‘বেলাশেষে’ ছবির জন্য ওর থেকে ১৬ দিন আমি চেয়েছিলাম। ছোট পর্দায় অপার প্রতি দিনের উপার্জন প্রায় ১ লক্ষ টাকা! সব জেনেও আমি শুরুতেই আত্মসমর্পণ করেছিলাম। বলেছিলাম, ‘‘অপা, আমার বাজেট খুবই অল্প। ১৬ দিনের জন্য আমি ১ লক্ষ টাকা দিতে পারব।অপরাজিতা রাজি হয়েছিল।“
অপরাজিতার জন্মদিনে কলম ধরলেন শিবপ্রসাদ।
অপরাজিতা আঢ্য আর আমি ইন্ডাস্ট্রিতে সমসাময়িক। অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম সারিতে নিজেকে ধরে রাখা বা আপোস না করে একের পর এক কাজ করে চলা— এটাই অপরাজিতা। কাজটা কিন্তু খুব সহজ নয়। শুধুমাত্র অভিনয় দিয়ে নিজের জায়গা ধরে রাখা বা প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে অভিনেত্রী পরিচয়ে বাঁচাটাও সহজ নয়। হাতেগোনা যে ক’জন এটা পেরেছেন বা এখনও পারেন, অপরাজিতা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তথাকথিত প্রথম সারির অভিনেত্রীরা যে ধরনের চরিত্র পান, অপা সেটা পায়নি। সেই ক্ষোভ ওর ভিতরে ছিল। কারণ আমি জানি, একজন অভিনেত্রী যখন অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন তখন কতটা প্রত্যাশা তাঁর ভিতরে থাকে।
না পেতে পেতে কী হয়? ক্ষোভের পাশাপাশি আর কোন অনুভূতি মনকে আচ্ছন্ন করে? সেটা হতাশা। এই দুইয়ে মিলে এক জন অভিনেত্রীকে অবসন্ন করে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। ফলাফল? কেউ নিজেকে গুটিয়ে নেন। কেউ বা আপোস করেন পরিস্থিতির সঙ্গে। কেউ আবার নিজেকে একেবারে ছেড়ে দেন। অভিনয় দুনিয়া থেকে সরে যান। অপরাজিতা এর কোনওটাই করেনি। আমি বলব, ওর নামের মান রেখেছে!
আমার চোখে অপরাজিতা আঢ্য ছোট পর্দার অমিতাভ বচ্চন। যতগুলো ধারাবাহিক করেছে প্রত্যেকটাই টিআরপি-তে নম্বর ১। এমনও দিন গিয়েছে, শুধু ওকে দেখবেন বলে দর্শকেরা প্রতিদিন টিভি খুলে বসেছেন। এটা ওর অভিনয়ের মাপকাঠি। আশ্চর্যজনক ভাবে যখন সঞ্চালিকা হয়ে ছোট পর্দায় এসেছে তখনও সফল! বাকি বড় পর্দা। সেখানেও কিন্তু অপরাজিতা-ম্যাজিক কাজ করেছে। ‘বেলাশেষে’ ছবির জন্য ওর থেকে ১৬ দিন আমি চেয়েছিলাম। ছোট পর্দায় অপা তখন দাপিয়ে অভিনয় করছে। প্রতি দিন ওর উপার্জন প্রায় ১ লক্ষ টাকা! অপরাজিতার অনুপস্থিতি মানে ধারাবাহিকের গল্পের মোড় ঘুরে যাবে! সব জেনেও আমি শুরুতেই আত্মসমর্পণ করেছিলাম। বলেছিলাম, ‘‘অপা, আমার বাজেট খুবই অল্প। ১৬ দিনের জন্য আমি ১ লক্ষ টাকা দিতে পারব। ছবিতে ১৬ জন তারকা। সবাইকে তাঁর পারিশ্রমিক দিতে হবে। তাই এর বেশি আমার ক্ষমতা নেই।’’ শুনে ওর মাথায় হাত। হাঁ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপরেই বলে উঠল, ‘‘তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস শিব!’’ আমি তখন ওর হাতদুটো জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, ‘‘তুই রাজি না হলে এই ছবিটাই আর হবে না। তোকে ভেবেই লিখেছি।’’ পরে ছবির পাশাপাশি অপা-খরাজ মুখোপাধ্যায় জুটিও জনপ্রিয়।
অপরাজিতা রাজি হয়েছিল। কেন রাজি হয়েছিল? আমি নিজেই জানি না। বন্ধুত্বের কোন জায়গা থেকে অপা আমার কথার সম্মান রেখেছিল? অনুভব করতে পারি কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এর পর ‘প্রাক্তন’। এই ছবিতে অপরাজিতা প্রথম কাস্টিংয়ে ছিল না। চিত্রনাট্য লেখার পরে দেখলাম, অপরাজিতা ছাড়া প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী তো আর কেউ হতে পারবে না! ফের অভিনেতা বদলের চিন্তা-ভাবনা শুরু। মনে আছে, আমার বাড়িতে বু্ম্বাদা-ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে চিত্রনাট্য পড়ে শুনিয়েছিলাম। ছবিটি ওঁদের জুটি হিসেবে প্রত্যাবর্তনের ছবি। কিন্তু পুরোটা শুনে বুম্বাদা বলেছিলেন, ‘‘অপা আবার আলাদা করে দর্শকদের ভালবাসা কুড়োবে।’’
ছবিটি ব্লকবাস্টার। একই ভাবে সুপারহিট অপরাজিতা আঢ্য। অথচ ও কিন্তু পোস্টারেও ছিল না! অপরাজিতা যেন চরিত্র হিসেবেই ছবির মধ্যে থেকে দর্শকদের সামনে উঠে এসে দাঁড়াল। তার আগে পর্যন্ত কেউ জানে না, ও ‘প্রাক্তন’ ছবির ঠিক কোন জায়গায়। এভাবেই অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য বারেবারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রমাণ করে দিয়েছে, ছোট পর্দায় কাজ করলে অভিনয় জীবনের দফারফা হয় না। ইন্ডাস্ট্রির অলিখিত নিয়ম, জনপ্রিয় অভিনেত্রী হতে গেলে জিমে যেতে হবে। ওজন কমাতে হবে। পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হবে। রিল ভিডিয়ো বানাতে হবে। সারা ক্ষণ ইনস্টাগ্রামে মুখ দেখাতে হবে। অপা এর কোনওটাই করে না। তারপরেও নিজের উদাহরণ একমাত্র অপরাজিতা নিজে। শুধু অভিনয় দিয়ে সবার মন জিতে নিয়েছে। মানুষ হিসেবেও অতুলনীয়। খুব ভাল বন্ধুও।
তোর জন্মদিনে তাই আজ তোর কাছে একটা ফেরত উপহার চাইব। দিবি? তোকে পরিচালনা করেছি। তোর সঙ্গে আজও আমার জুটি বাঁধা হয়নি। এটা যেমন আফশোস তেমনি ইচ্ছে। কোনও পরিচালক যদি তোর বিপরীতে আমায় নেন, তুই অভিনয় করবি? আমিও তোকে উপহার দেব। যত রকমের ভিন্ন স্বাদের চরিত্র থাকবে আমার আগামী ছবিগুলোতে, সব তোর জন্য তোলা রইল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy