বোল্ড ফোটোশুটে রাইমা সেন।
কয়েক বছর আগে অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের সেই বিস্ফোরক উক্তি হয়তো মনে আছে অনেকেরই, ‘‘হ্যাঁ, আমি একজন মহিলা। আমার স্তন আছে এবং ক্লিভেজও। আপনাদের কী সমস্যা?’’ সেই সময়ে দীপিকার মন্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন অন্য তারকারাও। অনেকেই তাঁর সেই টুইটকে রিটুইট করেছিলেন।
কিন্তু শরীর নিয়ে ছুঁৎমার্গ কি দূর হল এই তথাকথিত ‘গ্লোবাল’দুনিয়ায়? একেবারেই না। উল্টে অভিনেত্রীদের নিয়ে চলে নানা ধারার কুরুচিকর মন্তব্য।শরীর একটা ব্র্যান্ড, যাকে নানা ভাবে বিক্রি করে ভোগবাদের দুনিয়া। সেই দুনিয়ায় থাকে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকও। নিজেদের কেমন করে লালন করছেন আজকের টলিপাড়ার অভিনেত্রীরা?
রাইমা সেন। গোল টিপ, শাড়ি, নিদেনপক্ষে লং গাউনের বাইরে এসে খোলামেলা পোশাকে সম্মোহনের ভাষা বদলে দিচ্ছেন তিনি।প্রায়ই ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকে খোলামেলা ছবি। ছোট পোশাক বা ক্লিভেজের উদাত্ত আবেগকে নানা ছবিতে তুলে ধরছেন রাইমা। কেন?
আরও পড়ুন- প্রধান চরিত্রে ঋত্বিক, বড় পর্দায় নতুন রূপে ‘রাজলক্ষ্ণী ও শ্রীকান্ত’
‘‘আসলে নিজেকে একটু বদলাতে চেয়েছি আমি। এই বদল চারপাশের বদলে যাওয়া জীবনের জন্য। সিনেমায় যে ধারার চরিত্র করে আসছি, মনে হচ্ছিল একটু টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছি। এরকম ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডের পর মুম্বই থেকে অনেক কাজ পাচ্ছি। আসলে একজন অভিনেত্রীর চেহারাকে বার বার ভাঙতে হয়।আমি এখন ভাঙতে ভাঙতে নিজের শরীরকে নতুন করে আবিষ্কার করছি। আমার শরীর নিয়ে অন্যরকম কথা শুনব কেন? যা করছি ঠিক করছি।’’তৃপ্তির স্বর রাইমার কণ্ঠে।
নায়িকার খোলামেলা পোশাক দেখলেই তার ছবিতে ইচ্ছেমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে কমেন্ট করতে থাকে সমাজের নানা মুখ। ক্যাচলাইন থাকে নানা রকম...
‘দেখুন, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের হট ছবি’বা ‘ক্যাটরিনা কাইফের গাউন সরে গেল...দেখুন।’
‘‘কী করে আজও কারও ক্লিভেজ, খোলা পিঠ, নগ্ন পা খবর হতে পারে?’’প্রশ্ন তুললেন ঋতাভরী চক্রবর্তী। এক সময় আনন্দবাজারের জন্য এক্সক্লুসিভ বিকিনি শুট পরে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি যদিও মনে করেন না, বিকিনি শুট বা খোলামেলা পোশাক কোনও অভিনেতার সাহসের পরিচয় তৈরি করে।
ঋতাভরী চক্রবর্তী
‘‘আমি মায়ামি যাই, স্পেনে বেড়াতে যাই। বিচে আর পাঁচটা মানুষ বিকিনি পরে। আমিও পরে ছবি পোস্ট করি। এটা খুব স্বাভাবিক। ওখানে তো শাড়ি পরব না। আর আমি শাড়ি পরেও তো ছবি দিই।আমি অভিনেত্রী, একজন মেয়ে আমি, শাড়ি থেকে বিকিনি, সব পরব। কে কী ভাবে নেবে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে আমি এখন প্রচুর সামাজিক কাজ করি। মজার বিষয় হচ্ছে, আমার কাজের চেয়ে ক্লিভেজ নিয়ে বেশি কথা হয়!’’সাফ মন্তব্য ঋতাভরীর।
এরকমটাই হয়ে আসছে। স্তন, ক্লিভেজ, নায়িকার পোশাকের চর্চা কাজের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে আজও। ‘বিয়েওয়ালা’আর ‘একা’নায়িকার মান নির্ণয় হচ্ছে আলাদা করে।আর এই বিষয় নিয়ে মিডিয়া স্টোরি করলে বলা হচ্ছে, ‘এদের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, নষ্ট মেয়েদের নিয়ে স্টোরি করছে!’
আরও পড়ুন- ‘ফোর্বস’ প্রকাশিত বিশ্বের ধনী অভিনেতার তালিকায় নেই শাহরুখ-সলমন, অক্ষয় কত নম্বরে জানেন?
কিন্তু দেখছে বা পড়ছে কারা? কোন দেশের মানুষ? সেই দেশ, যেখানে লেখা হয়েছে বাৎস্যায়নের ‘কামসূত্র’। অজন্তা-ইলোরার ছবি ও ভাস্কর্যও এদেশেরই। তবু শরীর নিয়ে এক আশ্চর্য ‘ট্যাবু’ রয়ে গিয়েছে আজও। বাড়ির বউ জিনস্ পরলে কটূক্তির বর্ষণে তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়। আর নায়িকার জিনস্ যত ছোট হয় ততই ভাল!
সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা
‘‘আমি নিজেকে দেখি। এই ধরনের শুট করতে ভালবাসি। যুগ বদলের সঙ্গে আর্টিস্টকেও বদলাতে হবে। এখন দর্শক তাদের অভিনেত্রীকে শুধু শাড়িতেই দেখবে, এটা ভাবা ভুল। সোশ্যাল মিডিয়া কনট্যাক্ট তৈরি করে। আমি এই মাসে কেমন দেখতে হলাম সেটা এই শুটের মধ্যে দিয়ে আমি জানাতে চাই। আমার শরীরকে আমার ভাললাগা অনুযায়ী তুলে ধরি।এতে ভাল-মন্দের কিছু থাকবে কেন? যাদের পছন্দ হবে না তারা দেখবে না,’’ বললেন সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা।ইনস্টাগ্রাম থেকে ফেসফুকে তাঁর অসংখ্য ফলোয়ার।
একে একটা পোশাকে এক একরকম দেখতে লাগার যে আনন্দ এটাই উপভোগ করছেন অভিনেত্রীরা। জিনাত আমন থেকে শর্মিলা ঠাকুর বা মধুবালা, নিজের সৌন্দর্য বা ক্লিভেজ প্রকাশের মাধুর্য তুলে ধরেছেন সকলেই। কিন্তু এই মুক্তির স্বাধীনতা পছন্দ নয় পিতৃতন্ত্রের!
দর্শনা বণিক
‘‘আমার কখনওমনে হয় না যে একটা সেক্সি ছবি তোলার জন্য শুট করছি।ছবিকে সেক্সি করে তোলা আমার কাজ নয়। আমার ফিটনেস, সব ধরনের পোশাক ক্যারি করতে পারি, এটাই আমি দেখাতে চাই। এখনও বিকিনি পরিনি। তবে সুইমিং পুলে তো শাড়ি পরব না। আমি সুইমিং কস্টিউম পরেই নামব। আমার আত্মবিশ্বাস আছে যে আমায় দেখতে ভাল লাগবে। তাহলে ছবিও পোস্ট করব।এটা স্বাভাবিক। এখানে এক্সপোজারের গল্প নেই! এ ভাবে আজও কেন ভাবা হবে?’’নিয়মিত রং আর ছবি নিয়ে খেলা মডেল অভিনেত্রী দর্শনা বণিক বুঝিয়ে দিলেন নিজের ভাবনা।
দেবলীনা কুমার
এই ধরনের ছবি তোলার মধ্যে ‘মোটিভেশন’-এর বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে চান ‘রঙ্গাবতী’র দেবলীনা কুমার। ‘‘আমরা সবাই শরীরকে ঠিক রাখতে ডায়েট থেকে শরীরচর্চা করি। প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। ফলে সেখান থেকে নিজের শরীরের অংশগুলো তুলে ধরার ইচ্ছে জন্মায়। আমার ফ্যানেরাও সেটা পছন্দ করে। এমন কোনও রিভিলিং পোশাক পরিনি আমি। আমি বাড়ি থেকে পোশাক পরে বেরোই। জানি, সেরকম খারাপ কিছু হলে আমার মা-বাবাই আমায় বলতো।’’মন্তব্য দেবলীনা কুমারের।
আমেরিকান অভিনেত্রী ক্রিস্টিনা হেনড্রিকস জানিয়েছিলেন, ক্লিভেজ দেখানো পোশাক পরলে নিজেকে শক্তিশালী মনে হয়। সবাই তাঁর দিকে দেখছে এই অনুভব তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। আমাদের আজকের অভিনেত্রীরাও সেই আত্মবিশ্বাসকে নিজের মধ্যে নানা ছবির অবয়বে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
অনেক তো হল। এ বার আমরা আমাদের চোখ আর মন বদলের কথা ভাবি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy