলেছি!’’ চ্যারিটি ম্যাচ। তবু, সানি গাওস্কর তো!
ক্রিকেট নিয়ে টলিউডের এক নম্বর নায়কের মুখড়া যদি এমন হয়, বাইশ গজের কথা পাড়ুন টালিগঞ্জের এক নম্বর ক্রিকেটার যিশু সেনগুপ্তর কাছে। দেখুন কী হয়! আফসোস শুনবেন নিমেষে, ‘‘মাত্র পাঁচ হাজার টাকা জোগাড় করতে পারিনি বলে, ইংল্যান্ডে এক মাস থেকে খেলার সুযোগ ছাড়তে হয়েছিল! ওখানে ভাল খেললে কাউন্টি ক্রিকেটে ডাক পাওয়া যেত। বাবা-মাও খুব কষ্ট পেয়েছিলেন।’’
আর টালিপাড়ার ব্যোমকেশ কাম ফেলুদা? হুম, আবির চট্টোপাধ্যায়। বাঁ হাতে ব্যাট, ডান হাতে অফ স্পিন করতেন। জ্বলজ্বলে গোল্লা গোল্লা চোখ নিয়ে আবির বলেন, ‘‘চুটিয়ে নেট প্র্যাকটিস করতাম কাঁকুড়গাছির ইএসআই হাসপাতালের উল্টো দিকের মাঠে। এর বাইরে চার দিকে বল পিটিয়ে বেড়াতাম সারাক্ষণ। বড় মাঠেও খেলেছি। স্পোর্টিং ইউনিয়ন থেকে পাইকপাড়া। ব্রায়ান লারার পাঁড় ভক্ত ছিলাম। লারার ব্যাক-লিফট নকল করতে গিয়ে কী বকাটাই না খেয়েছি কোচ সঞ্জীবন স্যার, জিতেন স্যারের কাছে! নেট থেকে সাসপেন্ড করে দিয়েছিলেন দু’দিন।’’
আর এক কালের তোপসে? গোড়াতেই সপাটে ড্রাইভ পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের, ‘‘শুনুন, ওয়ান ড্রপ ক্রিকেটে আসুন, জান দেব তো উইকেট দেব না।’’
একটি প্রদর্শনী ম্যাচের আগে জিতেন্দ্র, জনি ওয়াকার, অমিতাভ বচ্চন, দিলীপকুমার, অনিল চট্টোপাধ্যায় ও রবি ঘোষ
আর সন্দীপ্তা ‘দুর্গা’ সেন? ক্লাস টেন অবধি কখনও মাঠে, কখনও গ্যারেজে বল পিটিয়েছেন। এখনও হাত নিশপিশ করে ‘হাউজদ্যাট’ শুনলে! প্রিয় ক্রিকেটার কে জানতে চাইলে, ‘দাদা’ দিয়ে শুরু করে সচিন, ধোনি হয়ে কোহালিতে এসে ফুলস্টপ দিলেন। সে কী! সুন্দরী-ভক্তের তালিকায় কোনও বোলার নেই? উত্তর, ‘‘ওফ্ফ্, শোয়েব আখতার! কত্তো দূর থেকে ছুটে আসত, চুলগুলো হাওয়ায় উড়ত। পুরো বাঘ!’’
বাংলার সিনে-মহলে পরদার ও-পিঠও আছে! তিনি মুমতাজ। গুচ্ছের স্পোর্টস-এ আগ্রহ থাকলেও ক্রিকেটে ইন্টারেস্ট লবডঙ্কা।
প্রসেনজিতের খেলার শুরু পাড়া ক্রিকেট কিংবা দমদমের বাড়িতে বিশাল খোলা চত্বরে। তিনি আবার ক্রিকেটে নিজের চেয়ে বাবা বিশ্বজিৎকে এগিয়ে রাখেন। বলছিলেন, ‘‘বাবা খেলতেনও ভাল। বাবার জন্যই এক সময় গাওস্কর, কপিলদেব, কার্সন ঘাউড়ির ঘনিষ্ঠ হই। গাওস্করকে একবার কলকাতা দেখানোর ভারও পড়ে আমার ওপর। শিল্পী সঙ্ঘের একটা ম্যাচ মনে পড়ে। উত্তমজেঠু অ্যারেঞ্জ করেছিল। অমিতাভ বচ্চনও এসেছিলেন।’’ আর একটা চ্যারিটি ম্যাচে গাওস্কর ব্যাট করতে নামবেন। ‘‘হঠাৎ দেখি, পকেট থেকে নিজের পার্সটা বার করে আমায় দিয়ে বললেন, ‘এটা একটু রাখবে?’ আমি কেমন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ভ্যাবলা বনে গিয়েছিলাম,’’ যৌবনের স্মৃতি বলছিলেন বুম্বা।
কোনও দিন চোট্টামি করেছেন? এ প্রশ্নে হঠাৎ সিরিয়াস যিশু, ‘‘কক্ষনও না। আউট বুঝলে আম্পায়ারের আঙুল তোলার অপেক্ষা করিনি।’’
ক্লাস এইট থেকে সিরিয়াস ক্রিকেটের শুরু যিশুর। তার পর এলগিন রোডে বালক সঙ্ঘের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন। গোপাল বসু কোচ। ফার্স্ট ডিভিশন সুবার্বানের হয়ে। মিডিয়াম পেসার। ডান হাতি ব্যাটসম্যান। সেঞ্চুরিও আছে। আন্ডার থার্টিন-এ বেঙ্গল খেলেছেন। ‘‘চিত্রাঙ্গদা’র শ্যুটিং। এ দিকে সিসিএল-এর প্র্যাকটিস ম্যাচ। ঋতুদার (ঋতুপর্ণ ঘোষ) পায়ে পড়ে গিয়েছিলাম। ঋতুদা প্রচণ্ড খাপ্পা হয়ে, পরে খেলতে ছেড়েছিল।’’ নিজের ক্রিকেট-পাগলামির গল্প শোনালেন যিশু।
পরমের গল্প একটু অন্য। দোলনা স্কুলে টেবলটেনিস ব্যাট আর বলে ক্রিকেট। বালিগঞ্জ স্টেশন রোডে পাড়া-ক্রিকেট। কিন্তু খেলা যত না, দেখার গল্প তাঁর বেশি। এখনও উত্তেজিত ইডেনে ল্যান্স ক্লুজনারকে ছাতু করে আজহারের শৈল্পিক তাণ্ডব। সচিনের প্রথম সেঞ্চুরি দেখেছিলেন সারাক্ষণ একটা সাইকেলের টায়ার ছুঁয়ে বসে থেকে। সংস্কার আর কী! টায়ার ছাড়লেই সচিন যদি আউট হয়ে যান!
সন্দীপ্তা ভবানীপুরে নীলকুঠির মাঠে ছেলেদের সঙ্গেও বল পিটিয়েছেন। আউট নিয়ে ধাক্কাধাক্কি, ঝগড়া লেগেই থাকত সেখানে। তাঁর এক জেঠু এখনও বিবেকানন্দ পার্কে কোচিং করান।
ইডেনে চ্যারিটি ম্যাচে শ্যামল মিত্র, অসিত সেন, বিকাশ রায়ের সঙ্গে উত্তমকুমার
আবির কিছুতেই ভোলেন না, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভিভিএস লক্ষ্ণণের ২৮১। ‘‘ভারত হারছে ধরে নিয়ে, ফোর্থ-ডে মাঠে যাইনি। টিকিট ছেড়ে দিয়েছিলাম অন্যকে। ভারত জিতল। আর আমি বাইরে বসে হাত কামড়ালাম।’’
যিশু যেমন কিছুতেই ভোলেন না, ইডেনে ওঁর শেষ ম্যাচে চার পাশে ক্লোজ-ফিল্ডার সাজিয়ে চেতন শর্মার গাঁক গাঁক করে বাউন্সার! চেতন তখন মোহনবাগানে। এর পরই ‘চৈতন্য মহাপ্রভু’ সিরিয়ালে যিশুর ডাক। ওঁর বাবা তখন অসুস্থ। ক্রিকেট ছাড়তেই হল। তবু এই তো সে দিন, সেলেব ক্রিকেটে বড় বড় ঘাসওয়ালা, এবড়োখেবড়ো সন্তোষপুর স্টেডিয়ামকে ‘ম্যাচফিট’ করার জন্য তিন মাস ধরে প্রাণপাত করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের প্রথম সারিতে ছিলেন যিশু সেনগুপ্ত!
এই ‘প্যাশন’-এর এক্কেবারে উল্টো পাড়ে দাঁড়িয়ে মুমতাজ। বক্সিংয়ে আছেন, বাস্কেটবল বা টেনিসেও আছেন। কিন্তু ক্রিকেট? টেস্ট-ওয়ান ডে, দূরে থাক, আইপিএল-ও দেখেননি একবারও। ক্রিকেট ওঁর জীবন থেকে এখনও ‘গিলি গিলি গে’!
সে হোক, আইপিএল-এ এবারেও টলিউডের বাজি কেকেআর! আপনার? আজ বাদে কাল যুদ্ধু! শুরু হয়ে যাচ্ছে গম্ভীর-অভিযান! স্টার্ট প্লে....
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy