Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Abir Chatterjee

মধ্যবিত্ত স্বপ্নের গল্প

ওদের স্বপ্নের উড়ান কি শেষ পর্যন্ত টেক-অফ করবে? এই প্রেক্ষাপটেই ‘সুইৎজ়ারল্যান্ড’-এর গল্প।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৩৭
Share: Save:

সাধ আর সাধ্যের মধ্যে টানাপড়েনেই কেটে যায় এক-একটা গোটা জীবন। তার মধ্যেই মানুষ স্বপ্ন দেখে। এর মধ্যে সবচেয়ে দোলাচলে থাকে মধ্যবিত্তের স্বপ্ন। কারণ সেই স্বপ্ন বলে, একটু চেষ্টা করলেই সাধ আর সাধ্যের ফাঁকটুকু পূরণ হয়ে যেতে পারে। শিবু (আবীর চট্টোপাধ্যায়) আর রুমির (রুক্মিণী মৈত্র) গল্পটাও সে রকমই। ফুটফুটে দুই সন্তানের অভিভাবক তারা। মফস্‌সল থেকে শহরে এসে পায়ের তলার জমি শক্ত করছে, পরিশ্রম করে। বিয়েটাও হয়েছিল বাড়ির অমতে, তাই বিত্তশালী শ্বশুরবাড়ি বাঁকা কথা শোনাতে ছাড়ে না সাধারণ পরিবারের জামাইকে। বেলডাঙার মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শিবু এখন গাড়ির কোম্পানির সেলস ম্যানেজার, আর চন্দননগরের অভিজাত পরিবারের রুমি স্কুলে পড়ায়। পরিবর্ধিত পরিবার বলতে পাশের বাড়ির কাকু-কাকিমা, যাদের বিপদে-আপদে সর্বদাই হাজির শিবু-রুমি। ভাইফোঁটায় রুমি বাপের বাড়ি যায়, খাওয়ার টেবিলের আলোচনায় ‘ফরেন টুর’ প্রসঙ্গ উঠলে বাঁকা কথা ধেয়ে আসে শিবুর দিকে। সামাল দিতে গিয়ে সে বলে বসে, আসছে বছরই সুইৎজ়ারল্যান্ড যাওয়ার কথা ভাবছে তারা। স্বপ্নের মতো সে দেশে বেড়াতে যাওয়ার সাধ অনেক দিন আগে রুমি মুখ ফসকে বলেছিল তার স্বামীকে। স্ত্রীর চকচকে দুটো চোখ মনে থেকে গিয়েছিল শিবুর। ওদের স্বপ্নের উড়ান কি শেষ পর্যন্ত টেক-অফ করবে? এই প্রেক্ষাপটেই ‘সুইৎজ়ারল্যান্ড’-এর গল্প।

জিৎ ফিল্মওয়র্কস পুরোদস্তুর কমার্শিয়াল ছবির পাশাপাশি যে ধরনের পারিবারিক গল্প বলছে ইদানীং, তার মধ্যে অন্যতম সফল প্রয়াস এই ছবি। শৌভিক কুণ্ডু নির্দেশিত এ ছবিতে নিখাদ পারিবারিক একটা গল্প তুলে ধরা হয়েছে, অতিনাটকীয়তা বা অবাস্তবতার ধার না ঘেঁষে। রোজকার যাপনের ছোট ছোট টুকরো যত্নের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। দেখতে দেখতে হয়তো এক সময়ে বুঝে ফেলা যাবে কী হতে চলেছে, তবুও তৈরি হবে একাত্মবোধ। আর এখানেই ছবির সাফল্য।

আবীর-রুক্মিণীর জুটি ছবিতে টাটকা হাওয়ার মতো। আবীরের ‘উইট’ আর রুক্মিণীর সাবলীলতা ধরে রেখেছে পুরো গল্পকে। তবে আবেগের দৃশ্যে রুক্মিণীর অভিনয় আরও সহজ হতে পারত। আবার সেই আবেগের দৃশ্যেই আবীর মন ছুঁয়েছেন, পুরনো বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ফেরত নিতে যাওয়ার দৃশ্যে। শ্বশুরমশাইয়ের (অরিন্দম) সঙ্গে গঙ্গার ঘাটে বসে চায়ের ভাঁড় হাতে মন খোলার দৃশ্যটিও বেশ। আবীরের সহকর্মীরূপে অম্বরীশ ভট্টাচার্যের চরিত্রটি মাপসই। এখানেও তিনি পেটুক ও রসিক, কিন্তু তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়নি। প্রবাসী সন্তানের বৃদ্ধ বাবার যে অসহায়তা অরুণ মুখোপাধ্যায় ফুটিয়ে তুলেছেন, সে অভিব্যক্তি তাঁর মতো অভিনেতার চাহনিতেই সম্ভব। অন্যান্য চরিত্রে অলকানন্দা রায়, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু যথাযথ। ছবিতে রোম্যান্টিক ও পার্টি সং— দুইয়ের ব্যবহারই ভাল। বেশির ভাগ দৃশ্য ঘরের মধ্যে, যা থেকে খানিক মুক্তি দেয় চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর রোশনাই আর শিবু-রুমির ফ্ল্যাটের উল্টো দিকের ফুটপাতের ছোট্ট সংসারটি।

তবে বেলডাঙার শিবুর ‘হিরো’ হওয়ার দৃশ্যে বা বেশি রাতে খোলা থাকা কেক-পেস্ট্রির দোকান দেখিয়ে কোথাও কোথাও একটু বেসামাল হয়েছে গল্পের চলন। আসলে স্বপ্নপূরণের গল্পে একটুও রং চড়বে না, তা কি হয়? সেখানেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কখনও কলকাতা পুলিশ, তো কখনও ছবির শেষের অতিথি শিল্পী! এ টুকু পাইয়ে না দিলে যে হেরে যাওয়া মুখগুলো বড্ড কষ্ট পাবে। আর এ ছবি যে হেরোদের জিতে যাওয়ার গল্প।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE