যিশু সেনগুপ্ত এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
মেয়ে আর বাবা গৃহবন্দি। দু'জনেই করোনা আক্রান্ত। সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর কন্যা আয়রা। কিন্তু সাক্ষাৎকার দিতে তাঁর বিন্দুমাত্র ক্লান্তি নেই।
প্রশ্ন: করোনায় গৃহবন্দি হওয়া মানে কি নতুন ছবির চিত্রনাট্য লেখা?
সৃজিত: অক্সিজেন মুখে থাকলে সত্যিই কিছু করতে পারতাম না। কিন্তু এই করোনা তেমন নয়। তাই নতুন চিত্রনাট্য লেখায় হাত দিয়েছি। সঙ্গে ‘দার্জিলিং জমজমাট’-এর কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেই চিত্রনাট্য নিয়েও কাজ চলছে।
প্রশ্ন: ‘সাবাশ মিঠু’ নাকি ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’— কোন ছবি নিয়ে আগে কথা বলতে চান?
সৃজিত: ‘সাবাশ মিঠু’ প্রথম ক্রিকেট নিয়ে প্রথম ছবি। আমি খুবই উত্তেজিত। সীমিত বাজেট, বৃষ্টি সব মিলিয়ে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটের অংশ শ্যুট করে খুব মজা পেয়েছি। আর ‘কাকাবাবু’ তো তিন বছরের পুরনো ছবি। করোনার জন্য পিছিয়েছে। দুটো ছবিই ৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়ার কথা। দেখি কী হয়! চিন্তায় আছি।
প্রশ্ন: ‘সাবাশ মিঠু’ কি পরে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল?
সৃজিত: না। সেরকম কিছু তো শুনিনি।
প্রশ্ন: একই পরিচালকের দুটো ছবি এক দিনে মুক্তি পাচ্ছে। স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
সৃজিত: দেখুন আমার ছবি বানানোর কথা। এক দিনে আমার দুটো ছবি মুক্তি পেলে কোনও অসুবিধে নেই। বাকিটা পুরোপুরি প্রযোজকের সিদ্ধান্ত। এটা কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, দেশের সর্বত্র যা অবস্থা, তাতে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কোমর ভেঙে গিয়েছে। তার পরেও যে প্রযোজকেরা ছবি বানাচ্ছেন, এটাই বড় ব্যাপার। তাঁরাই ঠিক করবেন কখন কী করবেন। পরিচালকদের কিছু না বলাই ভাল।
প্রশ্ন: নতুন বছরে মুম্বই আর বাংলায় আপনার আরও অনেক ছবি করার কথা। যিশু সেনগুপ্তকে কি ছবিতে আবার নেবেন?
সৃজিত: ওমা! কেন নয়? যার সঙ্গে সাতটা ছবি হয়ে গিয়েছে সে যে আমার প্রিয় অভিনেতা, সেটা কি কাউকে বলে দিতে হবে?
প্রশ্ন: কিন্তু আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ ‘অ-জানাকথা’য় যিশু সেনগুপ্ত বলেছেন, আপনার তাঁর উপর অভিমান হয়েছে...।
সৃজিত: ‘চৈতন্য’ নিয়ে আসলে ওর সঙ্গে অনেক মাত্রায় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমি লাইভটা দেখেছি। যিশু এ প্রসঙ্গে দৃঢ় ভাবে কথা বলেছে। আমার ভাল লেগেছে।
প্রশ্ন: আপনি কি যিশুকে ‘চৈতন্য’ চরিত্রের জন্য ভেবেছিলেন?
সৃজিত: না। আমি ‘চৈতন্য’ ছবিতেই অন্য এক চরিত্রের জন্য ওকে ভেবেছিলাম। কিন্তু সংবাদমাধ্যম ভেবে নিয়েছিল, আমি ‘চৈতন্য’ চরিত্রের জন্যই যিশুকে ভেবেছি। পরবর্তীকালে আমার ভাবা ওই চরিত্রের জন্য কাজ করতে বললেও যিশু সময় দিতে পারেনি।
প্রশ্ন: আপনার কোনও সাক্ষাৎকারে আপনি এমন কি কিছু বলেছিলেন, যাতে যিশুর খারাপ লাগে?
সৃজিত: আমি বলেছিলাম এক জন অভিনেতা কোনও এক দিন যদি শ্যুটে এসে মনোসংযোগ করতে না পারে, তা হলে আমি তাঁকে কতটা বকাঝকা করি। এটা যে যিশুকে নিয়ে, তা কিন্তু কখনও বলিনি। সেটা ঋতুপর্ণা হতে পারে, বুম্বাদা হতে পারে। যে কোনও অভিনেতা, যাদের নিয়ে আমি কাজ করেছি, তাদের সবার ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য ছিল। আসলে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই আছে, যারা এই বিষয়গুলো নিয়ে জলঘোলা করে আমার সঙ্গে যিশুর বিরূপ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করে। আর সাক্ষাৎকারও যেমন ভাবে লেখা হয়েছিল, তাতে যিশুর ভুল বোঝাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন: যিশু আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভে বলেছেন, আপনি এত বন্ধু! বিষয়টা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নিলেই হত!
সৃজিত: ভুল বোঝাবুঝি, ঝগড়া বন্ধুদের মধ্যেই হয়। সেটা যিশুও বুঝেছে। যিশু-নীলাঞ্জনা আমার কাছে পরিবারের মতো। এই তো আমার করোনা হওয়ার পরে রাত-দিন ওরা খোঁজ নিচ্ছে।
প্রশ্ন: মানে যিশুকে নিয়ে আপনি আবার ছবি করবেন?
সৃজিত: অবশ্যই! যিশু, বুম্বাদা,পরম,অনির্বাণ— এই প্রিয় মুখগুলো চিত্রনাট্য লেখার সময় ঘুরতেই থাকে আমার সামনে।
প্রশ্ন: কিন্তু যিশু তো আবার লাইভে বলেছিলেন, আদিত্য চোপড়ার ডাক এলে তিনি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ছেড়ে সেখানে যাবেন!
সৃজিত: একদম ঠিক বলেছে। ও না করলে আমিই ঠেলব করতে। আগে কিন্তু ঠেলেওছি। যিশুর ‘চতুষ্কোণে’-এ কাজ করার কথা ছিল। সেই সময় যিশু আদিত্য চোপড়ার ‘মর্দানি’-তে কাজ করার সুযোগ পায়। আমি বলেছিলাম, তোকে ‘চতুষ্কোণ’ করতে হবে না। তুই হিন্দি ছবি কর। কাজের স্বার্থে লোকে বৃহত্তর জায়গাতেই তো যাবে।
প্রশ্ন: ওটিটি-র জন্য নতুন বছরে কী পরিকল্পনা?
সৃজিত: এ বছর দুটো হিন্দি ছবির কথা হয়েছে। এ ছাড়াও ‘এক্স ইকোয়াল্স টু প্রেম’, ‘অতি উত্তম’ আছে। ‘যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে’ এ বার স্ট্রিমিং হওয়ার কথা। আর জুন-জুলাই নাগাদ ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ শুরু করব। এটা আমার স্বপ্নের কাজ। আসলে এখন অতিমারির জন্য ওটিটি আর বড় পর্দা খুব যে আলাদা করে বোঝা যায়, তা নয়। ‘মন্দার’-এর মতো মাইলফলক ছবির কাজ হল ওটিটি-তে। ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ নিয়েও আমি খুব উত্তেজিত।
প্রশ্ন: মনে হয় বাংলা ছবি দেখার জন্য এখন আর ‘স্পাইডারম্যান’-এর মতো লাইন হয় না।
সৃজিত: বাংলা ছবি যদি পরিবারভিত্তিক হয়, যে ছবি বাচ্চাদের নিয়ে দেখা যায়, সেখানে দর্শকের আগ্রহ বাড়ে।
প্রশ্ন: মানে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ঘরানার ছবি?
সৃজিত: নন্দিতা-শিবপ্রসাদ এমন একটা ছবির ঘরানা তৈরি করেছেন, যাতে বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। ‘টনিক’ শুনলাম সেই ঘরানার ছবি। এটা দারুণ খবর যে ‘৮৩’, ‘স্পাইডারম্যান’, ‘পুষ্পা’'র বাজারে ‘টনিক’-এর মতো বাংলা ছবি লড়ে নিজের জায়গা তৈরি করল।
প্রশ্ন: আপনি পরিবারভিত্তিক ছবি করেন না কেন?
সৃজিত: আমি নিজের কাজের পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। বরং চেষ্টা করি কাজে বৈপরীত্য আনার। সেই কারণে ‘ফেলুদা ফেরত’ বইয়ের পাতা থেকে হুবহু উঠে আসা গল্প। আবার ‘রে’ সম্পূর্ণ ভেঙে বেরিয়ে আসা।
প্রশ্ন: সৃজিত কি এ বার মুম্বইতেই বেশি থাকবেন?
সৃজিত: তা কেন? বাংলায় তো প্রচুর কাজ! তবে আমি এখন ভাবি না যে, মুম্বই ইন্ডাস্ট্রি মানেই আলাদা একটা জায়গা। আর বাকি ভারত আলাদা ইন্ডাস্ট্রি। বিষয়টা তেমন আর নেই। সবই ভারতের ভাষা। সবটাই ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। আগে বাংলায় কাজ করতাম। এখন হিন্দিতে করছি। এখন তো মালয়ালমে সবচেয়ে ভাল ছবি হচ্ছে। সুযোগ এলে সেখানেও কাজ করব। ইংরিজিতে ছবি তৈরির ইচ্ছে আছে। অডিয়ো ভিস্যুয়াল মিডিয়ামকে ভাষা দিয়ে আর আটকানো যায় না।
প্রশ্ন: মিথিলাকে কবে পরিচালনা করবেন?
সৃজিত: সে রকম চরিত্র পেলেই করব। ও তো কাজ করছেই। মিথিলার উপযুক্ত চরিত্র থাকলে নিশ্চয়ই নেব। শ্যুটিং ফ্লোরে মিথিলার সঙ্গে দেখাও হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy