বিশ্ব জুড়ে চলছে ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ। ৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি— নানা দিবসে উদ্যাপনে মাতেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। ভালবাসার আদুরে ছোঁয়ায় টেডির বেয়ার বা অন্য নরম পুতুলের জুরি মেলা ভার। তাই ১০ ফেব্রুয়ারি এই দিনটা বেছে নেওয়া হয়েছে ‘টেডি ডে’ হিসেবে। নব্বইয়ের দশকে বিশ্বয়ানের ছোঁয়া লাগল ভারতে। সেই সময় হিন্দি ছবিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে প্রেম দিবস। বিংশ শতাব্দীতে স্বরস্বতী পুজো ছাড়াও বাঙালিদের প্রেম করার দিনে ভ্যালেন্টাইনের হল নয়া সংযোজন। বলিউডি ফর্মুলা মেনে মূলত প্রেমিকার মন জয় করতে খানিক আগ বাড়িয়ে টেডি দিয়ে থাকেন প্রেমিকেরা। অন্তত শাহরুখ খানের ছবিতে তেমন ধারার প্রেম করতেই একটা প্রজন্মকে শিখিয়েছিলেন নায়ক। তবে সময় পাল্টেছে ‘টেডি দিবসে’ নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন টলিপাড়ার নায়িকারা?
আরও পড়ুন:
টেডি বেয়ারের জন্মের একটা ইতিহাস রয়েছে। ১৯০২ সালের নভেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট বেরিয়েছিলেন ভালুক শিকারের জন্য মিসিসিপি-র জঙ্গলে। সারা দিন পরও যখন তিনি একটিও শিকার পেলেন না, তখন তার শিকারসঙ্গীরা তাঁকে খুশি করতে একটি ছোট্ট ভালুক ছানা ধরে আনেন, এর পর সেই ভালুক ছানাটিকে গাছে বেঁধে প্রেসিডেন্টকে বলা হয় গুলি করতে। কিন্তু মানবিকতার খাতিরে প্রেসিডেন্ট প্রাণীটিকে হত্যা করতে অস্বীকার করেন। তাঁর এই মানবিক আচরণ গোটা সমাজকে নাড়া দেয়। এরপর ওয়াশিংটনের বিখ্যাত কার্টুনিস্ট বেরিম্যান ‘ড্রইং দ্য লাইন ইন মিসিসিপি’ নামের কার্টুনে এই গল্পটি বলেন। আমেরিকার খেলনা কোম্পানি ‘আইডিয়াল নভেলটি অ্যান্ড টয় কোম্পানি’-র মালিক মরিস মিকটম এবং তার স্ত্রী প্রথম টেডি বেয়ার বা খেলনা ভালুক তৈরি করেন। বাজারে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যায় এই খেলনা। প্রেমের পরশের প্রতীক হয়ে ওঠে এই টেডি।
অভিনেত্রী অরিজিতা মুখোপাধ্যায় টিভির পর্দায় জনপ্রিয় মুখ। যদিও জাঁদরেল শাশুড়ি বলে পরিচিতি তাঁর, অনেকে ‘বাবুর মা’ নামেই চেনেন তাঁকে। টিভির পর্দায় যেমন রূপ তাঁর বাস্তবেও নাকি তাঁকে দেখেই কোনও প্রেমিক কখনও টেডি উপহার দেওয়ার সাহস করে উঠতে পারেননি। জীবনে প্রেম এসেছে একাধিক বার। সে সব প্রস্তাব অবশ্য কোনও দিনকে কেন্দ্র করে আসেনি। অরিজিতার কথায়, ‘‘শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় বর্ষামঙ্গল দিনটার বিশেষ গুরুত্ব ছিল। ওটাই ছিল পছন্দের মানুষকে ভালবাসা প্রকাশের দিন। কিন্তু কোনও প্রেমিক কখনই আমাকে টেডি দেওয়ার সাহস পাননি। আমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেব, সেই ভয়েই হয়তো। কারণ তেমন কোনও উপহার দিলে বাঁকাচোখেই দেখতাম বিষয়টা। বরং আমাদের সময় ক্যাসেট উপহার দেওয়ার চল ছিল। টেডি উপহার দেওয়া খানিকটা আদিখ্যেতা মনে হয়। যদিও সেটা একান্তই আমার মত। তবে যাঁরা উদ্যাপন করেন দিনগুলি, সেটা দেখতে বেশ ভালই লাগে।’’
অভিনেত্রী শ্বেতা ভট্টাচার্য সদ্য বিয়ে করেছেন। অভিনেতা রুবেল দাসের সঙ্গে বিয়ের আগের বছরের প্রেম দিবসে টেডি নিয়ে ছবি দিয়েছিলেন শ্বেতা। যদিও বিয়ের বছরে এখনও তেমন কোনও পরিকল্পনা করে উঠতে পারেননি প্রেম দিবস উদ্যাপনের। নায়িকা হওয়ার পর থেকে অনেক টেডি উপহার পেয়েছেন শ্বেতা। তবে টেডি খুব যে শ্বেতার মনপসন্দ উপহার, তেমন নয়। শ্বেতার কথায়, আমার বাড়িতে প্রচুর টেডি। রুবেল তিন-চারটে দিয়েছে। ভালবাসার উপহার পেলে মন্দ লাগে না। কিন্তু আমার যে খুব পছন্দ, সেটা নয়।”
অভিনেত্রী সঙ্ঘশ্রী সিংহ মিত্র অবশ্য বরাবরই স্পষ্টবাদী। তাঁর সোজা কথা, জীবনে বহু প্রেম করেছেন কিন্তু কোনও প্রেমিকই তাঁকে টেডি উপহার দেননি। সঙ্ঘশ্রীর কথায়, ‘‘আশির দশকে জন্ম, নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা। আমাদের সময় এসব প্রেম দিবস বলে কিছু ছিল না। আমাদের কাছে একটাই দিন ছিল, সেটা স্বাধীনতা দিবস। জীবনে প্রেম অনেক করেছি। প্রেমিকরা বরাবর কবিতার বই, কিংবা গানের ক্যাসেট উপহার দিয়েছে। লোকে বলে আমাকেই টেডির মতো দেখতে। তবে বিয়ের পর স্বামীর কাছে আমিই টেডি। তাই সাজগোজ করলে আমার স্বামী বলে মিষ্টি লাগছে।’’
টেলিভিশনের অন্যতম চর্চিত মুখ সৌমিতৃষা কুন্ডু। পা রেখেছেন সিনেমার দুনিয়াতেও। তবে ছোটবেলা থেকে কখনও প্রেম করার নাকি সুযোগই পাননি। তাই এ সব উপহার পাওয়া হয়নি। তা নিয়ে যথেষ্ট আক্ষেপ সৌমিতৃষার। তবে প্রেমের প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনও একটি দিনের উদ্যাপনে বিশ্বাসী নন অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রেমে পড়লে আমি টেডি, গোলাপ উপহার পাওয়ার থেকে আইফেলের নীচে প্রেমিকের সঙ্গে হট চকোলেট খেতে বেশি পছন্দ করব। তবে মিঠাই করার সময় অনুরাগীদের কাছ থেকে অনেক টেডি উপহার পেয়েছি। সেই ভালবাসা অমূল্য।’’
এই মুহূর্তে ‘কথা’ ধারাবাহিকে নায়িকার চরিত্রে দেখা যাচ্ছে সুস্মিতাকে। পর্দার নায়ক সাহেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে পর্দা-প্রেমের আঁচ এসেছে বাস্তব জীবনে। তেমনটাই গুঞ্জন। টেডি বেয়ার পছন্দ সুস্মিতার। কিন্তু পর্দার নায়কের থেকে এই প্রেম সপ্তাহে কোনও উপহারই নাকি পাননি তিনি। সুস্মিতার কথায়, “সারা জীবন নানা প্রশংসা পেয়েছি, দিন দুয়েক আগে একটি অনুষ্ঠান করতে গিয়ে টেডি উপহার পেলাম। কিন্তু সাহব আমাকে উপহার দেবেই বা কেন? অতীতে প্রেমিকের তরফে উপহার পেয়েছি।’’