Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Shiboprosad Mukhopadhyay

Belashuru: ‘মধুপূর্ণিমা’ বলে সৌমিত্রর চোখে চোখ রাখলেন স্বাতীলেখা, শেষ শ্যুটিংয়ের ডায়েরি

সৌমিত্রদা অর্থাৎ বিশ্বনাথ বলছেন, ‘‘চৈত্র মাসের পূর্ণিমা, পাঁচ অক্ষরের।’’ একটু থেমে বিশ্বনাথ আবারও বলে ওঠেন একই কথা। আরতি তথা স্বাতীদি তাকিয়ে। সৌমিত্রদাও তাকিয়ে। আরতি বললেন, ‘‘মধুপূর্ণিমা’’।

নিয়তির সঙ্গে শব্দছক খেলা

নিয়তির সঙ্গে শব্দছক খেলা

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ১৭:১৭
Share: Save:

কোনওদিন ভাবিনি শ্যুটিংয়ের ডায়েরি লিখতে হবে। এ জীবনে যত শ্যুটিং করেছি তার সবটাই শীতকালে। ‘বেলাশুরু’র শ্যুটিংও শীতেই ছিল। সৌমিত্রদা, স্বাতীদির ডেট অনেক দিন আগেই নিয়ে রেখেছিলাম। দুজনেই নাটকের, দুজনেরই প্রচুর শো থাকে। আগেই বলে রেখেছিলাম, এ বার কিন্তু পারব না শ্যুটের মাঝে ছাড়তে। শ্যুটিং হবে ঘুরে ঘুরে। বোলপুর, কলকাতা, ক্যানিং, বাংলাদেশ, ওড়িশা ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

প্রথমে এত জায়গায় যেতে হবে শুনে আঁতকে উঠেছিলেন সবাই। তার পর রওনা হলাম বোলপুর। লোকে বলে আমি নাকি পশ্চিমবঙ্গে একটাই জায়গা চিনি, বোলপুর। শান্তিনিকেতন। নন্দিতাদি আর আমার ছবিতে বারবার ফিরে এসেছে সেই একই লোকেশন।

শীতের শান্তিনিকেতন, কী মিষ্টি রোদ্দুর। সোনাঝুরির পাতা ঝরার আওয়াজ। প্রথম দিনের কলটাইম একটু দেরিতেই ছিল। আগে ঠিক করেছিলাম শঙ্করদা (চক্রবর্তী) আর ইন্দ্রাণীদির (দত্ত) শট দিয়ে শুরু করব। অদ্ভুত মজার ব্যাপার, ‘বেলাশেষে’র শুরুও হয়েছিল ইন্দ্রাণীদির শট দিয়ে। ওই যে... এস্রাজ বাজছে আর ইন্দ্রাণীদির এক্সপ্রেশন!

আর এখানে শঙ্করদার সঙ্গে ইন্দ্রাণীদির কথোপকথনের দৃশ্য। সেই ধারা বজায় রইল। স্যার আর ম্যাডাম, অর্থাৎ সৌমিত্রদা আর স্বাতীদির কলটাইম একটু দেরিতে ছিল। প্রথম শট শেষ হওয়ার পর অরিত্র বলল, স্যার ঢুকছেন। কল টাইম ছিল সকাল দশটায়, উনি দশটা বাজতে দশে ঢুকলেন। নিয়মানুবর্তিতার শেষ কথা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যখন ঢুকলেন মনে হল, উনি রেডি।

ফুরফুরে মেজাজ। এসেই যেটা করলেন অরিত্রকে ডেকে পাঠালেন। অরিত্র মানে পরিচালক অরিত্র মুখোপাধ্যায়। আমাদের শ্যুটিংয়ে অরিত্রকেই তিনি সব কিছু জানাতেন। ওকে ডেকে নিলেন নিজের ঘরে।

পাঁচটি ছবিতে যা দেখেছি সৌমিত্রদা সবটা নিজে করেন। নিজে শট বুঝবেন, নিজে স্ক্রিপ্টটা স্ক্যান করবেন। প্রপসও নিজে বুঝে নেবেন।

অন্যদিকে আর এক জন স্বাতীদি। পুরোটাই মেথড অ্যাক্টিং। এই ছবির শ্যুটিংয়ের সময় স্বাতীদি কারও সঙ্গেই বেশি কথা বলেননি। নিজের মধ্যে ছিলেন। শ্যুটিং ফ্লোরে কিংবা মেক আপ রুমে এক মনে বসে থাকতে দেখেছি ওঁকে।

ছবির খুব গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য, সৌমিত্রদা আর স্বাতীদি। বসে শব্দছক করছেন। অন্য কোনও অভিনেতা হলে শব্দছকের অক্ষরগুলো হয়তো সহকারীকে দিয়ে লিখিয়ে নিতেন। সৌমিত্রদা নিজে নিজে বসে লিখলেন। আর স্বাতীদি ঠায় নিজের চেয়ারে বসে। পেছনে সোনাঝুরির জঙ্গল, পাতা ঝরার আওয়াজ।

চিত্রনাট্য শোনার দিন সৌমিত্রদা বলেছিলেন, এই দৃশ্যটা অনেকটা বার্গম্যানের 'সেভেন্থ সিল' ছবির সেই দৃশ্যের মতো। যেখানে ঈশ্বরের সঙ্গে দাবা খেলা চলছিল, এখানেও তো অনেকটা তাই। নিয়তির সঙ্গে শব্দছক খেলা।

সৌমিত্রদা অর্থাৎ বিশ্বনাথ বলছেন, "চৈত্র মাসের পূর্ণিমা, পাঁচ অক্ষরের। একটু থেমে বিশ্বনাথ আবারও বলে ওঠেন একই কথা। আরতি তথা স্বাতীদি তাকিয়ে। সৌমিত্রদাও তাকিয়ে। আরতি বললেন, "মধুপূর্ণিমা"।

বিশ্বনাথ: বাহ!
নন্দিতাদি বলে উঠলেন, "কাট!”

সৌমিত্র-স্বাতীলেখা তখনও এক্সপ্রেশন ধরে বসে আছেন।
এর পর সৌমিত্রদা বললেন, "নন্দিতা যেটা চেয়েছিলে পেয়েছ?"

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE