Advertisement
E-Paper

সেক্টর ৩৬: নিঠারি হত্যাকাণ্ডের নিখুঁত সিনেমাকরণ এবং মানুষের অন্ধকার মনের কোণে আলো প্রক্ষেপণ

দিল্লির সন্নিকটে নিঠারি। কুখ্যাত সেই হত্যাকাণ্ডের ভিত্তিতে তৈরি এই ওটিটি ছবি আসন আঁকড়ে বসে থাকতে বাধ্য করে দর্শককে।

Review of the Hindi film Sector 36 starring Vikrant Massey

কেমন হল ‘সেক্টর ৩৬’? ছবি: সংগৃহীত।

অতীন্দ্র দানিয়াড়ী

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৫১
Share
Save

‘কে ওরা? ওদের বাবা-মা কারা? ওদের মধ্যে কুড়ি পঁচিশজন কমে গেলে কিচ্ছু আসে যায় না’, পুলিশের সামনে বসে এক নৃশংস সিরিয়াল কিলার হাসতে হাসতে হিন্দি ভাষায় এই কথাগুলি বলছে, যে বস্তির বাচ্চাদের অপহরণ করে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে। তার পর, সেই টুকরো থেকে বিশেষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খেয়ে নেয়! শুনতে অবাস্তব মনে হলেও ‘সেক্টর ৩৬’ ছবির এই দৃশ্যটি দেখতে দেখতে কথাগুলো অবাস্তব বলে মনে হয় না। এখানেই এই ছবিটির সার্থকতা। মানুষের ভাবনাচিন্তার বাইরে থাকা এক ভয়ঙ্কর নরখাদককে সিনেমার পর্দায় জীবন্ত চরিত্র করে তুলে ধরতে গেলে গল্প এবং চিত্রনাট্যে উপযুক্ত ধার থাকা প্রয়োজন। আদিত্য নিম্বলকর পরিচালিত নয়ডার নিঠারি হত্যার রোমহর্ষক ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ‘সেক্টর ৩৬’ ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য বেশ ধারালো। বোধায়ন রায়চৌধুরীর গল্পের স্রোত প্রথম থেকেই ছবিটিকে এমন একটি ছন্দে বেঁধে ফেলেছে যেটি দর্শকদের বুঁদ করে রাখতে পারে। পর্দায় ঘটে যাওয়া মারাত্মক দৃশ্যগুলি দর্শককে বিচলিত করে, আঘাত করে। তাঁরা ঘেন্নায় ছটফট করলেও পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারেন না।

Review of the Hindi film Sector 36 starring Vikrant Massey

‘সেক্টর ৩৬’ ছবির একটি দৃশ্য।

ছবির প্রেক্ষাপট অনেকেরই জানা। নয়ডার এক সিরিয়াল কিলার ছোট ছোট বাচ্চাদের অপহরণ করে খুন করত, তার পর সেই দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে, মাটিতে পুঁতে রাখত বা নর্দমায় ফেলে দিত। মৃতদেহের বেশ কিছু অঙ্গ সে রান্না করে খেয়েও নিত। এমন এক ভয়ঙ্কর চরিত্র প্রেম সিংহের (বিক্রান্ত মাসে) টিভিতে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র মতো একটি রিয়্যালিটি শো দেখার নেশা ছিল। শান্ত নিরীহ প্রেম যে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারত না। রাম চরণ পান্ডে (দীপক দব্রিয়াল) নামে এক পুলিশ আধিকারিক এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে প্রশাসনের দুর্নীতির কবলে পড়ে। ফলে সমাজের উপরতলার প্রকৃত অপরাধীরা টাকার জোরে কী ভাবে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করে, তা প্রকাশ্যে আসতে থাকে। রাম চরণ প্রেমকে ধরতে পারলেও উপরতলার প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে গিয়ে বাধা পায়। রামের চাকরি চলে যায়। কী হয় তার পর? প্রকৃত অপরাধী কি ধরা পড়ে? সেই কাহিনি জানার জন্য নেটফলিক্সের ছবিটি শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে। দেখতে হবে, শুরু থেকে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত একটি থ্রিলার ভাবনার ছবিকে ভারতীয় ভাবধারায় কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। গল্প, চিত্রনাট্য এবং অভিনয়ের সঠিক বুননে টানটান ‘সেক্টর ৩৬’ ছবিটি অবশ্যই দেখা যায়।

Review of the Hindi film Sector 36 starring Vikrant Massey

‘সেক্টর ৩৬’ ছবিটিকে শুধুমাত্র থ্রিলার বলে থেমে গেলে চলবে না। একেবারে বাস্তব দৃশ্যায়নের মাধ্যমে এই ছবি দর্শককে একটি সামাজিক আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে, যেখানে সামাজিক দুর্নীতি, পঙ্গু বিচারব্যবস্থা বা গরিব মানুষের অসহায়তার প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট ধরা পড়ে।

প্রথমেই এই ছবির প্রধান চরিত্র অর্থাৎ প্রেম সিংহের ভূমিকায় বিক্রান্ত মাসের অভিনয়ের কথা বলতেই হবে। কোনও চরিত্রের চরিত্রায়ণ যে এত সাবলীল হতে পারে, তা বিক্রান্তের অভিনয় দেখলে বোঝা যায়। বিশেষ করে সিনেমার পর্দায় তিনি এমন একজন অসুস্থ নৃশংস খুনী, পৃথিবীতে যার উদাহরণ বিরল। এ ছাড়া এই ছবিতে দীপক দব্রিয়াল বা আকাশ খুরানার অভিনয়ও মনে রাখার মতো। সৌরভ গোস্বামীর চিত্রগ্রহণ এবং কেতন সোধার আবহসঙ্গীত এই ছবির সম্পদ।

ছবিটির প্রতিটি মুহূর্তই যত্ন নিয়ে দেখতে দেখতে এগিয়ে যেতে হয়, কিন্তু পুলিশ আধিকারিক রাম চরণের প্রেমকে জেরা করার দৃশ্যটি যেন এই ছবির প্রাণ ভোমরা। এই দৃশ্যে সিনেমা, থিয়েটার মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। মনে হয় আমরা একসঙ্গে সিনেমা ও নাটক দেখছি। দু’টি চেয়ারে বসে দুই অভিনেতা প্রায় দশ মিনিট ধরে একটি দৃশ্যে অভিনয় করছেন কিন্তু দর্শকের একটুও একঘেয়ে লাগছে না, এমন ঘটনা আধুনিক হিন্দি সিনেমায় বিরল। এই দৃশ্যটি ছাড়াও রাম চরণের মেয়ে হাসপাতালে, জেলের গরাদের মধ্যে প্রেমের রিয়্যালিটি শো দেখার ধরন, প্রেমের মামাকে খুন করার দৃশ্য বা রাতে রাস্তা থেকে প্রেমের বাচ্চা চুরি করার দৃশ্য মনে থাকবে।

ছবিটি ক্যামেরার মাধ্যমে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যেতে যেতে দর্শকের মধ্যে শিহরণ তৈরি করে। বিশ্বাস করতে না চাইলেও, উপস্থাপনার গুণে দর্শক ওই দৃশ্যগুলিকে বিশ্বাস করতে পারেন, কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় দৃশ্যান্তরে যেতে গিয়ে দর্শক হোঁচট খান যখন ছবির গতির সঙ্গে তাল রেখে এগিয়ে চলাটা একটু কঠিন হয়ে যায়। গল্পের ঘটনা প্রবাহকে সামলাতে গিয়ে কোথাও কোথাও দর্শক ধাক্কা খেতে পারেন। শুরু থেকেই যে ভয়াবহ অথচ বাস্তব পটভূমির উপর ছবিটি তৈরি হয়, শেষের দিকে সেই পটভূমি একটু হলেও নড়বড়ে হয়ে যায়, ফলে গল্পের মজাটি একটু হলেও কমতে থাকে। বিশেষ করে প্রেম ধরা পড়ার পরে ছবিটিকে একটু যেন অগোছালো মনে হয়। ‘সেক্টর ৩৬’-এর বেশ কিছু দৃশ্যকে অনায়াসে ছোট করা যেত, তা হলে ছবিটি আরও ঝরঝরে হতে পারত। এমন কিছু ছোটখাটো বিষয় ছাড়া ‘সেক্টর ৩৬’ দেখতে বসে দর্শক উঠতে পারবেন না, এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়।

Review Movie Review Bollywood Movie Vikrant Massey

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।