Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বাঁধা ছকে গতির অভাব ছবিতে

জন্মগত তোতলামিতে ভোগেন বহু মানুষ। যেমন ভুগেছে এ গল্পের অর্জুন (সোহম) আর ডালি (শ্রাবন্তী)।

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০১:০৫
Share: Save:

কথা বলার জড়তার সমস্যাকে তেমন ভাবে গুরুত্ব এখনও অবধি দেওয়া হয় কই? অথচ এই সমস্যা গভীর। সব ক্ষেত্রে তার পুরোপুরি সমাধান না মিললেও কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যায় বইকি। অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘গুগলি’তে সেই সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, কিন্তু উত্তরণের পথ বলেননি।

জন্মগত তোতলামিতে ভোগেন বহু মানুষ। যেমন ভুগেছে এ গল্পের অর্জুন (সোহম) আর ডালি (শ্রাবন্তী)। স্বাভাবিক ভাবেই আর পাঁচটা মানুষের মতো বেড়ে ওঠা নয় তাদের। ছোটবেলায় বাকিদের হাসির খোরাক হওয়া, নিজেকে গুটিয়ে রাখা, সকলের সঙ্গে সমান ভাবে মিশতে না পারা এবং সবচেয়ে বড় কথা, নিজেকে হেয় ভাবার সমস্যা ছিলই। ছোটবেলা-কৈশোরের মতো তাদের যৌবনও একাই কেটেছে। তার পরে নিজের মতোই আর এক জনকে পেয়ে যাওয়া। ছকটা চেনা, হিসেবও সহজ। সমস্যা তৈরি হয় যখন অর্জুন-ডালির জীবনে সন্তান আসার প্রসঙ্গ ওঠে। নিজেদের মতো তাদের সন্তানও যদি একই জড়তা নিয়ে জন্মায় এবং বাকিদের হাসির পাত্র হয়? কিন্তু তাদের সন্তান গুগলি এসেছে স্বাভাবিক ভাবেই।

বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন বাবা-মায়ের সন্তান যে সেই একই সমস্যার মুখোমুখি পড়বে... এ ধারণা ভুল। পরিচালক সেই বার্তা দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে সফল। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। বাবাকে কেউ তোতলা বললে, তাকে মেরে আসতেও দ্বিধা করে না গুগলি। সহজ ভাবে মিলিয়ে দিতে গিয়ে অভিমন্যু এমন ছবি বানিয়েছেন, যাতে কোনও ওঠা-পড়া নেই। মোচড় দিতে গিয়ে এমন প্লট বেঁধেছেন, যার প্রয়োজনই ছিল না।

গুগলি পরিচালনা: অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় অভিনয়: সোহম, শ্রাবন্তী, অরিত্র, মানসী ৫/১০

স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে সমস্যা থেকে বেরোনোর কত উপায় খুঁজছেন চিকিৎসকরা। কথা বলার জড়তা নিয়ে থাকা কাউকে আপন করে নিলেই কাজ মিটে যায় না। দরকার তাকে নতুন দিশা দেখানোরও। পরিচালক তা না ভেবে বাঙাল-ঘটি দ্বন্দ্বজাতীয় বাঙালির চিরন্তন আবেগে বেশি মন দিয়েছেন।

ছবির দ্বিতীয়ার্ধ অত্যন্ত শ্লথ। ফলে দেখতে গিয়ে ধৈর্য হারায়। সিনেম্যাটোগ্রাফি ঝকঝকে। গান শুনতেও মন্দ লাগে না। অভিনয়ে পার্শ্বচরিত্রেরা যথাযথ। তবে আলাদা করে বলতে হয় শ্রাবন্তীর কথা। স্ট্যামারিংয়ের রকমফের হয়। তাতে শ্রাবন্তী অনবদ্য। তাঁর সহজাত অভিনয় নজর কাড়বেই। পাশাপাশি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন সোহম।

যেখানে ‘হিচকি’ বা ‘তারে জ়মিন পর’ অনেক বেশি করে টুরেট এবং ডিসলেক্সিয়ার প্রতি সচেতনতা বাড়িয়েছে, সেখানে ‘গুগলি’রও একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল। শুধু মাত্র বাংলা পারিবারিক ছবির নিয়মমাফিক বাঁধা ছকে সিনেমা বানাতে গিয়ে তা আর হয়ে উঠল না। তবে উত্তরণের কথা ছেড়ে দিলে, পরিচালক যে সমস্যা তুলে ধরে গতানুগতিকতার বাইরে বেরোতে চেয়েছেন, সেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Movie Review Googly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE