শ্রীজাত।
আনন্দবাজার অনলাইনে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত। ফেসবুকে পোস্ট করতেই এক ঝাঁক মৃত্যুকামনা! ৫ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফেসবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্মৃতি রোমন্থন। সঙ্গে সঙ্গে বিতর্ক শুরু। করোনা-কালে এগুলোই কি কবি শ্রীজাতর মৃতসঞ্জীবনী? খোঁজে আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
শ্রীজাত: (ফ্যাঁসফেঁসে, আধবোজা গলা ঝেড়ে)গলা ভালই ধরে আছে। শরীর জুড়ে অস্বস্তি। মনটাও খারাপ। একে এ ভাবে ঘরবন্দি হয়ে থাকা। তার উপরে অনেকগুলো কাজ ছিল। অতিমারি আবহে সে সব আপাতত বন্ধ। সারাক্ষণ একটি ঘরে থাকতেও ভাল লাগে না। কিছু করার নেই।
প্রশ্ন: চিকিৎসক কী বলছেন?
শ্রীজাত: নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সাত দিন বন্দি দশা কাটাতে হবে। পরীক্ষার ফলাফল বেরোনোর পর থেকে। আমি চার দিন কাটিয়ে ফেলেছি। আর তিন দিন বাকি। রোজই কর গুনছি!
প্রশ্ন: স্ত্রী দূর্বা ভাল আছেন তো?
শ্রীজাত: এখনও পর্যন্ত। দু’জনে দুই ঘরে। ওর একটু হাঁচি-কাশি শুনলেই কেঁপে উঠছি। মনে হচ্ছে, এই রে! দূর্বাও কি তা হলে....? এক্ষুণি এক বার পরীক্ষা করানো উচিত? বলতে পারেন, ভয়-আতঙ্ক-অসুস্থতা মিলেমিশে গিয়েছে।
প্রশ্ন: কবির সময় কাটছে কী করে?
শ্রীজাত: (হেসে ফেলে) লেখার চেষ্টা করছি। এর আগেও করোনা হয়েছিল আমার। তখন একটি উপন্যাস লিখেছিলাম। এ বারেও একটি লেখার ইচ্ছে আছে। তার নোট নিচ্ছি। আর আমার বহু পুরনো অভ্যেস নানা ধরনের গান শোনা। সেটাও বজায় রেখেছি। এ ভাবেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: দু’বার করোনা, দুটো উপন্যাস! লেখকদের কাছে অতিমারি তা হলে পৌষ মাস?
শ্রীজাত: না না! তা কেন? আসলে লেখার বাইরে আর তো কিছুই পারি না। জানেনই তো, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। জেলে বন্দিদশা কাটাতে হলেও আমার সঙ্গী হত কাগজ-কলম। বাড়ির বন্দিদশাতেও তা-ই। কবিতার জন্য অপেক্ষা করছি। উপন্যাসের উপকরণ জোগাড় করে রাখছি। বই পড়ছি সেই সঙ্গে। যত ক্ষণ শরীর দিচ্ছে।
প্রশ্ন: ফেসবুকে ঝগড়াও হচ্ছে...
শ্রীজাত: (আবার হাসি) আমি যা লিখি, তাতেই দেখি কিছু জনের চোখে বিঁধছে! কী মুশকিল। মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিনে ওঁকে শুভেচ্ছা জানাতে স্মৃতি ভাগ করে নিলাম। তাই নিয়ে বিস্তর কূট-কচালি। আমাকে নানা বিশেষণে বিশেষিত করা! এখন খারাপ সময়েও কেউ কাউকে ছাড়েন না। আমার ভাল সময়েই এত নিন্দে। খারাপ সময়ে তার থেকে রেহাই পাব! ভাবিই না।
প্রশ্ন: কেন এ রকম হচ্ছে? হিংসা, না পাওয়ার জ্বালা নাকি মানুষের হাতে অঢেল সময়?
শ্রীজাত: কী জানি! ফেসবুক যে শুধু আমাদের দেশেই চালু তেমনও নয়। সমস্ত সভ্য দেশে এর ব্যবহার। সেখানে কিন্তু এত দৈন্য চোখে পড়ে না। হ্যাঁ, আমি ‘দৈন্য’ শব্দটাই ব্যবহার করলাম। আমি মাঝেমধ্যেই নানা ধরনের পোস্ট লিখি। শিক্ষা বা সংস্কৃতিমূলক পোস্টে প্রায় সবাই চুপচাপ। তার অন্যথা হলেই ঝাঁক ঝাঁক মানুষের দৈন্য চোখে পড়ে। এ সব দেখে মনে হয়, বিশ্বকবি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়ের যুগ আর বদলাল না! পাঠকেরা ভুল বুঝবেন না। আমি তাঁদের সঙ্গে নিজেকে ভুলেও এক পংক্তিতে বসাব না। আমার বক্তব্য, ওঁরাই যদি বিরূপ মন্তব্য, অকারণ সমালোচনা থেকে ছাড় না পান, তা হলে আমি তো তুচ্ছ! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৮০ বছর বয়সেও চিঠিতে লিখেছেন, তাঁকে কট্টর সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। বাঙালির অবস্থাটা ভাবুন এক বার। তখনও কাউকে ছাড়ত না। এখনও ছাড়ে না। তবে হ্যাঁ, চেনা-জানারা বিরূপ কথা লিখলে খারাপ লাগে। অচেনাদের কথা আর গায়ে মাখি না।
প্রশ্ন: আপনি শিক্ষার কথা বলছিলেন, এক জন মহিলা সাহিত্যিক নাম না করে আপনাকে এবং দূর্বাকে বিঁধেছেন! তাঁর দাবি, বুদ্ধিমান, বিখ্যাত স্বামীরা নিজে এগোবেন বলে আগে স্ত্রীকেই এগিয়ে দেন...
শ্রীজাত: আমি তাঁর পোস্টটি পড়িনি। এক সাহিত্যিক যদি এই ধরনের কিছু লিখে থাকেন তা হলে সেটা তাঁর শিক্ষার দৈন্য। আমি দ্রুত তাঁর আরোগ্য কামনা করছি। আর শিক্ষার কথা যা বলেছি বা বলতে চেয়েছি, সেটা মনুষ্যত্বের শিক্ষা। পুঁথিগত শিক্ষা নয়। দেখুন, অবশ্যই ডিগ্রির প্রয়োজন। কিন্তু ডিগ্রিটাই সব নয়। তা হলে কবিগুরু আর ‘বিশ্বকবি’ উপাধি পেতেন না। শ্রীরামকৃষ্ণ দেব বা কবীরও প্রাতঃস্মরণীয় হতেন না। কেবল পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই বোধ হয় শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না সবার! আনন্দবাজার অনলাইনে আমার অসুস্থতার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে তার নীচে এক মুঠো মৃত্যুকামনা! লোকে নাকি অতি বড় শত্রুরও মৃত্যুকামনা করে না! অতিমারি সেরে যাবে। এই অসুস্থতা সারানো খুবই কঠিন।
প্রশ্ন: কিছু জন আপনার শিরদাঁড়ার ঋজুতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন...
শ্রীজাত: আমি কিন্তু কোনও অসুবিধে টের পাচ্ছি না। করোনায় আমার গা-হাত-পায় ব্যথা। শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। অল্প জ্বর, গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি এই পর্যন্তই। কোভিড শিরদাঁড়া ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে তো শুনিনি! আসলে, আমি যেটা ঠিক মনে করি, সেটাই করি। তাতে যে ভুল হয় না, তা নয়। সেটা উপলব্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমাও চেয়ে নিই। কিন্তু নিজের মতো করে বাঁচায় বিশ্বাসী। এটাই আমার চোখে টানটান মেরুদণ্ডের নিদর্শন। অন্যের চোখে সেটাই হয়তো সমস্যার কারণ।
প্রশ্ন: কবি মানেই পেলব, মাটির তাল, তাঁর রাজনৈতিক রং বা ‘তারকা’ তকমায় বোধহয় আপত্তি, নাকি?
শ্রীজাত: রাজনীতি সবার মধ্যেই থাকে। আমারও আছে। শিল্পী বা শিল্পের সঙ্গে রাজনৈতিক চেতনা বরাবরই ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল। আজও আছে। সেই অনুযায়ী আমিও হয়তো আমার রাজনৈতিক চেতনা বা মত প্রকাশ করেছি। সেটা কি অন্যায়? আমার রাজনৈতিক মঞ্চেও যাতায়াত আছে। সেটাও বোধহয় অপরাধ নয়। তবে তারকা শব্দে আমার ঘোর আপত্তি। আমার চোখে তারকা কারা? ভিভ রিচার্ডস, চার্লস চ্যাপলিন, উস্তাদ জাকির হোসেন মতো ব্যক্তিত্বরা। আমি কি তাঁদের সমকক্ষ? একেবারেই না। সুতরাং, আমি কোনও মতেই তারকা নই।
প্রশ্ন: এগুলোও এক ধরনের নেতিবাচক প্রচার, উপভোগ করেন নাকি ক্লান্ত লাগে?
শ্রীজাত: খুব কষ্ট হত একটা সময়ে। লেখা বন্ধ হয়ে যেত। ছাপ পড়ত লেখায়। এখন আর হয় না। প্রতিবাদ জানিয়ে উত্তর লিখে দেখেছি, কেউ পড়েই না! উল্টে নিজেদের মতো করে ঝগড়া চালিয়ে যায়। এমনও হয়েছে, আমি পরের লেখা শেষ করে ফেলেছি। ওঁরা তখনও ঝগড়া চালিয়ে যাচ্ছেন! এ সব দেখে ওঁদের জন্য খুব কষ্ট হয়। ভাবি, ইসস! এতটা সময় ওঁরা যদি একটি ভাল কাজের পিছনে খরচ করতেন। কিন্তু তা তো করবেন না। বরং ওঁত পেতে থাকবেন কখন পরের পোস্টটি দেব। আর ওঁরাও রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। আমায় কটাক্ষ করে যদি উপার্জন করতে পারতেন, তা হলেও মেনে নিতাম। সেই সুযোগও ওঁদের নেই!
প্রশ্ন: আপনার প্রথম ছবি ‘মানবজমিন’-এর কাজ এগোচ্ছে?
শ্রীজাত: (গলায় একটু হতাশা) কই আর এগোচ্ছে? করোনার দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ের তালে তালে দুলছে। ২৪ ডিসেম্বর থেকে শ্যুট শুরুর কথা ছিল। তার তিন দিন আগে প্রিয়াঙ্কা সরকারের পায়ের হাড় তিন টুকরো। তার পরে আবারও অতিমারি। সব ঠিক থাকলে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আর প্রিয়াঙ্কাকে পাব মার্চের শেষে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তত দিনে হয়তো অতিমারির ঢেউও থামবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy