টলিপাড়ার তরুণ তুর্কিরা। ছবিতে বাঁ-দিক থেকে সায়নী ঘোষ, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, মানালি দে, অনিন্দিতা রায়চৌধুরী। গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।
পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটলে অনেক সময়েই বেরিয়ে আসে বহু অজানা তথ্য। যেমন, শুটিং শুরু নিয়ে টলিপাড়ার মান-অভিমান এবং বাদ-বিবাদের অজানা তথ্যের হদিশ পেল আনন্দবাজার ডিজিটাল। এই যে নানা টানাপড়েন এবং মানভঞ্জনের পর্ব মিটিয়ে টলিপাড়ায় আবার শুটিং শুরু হল, এর পিছনে অগোচরে থেকে একটা বড় ভূমিকা পালন করল কারা জানেন?
টলিপাড়ার ইয়ং ব্রিগেড! সেই ব্রিগেডে ছিলেন অভিনেত্রী মানালি দে, অনিন্দিতা রায়চৌধুরী, সৌরভ দাস, সায়নী ঘোষ, স্বস্তিকা দত্ত, এলফিনা মুখোপাধ্যায়— টলিপাড়ার বেশ কিছু চেনা মুখ। কী করেছিলেন তাঁরা?
শিল্পীদের করোনা-বিমা নিয়ে ঝামেলায় শুটিং বন্ধ হতেই টলিপাড়ার নতুন প্রজন্মের একাংশের মধ্যে উঁকি দিতে শুরু করে নানা প্রশ্ন। শুধু বিমার জন্যই শুটিং বন্ধ হয়ে যাবে তা তাঁরা চাননি। মানালি যেমন বলছিলেন, ‘‘আমরা বেশির ভাগই চেয়েছিলাম কাজটা যাতে শুরু হয়। এমনিতেই এই তিন মাসে ইন্ডাস্ট্রির অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। আমরা শিল্পীরা হয়তো ক’টা দিন চালিয়ে নিতে পারব। কিন্তু টেকনিশিয়ানরা?’
তা হলে কী করণীয়? এই সব ভাবতে ভাবতেই টলিপাড়ার নিউ এজ খুলে ফেলে এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। যে যাঁর পরিচিত বন্ধুদের যোগ করাতে থাকেন সেই গ্রুপে। সেই গ্রুপে কিন্তু সবাই অভিনেতা। তাঁরা সকলেই জানতেন বিমার কাগজ হাতে পাওয়া তাঁদের জন্য কতটা জরুরি। কিন্তু আড়াই মাস ধরে ধুলো জমা টলিপাড়া আরও এক বার নিথর হয়ে যাবে তা মন থেকে মানতেই পারছিলেন না তাঁরা।
টলিপাড়ায় শুটিং শুরুর নেপথ্যে ভূমিকা ছিল অনেকের। নিজস্ব চিত্র।
মূলত ইয়ং ব্রিগেড থাকলেও ওই গ্রুপে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় ও ভরত কলের মতো টলিউডে অনেক বছর কাজ করা মানুষও ছিলেন। ভাস্বর বলেন, ‘‘একটা অনলাইন পোল করলে কেমন হয়? কারা শুটিংয়ে যোগ দিতে চান আর কারা চান না। আর তা ছাড়া যে ১০-১৫ দিন সময় বিমার লিখিত কাগজের জন্য চ্যানেল ও প্রযোজকরা চেয়েছেন এক বার বিশ্বাস করে সেই সময়টা দিয়ে দেখাই যাক না।’’
আরও পড়ুন: সুশান্তের থেকে টাইগারের সঙ্গে প্রেম করা অনেক সহজ: দিশা পাটানি
কথাটা মনে ধরে গ্রুপের সকলেরই। কিন্তু সবের তো একটা নিয়ম আছে। ফোরাম যখন আর্টিস্টদের কথা ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ক্ষেত্রে শিল্পীদের এই কাজে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ আদৌ কি ঠিক? গ্রুপের অন্দরেই উঠেছিল সেই প্রশ্ন। অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘আমরা আর্টিস্টরা ফোরামের ছাতার তলাতেই। ফোরাম একটা ভারডিক্ট দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমাদেরও কিছু ব্যক্তিগত মত ছিল সেখানে। আমাদের একটাই বক্তব্য ছিল, আমরা কাজ করতে চাই, ব্যস।’’
ঠিক হয়, ফোরামের কাছেই তাদের আর্জি নিয়ে লিখিত আবেদনপত্র জমা দেবে জেন ওয়াই। অন্য কোনও সংগঠনকে এর মধ্যে না জড়িয়ে যা বলার সরাসরি ফোরামকেই অনুরোধ করবেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রুপেরই এক অভিনেত্রী বলেন, ‘‘ফোরামের বিরুদ্ধাচরণ করা কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু শিল্পীদের জন্য যাতে ইন্ডাস্ট্রির বাকি মানুষদের রোজগার না বন্ধ হয় সে চেষ্টাই করছিলাম আমরা। এর আগে মাইনে নিয়ে ঝামেলার সময় ফোরাম আগলে রেখেছিল। তাই নিশ্চিত ছিলাম এ বারও সাড়া পাব।’’
সব ঠিকঠাক। আবেদনপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে। খবর যায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে। ওই গ্রুপেরই এক অভিনেত্রীকে ফোন করেন মন্ত্রী। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার প্ল্যান পিছিয়ে দিতে বলে তিনি আশ্বাস দেন, দু’টো দিন সবুর কর না, দেখ কী হয়। বুধবার বিকেলের মধ্যেই কিছু একটা ব্যবস্থা করা হবে।
আরও পড়ুন: মোনালিকে বিয়ে করতে এসে ঘাড়ধাক্কা খেয়েছিলেন হবু স্বামী মাইক?
এর পরের গল্পটা সকলেরই জানা। রুদ্ধশ্বাস মিটিংয়ের পর ১১ জুন থেকে শুরু হল টলিপাড়ার শুটিং। ভেতর থেকেই তাগিদটা উঠেছিল। অভিনেত্রী অনিন্দিতা যেমন বলছিলেন, ‘‘ফোরামের বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা কিছু করতে চাইনি। তাই ফোরামকেই আবেদনপত্র জমা দিতে চেয়েছিলাম। যদিও তার আগেই সমস্যা মিটে যাওয়ায় সে দিকে আর যেতে হয়নি। আবার সবাই শুটে ফিরেছে দেখে শান্তি লাগছে।’’ একগাল হেসে মানালি বললেন, ‘‘আমাদের ইচ্ছার কথা কাকেই বা বলব ফোরাম ছাড়া? অরূপদাকেও ধন্যবাদ।’’
১১ তারিখ থেকে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে টলিপাড়া। এই ঘুরে দাঁড়ানোয় প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে যে এক বিশাল ভূমিকা পালন করেছিল টলিপাড়ার ইয়ং ব্রিগেড, তা ধরা পড়ল আনন্দবাজার ডিজিটালের আতসকাচে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy