‘সাদা রঙের পৃথিবী’র ছবির দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।
কাশীতে বিধবাদের আশ্রম, সেখান থেকে একে একে গায়েব হয়ে যাওয়া নারী ও পাচারচক্র... রাজর্ষি দে তাঁর ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ সাজিয়েছেন এই দিয়েই। আগের সবক’টি ছবির মতোই তাঁর এ ছবিতেও প্রচুর চরিত্রের ভিড়। বাকি ছবির মতো এ ছবিতেও পরিচালক একটি দর্শনের সন্ধান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দর্শককে। নারীচরিত্রেরা রাজর্ষির ছবিতে বরাবরই প্রাধান্য পায়। তাদের বিভিন্ন পরত উঠে আসে পরিচালকের কাহিনিতে। ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ও ব্যতিক্রম নয়। এ ছবি যে পথ ধরে এগোয় এবং শেষে যেখানে পৌঁছে দেয়, তা অনুমেয়। কিছু চমকও অপেক্ষা করে থাকে। তবু মোটের উপর ছবিটি ছাপ ফেলতে পারে না। ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’র দোষে দুষ্ট এ ছবি, যা কাহিনির মূল বক্তব্যকে ঢেকে দেয়। সঙ্গে কিছু দুর্বল অভিনয়, কমজোরি সংলাপ, টেকনিক্যাল বিভাগগুলির মধ্যমান... ছবিটিকে উতরে দেওয়ার জন্য সঙ্গত করেনি প্রায় কিছুই।
বারাণসীতে মুক্তি মণ্ডপ নামে বিধবা আশ্রম ভেঙে রিসর্ট করতে চায় সে শহরেরই প্রভাবশালী বাবাজি করুণানন্দ (অরিন্দম শীল)। এ নিয়ে তার সঙ্গে সংঘাত বাধে তারই স্ত্রী আভা সেনের (অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়), যাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। আভা সেনও রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে প্রতিপত্তিশালী, যার আড়ালে সে গর্হিত ব্যবসা চালায়। অন্য দিকে, ভবানী ও শিবানী (শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়) সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর যমজ বোন। একজন সমাজসেবী, অন্য জন বিরোধী। এরই মাঝে মুক্তি মণ্ডপে এসে হাজির হয় অলক্ষ্মী (সৌরসেনী মৈত্র), অন্য এক উদ্দেশ্য নিয়ে। তাকে নিয়ে আসে সুনীল (ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়)। মুক্তি মণ্ডপের কর্ত্রী ভৈরো দিদি (মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়)। সেখানকার আবাসিকরা তটস্থ হয়ে থাকে যে, কখন সকলের অগোচরে গায়েব হয়ে যাবে তাদের মধ্য থেকেই কেউ। কাশীর প্রেক্ষাপটে বিধবাদের বেরঙিন জীবনের ক্লিন্নতা, গ্রাম থেকে সহজসরল সদ্যবিধবাদের ভুলিয়ে এনে বিক্রি করে দেওয়া, ভেকধারী বাবাজি, নারীপাচারের দুষ্টচক্র... সব উপাদানই ছিল। কিন্তু এত মশলা দিয়ে তৈরি হলেও রান্না স্বাদু হয়নি। বারাণসীর বিধবা আশ্রম ও তার সমস্যাকে যে ভাবে দর্শানো হয়েছে, পাচারচক্রীদের ডেরায় যে নাটকীয় পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সবটাই অতিরঞ্জিত।
সাদা রঙের পৃথিবী
পরিচালক: রাজর্ষি দে
অভিনয়: শ্রাবন্তী, সৌরসেনী, অনন্যা, অরিন্দম, ঋতব্রত, মল্লিকা
৪.৫/১০
শ্রাবন্তীর মতো অভিনেত্রীকে সুযোগ পেয়েও যেন ঠিক মতো ব্যবহার করতে ব্যর্থ এ ছবি। তবুও তাঁকে সাজিয়ে দেওয়া চিত্রনাট্যে যথাসাধ্য করেছেন অভিনেত্রী। অদ্ভুত বৈপরীত্যে ভেঙেচুরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন নিজেকে, আগলহীন ভাবে। ঋতব্রত, অরিন্দম, সৌরসেনী, মল্লিকার মতো কয়েক জন শিল্পীর কাজ যথাযথ, ব্যালান্সড। বিশেষ করে ঋতব্রত-সৌরসেনীর রসায়ন আলাদা মাত্রা যোগ করেছে গল্পে। ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নজর কেড়েছেন স্নেহা চট্টোপাধ্যায়। এই চরিত্রটির বিবর্তনের গল্পটি সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তরুণ আশ্রমিক বুল্লির চরিত্রে সোহিনী গুহ রায় ভাল। তাঁর সঙ্গে অরুণাভ দে-র ছোট্ট প্রেমকাহিনিটিও সুন্দর। এ ছাড়া বাকি প্রায় কোনও চরিত্রেরই অন্তরে প্রবেশ করেননি তাদের অভিনেতারা। মনে হয় যেন সাজানো সংলাপ বলে চলেছেন সকলে, এমন আড়ষ্ট ভাবে এগিয়ে চলে গল্প।
কাশীর ঘাট, গলিপথের মতো প্রেক্ষাপট পেয়েও যেন তা কাজে লাগাতে পারেনি ক্যামেরা। আবহসঙ্গীতও বেশ অপরিণত। বিষয় নির্বাচনে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছিলেন পরিচালক। রয়েছে জরুরি কিছু বার্তাও। কিন্তু নির্মাণে গলদ থেকে যাওয়ায় এই ফ্যাকাসে পৃথিবীর গল্প মনের কাছাকাছি পৌঁছল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy