Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টে ‘মুক্ত’ অনীকের ভূতেরা, জবাব তলব রাজ্যের

আজ এই কথা স্পষ্ট করে দিয়ে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ করার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের জবাবদিহি চাইল সুপ্রিম কোর্ট।

‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ করার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের জবাবদিহি চাইল সুপ্রিম কোর্ট।

‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ করার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের জবাবদিহি চাইল সুপ্রিম কোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০৪:২৯
Share: Save:

সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিয়ে দিলে রাজ্য সরকার বা অন্য কোনও সংস্থা ছবির প্রদর্শনে বাধা দিতে পারে না। রাজ্য সরকার কোনও ছবির প্রদর্শনে বাধা দিলে তা বাক্‌স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়।

আজ এই কথা স্পষ্ট করে দিয়ে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ করার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের জবাবদিহি চাইল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ২৫ মার্চের পরবর্তী শুনানির আগে হলফনামা দিয়ে তাঁদের জানাতে হবে, কেন ছবিটি দেখানো বন্ধ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে সর্বোচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, ছবির প্রদর্শনে কোনও রকম বাধা যাতে তৈরি না-হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনীক দত্ত পরিচালিত ‘ভবিষ্যতের ভূত’ মুক্তি পায় রাজ্যে। কিন্তু এক দিনের মাথাতেই অধিকাংশ সিনেমা হল ও মাল্টিপ্লেক্স থেকে ছবিটি সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছিল, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টাঙানো নিয়ে অনীকের মন্তব্যের জেরেই তাঁর ছবির প্রদর্শন বন্ধ করা হল কি না! এই অভিযোগ নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ছবিটির প্রযোজক সংস্থা।

আজ সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার প্রথম দিনের শুনানি ছিল। ফলে রাজ্যের কোনও আইনজীবী ছিলেন না। তবে স্বরাষ্ট্র দফতরের এক সূত্রের দাবি, ‘‘ছবিটি বন্ধ করার পিছনে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। সুপ্রিম কোর্টের রায় হাতে পাইনি। পেলে দেখব, কী রয়েছে রায়ে।’’ একই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের একটি মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের যুক্তি, ‘‘ওই ছবি বন্ধের বিষয়ে রাজ্য নির্দেশ জারি করেনি। হল মালিকেরা না-দেখালে রাজ্যের কী করার রয়েছে!’’

কোর্টে প্রযোজকেরা অভিযোগ তুলেছেন, এক জন প্রদর্শক বা এগজিবিটর গত ৪ মার্চ তাঁদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, প্রশাসনের তরফে তাঁদের ছবির প্রদর্শন বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৩ মার্চ সেই চিঠি তাঁরা পান। ৪৮টি হলে মুক্তি পাওয়া ছবি এক দিনের মধ্যে বেশির ভাগ হল থেকে তুলে নেওয়া হয়। এখন ছবিটি দু’টি হলে চলছে।

প্রযোজকের আইনজীবী সঞ্জয় পারেখ পুলিশের গত ১১ ফেব্রুয়ারির একটি বার্তা দেখিয়ে অভিযোগ তোলেন, সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র সত্ত্বেও ছবির মুক্তির চার দিন আগে পুলিশ ছবিটি দেখতে চায়। পুলিশ দাবি করে, ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার মধ্যেই পুলিশকর্তাদের জন্য ছবির প্রদর্শনের বন্দোবস্ত করতে হবে। পুলিশের যুক্তি ছিল, তাদের কাছে খবর রয়েছে যে, এই ছবি জনমানসে ধাক্কা দেবে। তার ফলে রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা তৈরি হবে। পরের দিনই, অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি প্রযোজক সংস্থার তরফে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ছবিটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে। তার পরে পুলিশ বা অন্য কোনও সংস্থা ছবির মুক্তিতে বাধা দিতে পারে না।

এই অভিযোগ শুনে বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তের বেঞ্চ কড়া ভাষায় নির্দেশ জারি করে। বিচারপতি চন্দ্রচূড় তাঁর রায়ে বলেন, ‘‘শীর্ষ আদালত বারবার তার রায়ে বলেছে, কোনও ছবি এক বার সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে গেলে রাজ্য সরকার বা তার কোনও সংস্থা লিখিত বা অলিখিত নির্দেশ জারি করে প্রযোজককে ছবির প্রদর্শনে বাধা দিতে পারে না। সরকারের সেই পদক্ষেপ সংবিধান-প্রদত্ত বাক্‌স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ।’’ শুধু তা-ই নয়। প্রযোজকদের পাঠানো পুলিশের চিঠির পুরো বয়ানই বিচারপতিরা তাঁদের নির্দেশে তুলে দিয়েছেন। মামলায় রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে যুক্ত করারও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

প্রযোজকের আইনজীবী রুকসানা চৌধুরী বলেন, মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ছবির প্রদর্শনে যাতে কোনও বাধা না-আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কেও সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, ছবির প্রদর্শনের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হবে। যাতে হলের সম্পত্তি বা দর্শকদের কোনও সমস্যা না-হয়।

এই নির্দেশের পরেও ‘ভূতেদের’ ভবিষ্যৎ নিয়ে ফিল্ম মহলে অনিশ্চয়তা রয়েছে। রাজ্যের এক নামী ফিল্ম পরিবেশক বলেন, ‘‘পরোক্ষ চাপ ছাড়াও ছবির শোয়ের চলতি নির্ঘণ্ট বাতিল করে জানি না কে দেখাবেন ছবিটি।’’ এর আগে ‘দাঙ্গা’ বলে একটি ছবি নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। তখনও কলকাতা হাইকোর্ট ছবিটি দেখাতে বলে। তবু হল মালিকেরা ঝুঁকি নেননি বলেই টালিগঞ্জ পাড়ার খবর। ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর অন্যতম প্রযোজক কল্যাণময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন ছবির প্রদর্শন বন্ধ হয়েছিল, তার কারণ স্পষ্ট।

রাজ্য প্রশাসন অসাংবিধানিক ভাবে প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ জারি করেছিল। এ বার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পাঠিয়ে দেব। এই নির্দেশ গণতন্ত্রের জয়।

এখন বল রাজ্য সরকারের কোর্টে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘ছবির মুক্তির পরে প্রথম দু’সপ্তাহেই যা আয় হয়। যা ক্ষতি হওয়ার, হয়েই গিয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bhobishyoter Bhut Anik Dutta Fascism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE