Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Cirkus Movie Review

রোহিত শেট্টি-রণবীর সিংহের ‘সার্কাস’ জমল কি? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে রোহিত শেট্টি পরিচালিত কমেডি ছবি ‘সার্কাস’। বড় পর্দায় এই সার্কাসের আয়োজন কেমন হল?

কেমন হল রণবীর সিংহ, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, পূজা হেগড়ে এবং বরুণ শর্মা অভিনীত ‘সার্কাস’?

কেমন হল রণবীর সিংহ, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, পূজা হেগড়ে এবং বরুণ শর্মা অভিনীত ‘সার্কাস’? ছবি: সংগৃহীত।

শ্রুতি মিশ্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৩২
Share: Save:

চারিদিকে আলো-আঁধারির খেলা, কখনও ট্রাপিজ শো চলছে আবার কখনও আগুন নিয়ে কেরামতি। কিন্তু জুবিলি সার্কাসের প্রধান আকর্ষণ এক জনই— ‘ইলেকট্রিক ম্যান’। হাই ভোল্টেজের তার দীর্ঘ ক্ষণ ধরে রাখলেও ইলেকট্রিক ম্যানের শরীরে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ে না। কিন্তু একই সময় অন্য শহরে দেখা যায় বিপরীত দৃশ্য। কোনও ইলেকট্রিক তারের সংস্পর্শে না এসেও সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় এক ব্যক্তির।

সার্কাস মানেই ট্রাপিজ শো থেকে শুরু করে জোকারদের বিচিত্র কারবার। খানিকটা মন ভাল করার ওষুধের মতো কাজ করে যেন। চলতি বছরে বড়দিন উপলক্ষে পরিচালক রোহিত শেট্টি ‘জুবিলি সার্কাস’-এর আয়োজন করেছেন। তবে তা কোনও মঞ্চে নয়, একেবারে বড় পর্দায়। শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে রণবীর সিংহ, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, পূজা হেগড়ে এবং বরুণ শর্মা অভিনীত ‘সার্কাস’। কমেডি হোক বা অ্যাকশন ঘরানার ছবি, রোহিত শেট্টির ছবিতে যে জিনিসটি ধ্রুবক হয়ে থাকে, তা হল বিনোদন। তার উপর আবার যে ছবিতে রণবীরের মতো অভিনেতা রয়েছেন, যিনি পর্দায় এলেই তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে দর্শকের মন জিতে ফেলেন, সেই ছবি নিয়ে আশা রাখাই যায়। তবে ‘সিম্বা’ ছবিতে রণবীর এবং রোহিতের যুগলবন্দি যে ভাবে সাড়া ফেলেছিল, ‘সার্কাস’ যেন তার উল্টো পথে হাঁটা লাগাল। বছর শেষ, ছুটির মেজাজ। তার মধ্যেও মর্নিং শোয়ের সব সিট ফাঁকা।

‘সার্কাস’ কমেডি ঘরানার ছবি, কিন্তু হাস্যরসের পরিমাণ নিতান্তই কম। তার বদলে রয়েছে অবাঞ্ছিত এবং অপ্রয়োজনীয় নাটকীয়তা। ছবির ট্রেলার মুক্তি পেতেই বোঝা গিয়েছিল যে, সার্কাস ছবিতে রণবীরকে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে। প্রথমার্ধে দুই চরিত্রের গল্পকে সমান্তরাল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে ছবিটি। যেন জোর করে দর্শককে গল্পটি বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মূল গল্প পর্দায় তুলে ধরতে বার বার মুরালি শর্মার চরিত্রকে গল্পের কথক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। গল্প বলার এই কায়দা যেন সিনেমাটিকে নিজস্ব গতিতে বইতে দেয়নি। আসা যাক, অভিনয়ের কথায়। পুরো ছবি যেন রণবীর একাই তাঁর অভিনয় দিয়ে টেনে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কারণ, তাঁর সহ অভিনেতাদের পারফরম্যান্স মনে ধরল না।

জ্যাকলিন এবং পূজা দুই অভিনেত্রীর কাজে নতুন কিছুই চোখে পড়ার মতো নয়। বরুণ শর্মার মতো দক্ষ অভিনেতা যিনি কমিক দৃশ্যে বলে বলে ছক্কা হাঁকাতে পারেন, তাঁকেও ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারলেন না পরিচালক। সঞ্জয় মিশ্র তাঁর দিক থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন পর্দায় নিজের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার। পার্শ্ব চরিত্রে অশ্বিনী কালসেকর, মুরালি শর্মা, সিদ্ধার্থ যাদব, মুকেশ তিওয়ারির মতো তারকারা থাকলেও তাঁরা কেউই মনে জায়গা করে নিতে পারেননি। ছবির দ্বিতীয়ার্ধে পর্দায় হাজির হয়েছেন জনি লিভার। তাঁর মুখের অভিব্যক্তি এবং উপযুক্ত কমিক টাইমিং সামান্য হলেও হাসির উদ্রেক ঘটায়। কমেডি ঘরানার সিনেমা হয়েও সার্কাস যেন বিনোদন জোগাতে ব্যর্থ হয়ে পড়ল।

ছবিতে রেট্রো ফিল আনতে বার বার পুরনো হিন্দি ছবির গান ব্যবহার করা হয়েছে। তবে গানগুলির ব্যবহার প্রয়োজনের তুলনায় এতটাই বেশি যে, তা বিরক্তির কারণ হতে পারে। কিছু কিছু দৃশ্য এতটাই কাকতালীয় যে, তা বড্ড চোখে লাগে। কিন্তু ছবির সবচেয়ে বেশি দুর্বল দিক হল একই সংলাপের পুনরাবৃত্তি। কমেডির পাশাপাশি এই ছবির মাধ্যমে একটি সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। রক্তের সম্পর্ক থাকলেই একে অপরকে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু তা না থাকলে পরিবারের মধ্যে দখলের লড়াই শুরু হয— এই চিন্তাধারাকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন রোহিত। কিন্তু পরিচালক এই ছবিতে একসঙ্গে এত কিছু দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে মাঝপথে খেই হারিয়ে পড়েছে ছবিটি। কখনও মনে হয়েছে খাপছাড়া, কখনও মনে হয়েছে ধীর গতির। আবার যেন হঠাৎ করেই সিনেমা শেষ হয়ে গেল। যেন শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে সকল চরিত্রকে এক জায়গায় বসিয়ে তাড়াতাড়ি মীমাংসা করা হচ্ছে।

দুই ঘণ্টার বেশি দৈর্ঘ্যের এই ছবিটি একটানা বসে দেখার মতো আগ্রহ বা উত্তেজনা কিছুই তৈরি করল না সার্কাস। দীপিকা পাড়ুকোনের ক্যামিয়োতে নাচের দৃশ্যটিই বরং একটু হলেও নজরকাড়া। এই ছবির চমক রয়েছে একেবারে ক্লাইম্যাক্সে। কিন্তু দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তার এক ঝলক ট্রেলারে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিত শেট্টি ‘গোলমাল’ সিরিজ়ের সঙ্গে এই ছবির যে একটা যোগসূত্র স্থাপন করছেন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অনেক আগেই। ‘গোলমাল’ ছবির অনেক চরিত্রই ঘুরেফিরে এসেছে সার্কাস ছবিতে। তাই পরবর্তী ছবির মূল গল্প নিয়ে কৌতূহল থেকেই যায়। তবে হাজার চেষ্টা করেও যেন হতাশ করল ‘সার্কাস’। এই ছবি যে কোনও ভাবেই দর্শককে টানবে না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy