Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি

অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় মিস করা যাবে না। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।সোহম মিত্র ওরফে শান্তুই সম্ভবত ‘চৌরঙ্গা’র সেরা আবিষ্কার। সে বিদ্রোহী, মায়ের অবাধ্য, দলিত, দাদার মতো জমিদারের পা ছুঁয়ে স্কুলে পড়তে চায় না। সে অন্য মনের। সেই জন্যই লাল-নীল-কালো-সবুজ রং ভরা প্লাস্টিকের সেই ছোটবেলার পেন—তা ঘিরেই তার বিস্ময়! এই চার রঙেই তৈরি ‘চৌরঙ্গা’।

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:১৬
Share: Save:

সোহম মিত্র ওরফে শান্তুই সম্ভবত ‘চৌরঙ্গা’র সেরা আবিষ্কার।

সে বিদ্রোহী, মায়ের অবাধ্য, দলিত, দাদার মতো জমিদারের পা ছুঁয়ে স্কুলে পড়তে চায় না। সে অন্য মনের। সেই জন্যই লাল-নীল-কালো-সবুজ রং ভরা প্লাস্টিকের সেই ছোটবেলার পেন—তা ঘিরেই তার বিস্ময়! এই চার রঙেই তৈরি ‘চৌরঙ্গা’। আর চৌরঙ্গা-র সব রং-ই সোহমের অভিনয়ে ধরা। তাকে দেখতে দেখতেই দর্শক পৌঁছে যায় বয়ঃসন্ধির নস্টালজিয়ায়। সে লুকিয়ে দেখা নায়িকার শরীরই হোক বা মেয়েদের স্তন সম্পর্কে জানা বাড়তি কৌতূহলই হোক। বাদবাকি সবটাই বড্ড বেশি কালো। পরিচালক বিকাশরঞ্জন মিশ্র বিহারের দলিত গ্রামের সত্যি গল্প বলতে গিয়ে এক নৃশংসতার ছবি এঁকেছেন। কিন্তু ছবির বিষয়ের মতো ক্যামেরাও কোথাও কোথাও বড্ড বেশি কালো! ঝরঝরে সম্পাদনা, যথাযথ আবহ সত্ত্বেও ক্যামেরার অস্পষ্টতা ছবির নানা জটিল বিষয়ের কোনও সমাধান দিতে পারেনি। অন্ধ বাবাজির চরিত্রে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় সাবলীল, তবে রোজ ছাগলের সঙ্গে অন্ধকারে তিনি ঠিক কী করেন ক্যামেরা তা বুঝতে দেয় না। কী ভাবেই বা তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়ের (ধনিয়া) মৃত্যু হয়? সাপের কামড়ে না কি অন্য কোনও ভাবে? ক্যামেরা দর্শককে আবারও অন্ধকারে রাখে। শুরুতে তৈরি হওয়া অনেক প্রশ্নই প্রশ্ন হয়ে থেকে যায়। বাবাজিকে শান্তু ঘরে বন্ধ করে রেখে দেয়। তার পরে আর কেউ তার খোঁজ করে না কেন?

বিকাশরঞ্জন খুব দ্রুত নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ছবিটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়কে এ ছবিতে কিছুতেই ভোলা যাবে না। মাত্র দু’থেকে তিনটে সংলাপ তাঁর ঠোঁটে। অর্পিতার চোখ শুধু তাঁর যন্ত্রণার কথা বলে। সেই চোখ যেন ছবিতে দেখা সাপের মতোই ঠান্ডা অথচ তীব্র!

চোদ্দো বছরের শান্তু উচ্চবংশের জমিদারের মেয়েকে প্রেমের চিঠি পাঠায়। শান্তুর লেখাপড়া জানা শহর ফেরত দাদা বলে ‘লভ লেটার’টা লাল রঙে লেখা হবে। কিন্তু শান্তুর বুনো মন জানে, লাল হল খুনের রং। রুক্ষ মাটির দলিত মানুষেরা আজও হয়তো লাল রঙে মৃত্যুর রক্ত দেখতে পায়। ‘চৌরঙ্গা’ সেটাই মনে করিয়ে দেয়।

এই হিন্দি ছবিতে বাঙালির জয়-জয়কার। তন্নিষ্ঠা ছট্টোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত— প্রত্যেকেই ভাল। তবে পেনের নীল কালিটা বোধহয় পরিচালক খুব যত্ন নিয়ে সোহমের জন্যই রেখেছিলেন। সে যেন বাঙালির সেই চেনা অপু—রেললাইনে যে নিজের মুক্তির পথ খুঁজে পায়।

অন্য বিষয়গুলি:

review chouranga srobonti bandopadhay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE