Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

মন উচাটন হবেই, না দেখা মানে লোপ্পা ক্যাচ মিস

অপমানে বিধ্বস্ত মানুষ অবসাদে তলিয়ে যাওয়ার আগে পরিবারের সাহচর্যে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তার সাইকোলজিক্যাল জার্নিতে আছি! অপমানে বিধ্বস্ত মানুষ অবসাদে তলিয়ে যাওয়ার আগে পরিবারের সাহচর্যে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তার সাইকোলজিক্যাল জার্নিতে আছি!

দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০১:০০
Share: Save:

সচিন: আ বিলিয়ন ড্রিমস

পরিচালনা: জেমস এরস্কিন

অভিনয়: সচিন, অঞ্জলি, অজিত, রমেশ, রজনী

৭/১০

ক্রিকেটের ‘ক’ জানতে লাগবে না। শুধু সিনেম্যাটিক বিনোদন পেতে দু’ঘণ্টার একটু বেশি ম্যানেজ করে চোখ বুজে চলে যান।

ছাঁচে ঢালা তথ্যচিত্র নয়।যেমনটা ছিল ‘পেস ভার্সাস স্পিন’ বা ‘জায়ান্টস অব ব্রাজিল’। আবার মেকিংটা ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ বা ‘এম এস ধোনি: দি আনটোল্ড স্টোরি’ মার্কাও নয়। কোথায় যেন দুটো ধারাকে যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ!

বাজি রেখে বলা যায় ‘সচিন: আ বিলিয়ন ড্রিমস’ দেখলে পরিচালকমশাই জেমস এরস্কিনের অন্য কাজগুলো দেখতে মন উচাটন হবেই।

দুরন্ত এডিটিং। দুর্ধর্ষ অভিনয়। ক্যামেরা কিংবা স্ক্রিন-প্লে নিয়ে কোনও কথা হবে না। মিউজিকটা শুনলে বোঝা যায়, এ আর রহমান ঠিক কেন এ আর রহমান! অর্কেস্ট্রেশন তো ছেড়েই দিন, দু’চারটে জনপ্রিয় গান, যেমন ধরুন, ‘এ দিল না হোতা বেচারা’, ‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’, ‘গিভ মি সানসাইন’ এত অনবদ্য টাইমিংয়ে ছেড়েছেন, ভাবা যায় না। লিটল মাস্টারের মাটি কামড়ানো স্ট্রেট ড্রাইভগুলো যেমন নিখুঁত হতো, ঠিক তেমন।

এক এক সময় মনে হচ্ছিল, ফ্যামিলি ড্রামা দেখছি। হারিয়ে যাওয়া সোশ্যাল ভ্যালুজের মনকেমনিয়া গদ্য শুনছি। তাগড়াই ইমারত গড়ার প্রস্তুতি লগ্নে যে মজ্জা নিংড়ানো মুষলপর্ব চলে, তা-ই চাক্ষুষ করছি। অপমানে বিধ্বস্ত মানুষ অবসাদে তলিয়ে যাওয়ার আগে পরিবারের সাহচর্যে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তার সাইকোলজিক্যাল জার্নিতে আছি!

ঠান্ডা-ঠান্ডা কুল-কুল দৃশ্য সংখ্যায় এত যে, সাগরপারের ঝিনুকও লজ্জা পাবে! সবুজ নদীতে জলযানে সচিনের জলকেলি, বাচ্চাদের নিয়ে বিছানায় খুনসুটি, বরফে গড়াগড়ি, গণেশ চতুর্থীর মুম্বই, টপঅ্যাঙ্গলে দেখা মেরিন ড্রাইভে গাড়ির গোল্লাছুট, পাখির চোখে সবুজে সবুজ ইয়র্কশায়ার, মোহালির মাঠে এরোপ্লেনের দৈত্যসম ছায়াদৃশ্য! তবু বলব, দু’তিনটে সিকোয়েন্স যেন বলে, ‘দেখলে হবে, খরচা আছে’!

তারই এক-আধটা বলি। আজহার-সচিন পাশাপাশি প্যাভিলিয়নে। ভক্তর দল হামলে পড়েছে শুধু সচিনের অটোগ্রাফ নিতে। ভালবাসার মসনদ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় ঈর্ষান্বিত চোখে সে দিকে ঠায় তাকিয়ে ক্রিকেটের অন্যতম লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, মহম্মদ আজহারউদ্দিন!

আরও পড়ুন: বায়ো-পিক

আরেকটি শট। ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ নিয়ে দুনিয়া তোলপাড়। ক্রিকেট-ঈশ্বর স্বয়ং ক্রুশে বিদ্ধ হওয়ার মুখে! তাঁর একনিষ্ঠ পুজারি সচিন রমেশ তেন্ডুলকর ক্ষতবিক্ষত। প্র্যাকটিস-সেশন শুরুর মুহূর্তে মাঠে বসে সৌরভ-সচিন। প্রথম জন আড়চোখে দেখছেন সহযোদ্ধাকে। যোদ্ধাটি তখন হাতজোড় করে, চোখ বুজে আরাধনায় রত। তিরতির করে ঠোঁটটা কাঁপছে শুধু।

‘উইট’-ই বা কম কী! খুদে সচিন আর তার বন্ধু গৌরবের পাড়া-অভিযান, পড়শির গাড়ির চারটে চাকারই হাওয়া খুলে দেওয়া, ছক কষে বন্ধুকে গাড্ডায় ফেলা, প্রেমে পড়া থেকে বিয়ের গপ্পোয় অঞ্জলি আর সচিন, পঁয়তিরিশের জন্মদিনে হরভজন-সহবাগ-ধোনিদের কমেন্টস, গোয়ায় বন্ধুদের গিটার নিয়ে আধা জামাইকান স্টাইলে ঘরোয়া কনসার্ট। আছে টানটান রহস্যও। ক্রিকেট-স্ক্যাম নিয়ে ফিল্মিক জায়গাগুলো যেমন। ফলে উপাদান অসংখ্য, নন-ক্রিকেট লাভারদের জন্য। আবার মজার হল, পুরোদস্তুর ক্রিকেটপ্রেমীর জন্যও রসের ভাঁড়ারটি পূর্ণ। এবং নস্ট্যালজিকও!

১৫ বছর ২৩২ দিনের ছোকরা। মুখে বাউন্সার খেয়ে দাঁত খুলে গেছে। পাশ থেকে জাভেদ মিঁয়াদাদকুল আলগা ‘দুঃখু’ দেখিয়ে ব্যারাক করে চলেছে। আর ছোকরা জেদের দেওয়ালে পিঠটা রেখে ক্রিজে ফিরে যাচ্ছে খুনে পেসারকে পাল্টা দেবে বলে! পুরো ‘শোলে’র সঞ্জীবকুমার! নিজের কিট খুলে ব্যাটের ওজন, তার শেপ, প্যাড, গ্লাভসের স্পেশ্যালিটি বোঝাচ্ছেন ক্রিকেটের বাদশা। জীবনচর্চার গুরু যে বাবা, সেই বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ওয়ার্ল্ডকাপের মাঝপথে ফিরে এসেও আবার জয়েন করছেন ়িটমের সঙ্গে। শেন ওয়ার্নকে খেলার আগে হোমওয়র্ক কেমন ছিল, ডিটেলে জানাচ্ছেন। টেনিস এলবোতে ভোগার সময় ফাইটব্যাকের নেপথ্যকাহিনি বলছেন। গ্রেগ চ্যাপেলের কথায় মন্তব্যে যাচ্ছেন, ‘পুরো হেডমাস্টার-টাইপ’ কিংবা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুলের মাস্টারমাইন্ড’ বলে! এমন ভূরিভূরি সিকোয়েন্সের সঙ্গে জুড়ুন, সাপের ছোবল মারার মতো ইয়র্কারে ওঁর নিঁখুত ফ্লিক অব দ্য টোজ, থ্রি-কোয়ার্টার থেকে ধাঁ করে উঠে আসা বাউন্সারকে স্কুপ করে উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে মাঠের ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া, শোয়েব আখতারকে স্কোয়্যার কাটে ছয়, এমন কত কত!

তবে স্লিপে খোঁচা কি নেই? আছে। সময়কে ধরাতে গিয়ে হঠাৎ হঠাৎ কখনও ওয়াঘা বর্ডার, কখনও মিসাইলের উড়ান, কখনও মুক্ত অর্থনীতি! টিভিতে ভাল সিনেমা দেখতে বসে কমার্শিয়াল ব্রেক যেমন অশান্তির, এ যেন তেমনই! হর্ষ ভোগলে অ্যান্ড কোম্পানির দাপটও চোখে লাগে, বিতর্কিত ম্যাচ-ফিক্সিং বারুদে-আগুনে সংযোগ হওয়ার আগেই জল! কেন? হিরো কাপের সেই স্মরণীয় ওভারটাই বা কোথায় গেল! কোথায় গেল কাম্বলি-সচিন বহুচর্চিত বন্ধু-বিচ্ছেদ! একজন মানুষকে ব্যক্তিজীবনেও ‘ভগবান’ করে রাখার মতো কাহিনি-বর্ণন মাঝেমধ্যে পানশে ঠেকে!

এটুকু সয়ে নিলে কিন্তু ছবিটা শেষ হলে একটাই আওয়াজের রেশ মাথায় নিয়ে বহুক্ষণ ঘুরবেন, ‘সচিন সচিন সচিন’!

অন্য বিষয়গুলি:

Sachin: A Billion Dreams Movie Reviews
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE