Advertisement
১৬ অক্টোবর ২০২৪
Jigra Movie review

মেধাবী চিত্রনাট্যের করুণ পরিণতি, ‘জিগরা’ কি প্রত্যাশা পূরণ করল? সন্ধানে আনন্দবাজার অনলাইন

অযৌক্তিক চমক এবং অতিমানবিক চরিত্র তৈরি করার লোভনীয় হাতছানিকে এড়াতে না পেরে ‘জিগরা’ অতি সাধারণ একটি অ্যাকশন সিনেমায় পরিণত হয়।

Review of Hindi film Jigra starring Alia Bhatt

‘জিগরা’ ছবির পোস্টারে আলিয়া ভট্ট। ছবি: সংগৃহীত।

অতীন্দ্র দানিয়াড়ী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৩৮
Share: Save:

এই ছবি সম্পর্কে একটি বাক্যে বলা যায়, ‘অনেক আশা জাগিয়ে শুরু করেও শেষরক্ষা হল না’। আসলে শুরু থেকে ছবিটি দর্শকদের মধ্যে যে প্রত্যাশা তৈরি করে, তা বিরতির পনেরো মিনিট পর থেকে উধাও হয়ে যায়। অযৌক্তিক চমক এবং অতিমানবিক চরিত্র তৈরি করার লোভনীয় হাতছানিকে এড়াতে না পেরে পরিচালক ভাসান বালার ‘জিগরা’ ছবিটি বিরতির পনেরো মিনিট পর অতি সাধারণ একটি অ্যাকশন সিনেমায় পরিণত হয়। শেষের দিকে যা দর্শকদের ক্লান্ত করে তোলে। ফলে ছবিটি তাঁদের স্মৃতির মহাফেজখানায় স্থান করে নিতে পারে না।

মালয়েশিয়ার একটি দ্বীপ ‘হানসি দাওতে’, যেখানে অঙ্কুর (বেদাঙ্গ রায়না) ও তার খুড়তুতো ভাই পড়াশোনার জন্য গিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেখানে অঙ্কুর মাদক রাখার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়। কিন্তু, সে এই ব্যাপারে কিছুই জানত না। সে দেশের কঠোর আইন ব্যবস্থার নিয়মে অঙ্কুর মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়। সেখানকার পুলিশ তাকে একটি উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন জেলে নিয়ে যায়। অসহায় নির্দোষ অঙ্কুর সেই জেলে বসে মৃত্যুর জন্য দিন গুনতে থাকে। ভয়ঙ্কর এই জেল থেকে মুক্তি পাওয়া এককথায় অসম্ভব হলেও অঙ্কুরের দিদি সত্যা (আলিয়া ভট্ট) বিশ্বাস করে, তার ভাই নির্দোষ, সে মরতে পারে না। সে ওই দেশে যায় এবং ভাইকে মুক্ত করে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। এক সময় প্রাক্তন পুলিশ অফিসার মুথু (রাহুল রবীন্দ্রন) এবং অবসর নেওয়া গ্যাংস্টার ভাটিয়ার (মনোজ পাহওয়া) সঙ্গে সত্যার আলাপ হয়। ওদের ছেলেরাও বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি পেয়ে ওই জেলেই মৃত্যুর জন্য দিন গুনছে। ভাটিয়া ও মুথুকে বুঝিয়ে সত্যা ওদের জেল থেকে মুক্ত করার কথা ভাবে। সেই জন্য, ওরা তিন জন মিলে ভয়ঙ্কর এক পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা কি সফল হবে ? অঙ্কুরSরা কি জেল থেকে সত্যিই মুক্তি পাবে? না কি, সত্যার অমানুষিক চেষ্টা বিফলে যাবে ? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য অবশ্যই ছবিটি হলে গিয়ে দেখতে হবে।

‘জিগরা’ ছবির একটি দৃশ্যে আলিয়া ভট্ট এবং বেদাঙ্গ রায়না।

‘জিগরা’ ছবির একটি দৃশ্যে আলিয়া ভট্ট এবং বেদাঙ্গ রায়না। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তি ও প্রযুক্তির সঠিক মেলবন্ধনের মাধ্যমে পরিচালক ভাসান বালার ‘জিগরা’ ছবিটি শুরু হয়। এক দিকে শক্তিশালী চিত্রনাট্য আর অন্য দিকে দক্ষ সিনেমাটোগ্রাফি ছবির গল্পকে মসৃণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। ছবিটি একটি নির্দিষ্ট ছন্দে গল্প বলতে বলতে এগিয়ে যায়, তৈরি হয় অসাধারণ দৃশ্যপট, আকর্ষণীয় নাটক, ফলে দর্শক একটুও অমনোযোগী হতে পারে না। ছবিটির শেষ চল্লিশ মিনিটকে আলাদা করে সরিয়ে রাখলে এ কথা অবশ্যই বলা যায় যে, ‘জিগরা’ ছবিতে একটি শক্তিশালী চিত্রনাট্যের সফল চিত্রায়ন দেখা গেল। বিভিন্ন ছোট ছোট ঘটনাকে নাটকীয় মোচড়ে কী ভাবে দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতে হয়, তা এই ছবি থেকে শেখা যায়। অপরাধীদের জেলে ঢোকানোর দৃশ্য, জেলে অঙ্কুরকে সত্যার দেখতে যাওয়া, ছোট্ট একটা ফাঁক দিয়ে সত্যা ও অঙ্কুরের আঙুল ছোঁয়া, জেলের মধ্যে অঙ্কুরের শাস্তি পাওয়া বা সত্যা ও মুথুর মারামারির মতো বেশ কিছু দৃশ্য মনে থেকে যায়। সিনেমাটোগ্রাফির অসাধারণ কাজ এই ছবিকে অন্য মাত্রায় তুলে নিয়ে যেতে পেরেছে, এর জন্য সিনেমাটোগ্রাফার স্বপ্নিল সোনাওয়ানেকে বিশেষ কৃতিত্ব দিতেই হয়। বিভিন্ন জায়গায় চড়া দাগের হাতছানি থাকলেও তিনি যে ভাবে চিত্রগ্রহণকে এক নির্দিষ্ট মাত্রায় বেঁধে রেখেছেন, তা প্রশংসা দাবি করে। ছবিতে আবহসঙ্গীত বেশ ভাল হলেও কিছু জায়গায় আরও একটু নিয়ন্ত্রণের দরকার ছিল বলে মনে হয়।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনেতারা বেশ ভাল কাজ করেছেন। বিশেষ করে ভাটিয়ার চরিত্রে মনোজ পাহওয়া এবং মুথুর চরিত্রে রাহুল রবীন্দ্রন অনবদ্য। এই দু’জন অভিনেতা তাঁদের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে ছবিটিকে একটি নির্দিষ্ট গতিতে বেঁধে রাখতে সমর্থ হন, তবে ‘জিগরা’ ছবির শ্রেষ্ঠ পাওনা আলিয়া। তাঁর অসাধারণ অভিনয় এ ছবির প্রাণভোমরা। চিত্রনাট্যের প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি যে ভাবে পর্দায় তুলে ধরেছেন, তা না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত। এক স্নেহপরায়ণ দিদির প্রতিটি অনুভবকে দক্ষতার সঙ্গে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা সহজ কাজ নয়, আলিয়া এই ছবিতে সেই কঠিন কাজটিই সহজ ভাবে করে দেখিয়েছেন।

এত কিছু উল্লেখযোগ্য দিক থাকা সত্ত্বেও পরিচালক ভাসান বালার ‘জিগরা’ ছবিটি অসাধারণ ছবির তালিকায় ঢুকতে পারে না। যে সব সিনেমার ক্ষেত্রে পরিণতি অনুমান করা যায়, সেখানে চিত্রনাট্য বেশ বড় ভূমিকা গ্রহণ করে। এই ছবিতেও চিত্রনাট্য সেই ভূমিকা নিয়েছিল। যুক্তি ও বুদ্ধির মেধাবী কারিকুরি ছবির গল্পকে আকর্ষণীয় গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু, বিরতির পরে সেই যুক্তিবোধ, সেই মেধা ক্রমশ অদৃশ্য হতে শুরু করে। শেষের দিকে চাপিয়ে দেওয়া অ্যাকশন দৃশ্য এবং আলিয়াকে অতিমানবিক চরিত্রে রূপ দেওয়ার প্রয়াস ছবিটিকে খুব দ্রুত সাধারণ মানে নামিয়ে দেয়। অথচ, গল্পের সূত্র ধরে ছবিটি অবশ্যই একটি যুক্তিগ্রাহ্য পরিণতিতে পৌঁছতে পারত। সে ক্ষেত্রে ছবিটি আকর্ষণীয় ভাবে শেষও হতে পারত। কিন্তু পরিচালক কেন যে সেই মেধাবী ভাবনা থেকে সরে গিয়ে ছবিটিকে একটি সাধারণ অ্যাকশন ছবি হিসেবে শেষ করলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে যায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE