মঞ্চে নচিকেতা।—নিজস্ব চিত্র।
বাবরি মসজিদ ভাঙার পর কয়েক মাস মাত্র কেটেছে। চার দিক প্রায় তছনছ। তেমন একটা সময়ে, এই শহরেরই এক তরুণ হঠাৎ চিৎকার করে গেয়ে উঠেছিলেন, ‘এই বেশ ভাল আছি’। বলতে বাধা নেই বলে শুনিয়েছিলেন, ‘দু’নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে’। মেলানোর চেষ্টা করেছিলেন ‘রাম-ইসলাম’-কে।
তার পর কেটে গিয়েছে ২৫টা বছর। সেই তরুণ আজও মনে মনে তরুণই আছেন। ‘আগুনপাখি’ হয়ে রয়ে গিয়েছেন বাংলা সঙ্গীতজগতে। একই রকম ভাবে। জীবনের প্রথম দিককার সেই সংগ্রাম হয়তো নেই, তবুও নিজেকে তিনি ঘোরতর অনিশ্চিত এক অস্তিত্ব বলে মনে করেন। একইসঙ্গে তিনি গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং পারফর্মার— নচিকেতা। বাজারে তাঁর প্রথম ক্যাসেট প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৯৩-এর অগস্টে। পঁচিশ বছর পরেও একই রকম ভাবে বাংলা সঙ্গীত জগতে তিনি প্রাসঙ্গিক।
শিল্পীর ২৫ বছরের সঙ্গীত জীবন উদ্যাপন করতে শনিবার তাঁর একক একটি অনুষ্ঠান ‘পঁচিশে নচি’র আয়োজন করেছে নচিকেতার ফ্যান ক্লাব— আগুনপাখি। আগুনপাখি কী? প্রশ্নটা শুনে নচিকেতা বললেন, ‘‘আগুনপাখি আমি। আমাকেই ওরা আগুনপাখি বলে। ফিনিক্স থেকে শব্দটা এসেছে। দু’ডানায় আগুন নিয়ে ওড়ে। আসলে এটা একটা বোধ। প্রতি বারই যার পুনরুত্থান হয়।’’ আর সে কারণেই নিজেদের শুধু ফ্যান ক্লাব বলতে নারাজ ‘আগুনপাখি’র সদস্যেরা। তাঁদের তরফে সুনন্দ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আগুনপাখি কোনও ফ্যান ক্লাব নয়। ওটা একটা বোধ। নচিদার জীবনবোধকেই আমরা সংগঠিত করার চেষ্টা করে এগিয়ে চলেছি। নচিদার একক ওই অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে আমরা সারা বছর ধরে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড করি।’’
সঙ্গীত জীবনের পঁচিশ বছর নিয়ে বলতে গিয়ে নচিকেতা মনে করিয়ে দিলেন তার আগের বছরগুলোও। ‘‘সে বছর অনেক কষ্ট করে এইচএমভি থেকে ক্যাসেটটা প্রকাশ পেল শেষমেশ। তার পর আমার নাম সকলে জানতে পারলেন। কিন্তু, তার আগের বছরগুলো! তখনও তো আমি গানেই বাঁচতাম। সংগ্রাম তো তারও আগে থেকে,’’— বলছিলেন তিনি। কথা বলার মাঝে একটু গুনগুনিয়ে উঠলেন অভ্যেসে। তার পরেই গলা ছেড়ে...‘ওই ধর্মের বাঘ এসে, আবার উঠোনে এসে’...দু’কলি গেয়েই বললেন, ‘‘সময়টা বদলায়নি একটুও এই পঁচিশ বছরে। সব একই রকম আছে। চার পাশটা দেখে বুঝতে পারি। কিস্যু পাল্টায়নি।’’
‘‘আগুনপাখি আমি। আমাকেই ওরা আগুনপাখি বলে।’’
নিজেকে তরবারির মতো সরল মনে করেন। মনে করেন, তিনি ঠিক ততটা চালাক নন। বোকাই রয়ে গেলেন। আরও কিছুটা চালাক হলে ভাল হত। বললেন, ‘‘আসলে বোকা হওয়াটাই তো আমার অ্যাম্বিশন ছিল।’’ পঁচিশ বছর আগে যে ‘নীলাঞ্জনা’কে নিয়ে গান বেধে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, আজও সেই চরিত্র আসলে কে, প্রকাশ করেননি। জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘‘কেন বলব? তোমরা কে?’’
দেখুন ভিডিয়ো
তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অনেকেই অনেক প্রশ্ন করেন। তিনি নিজে যদিও সে সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চান না। তবে, নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘‘আমি ভদ্রলোক সম্পর্কে কিছু জানি না। জানতেও চাই না।’’ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দেখা ‘শ্রেষ্ঠ এক জন মানুষ’। পঁচিশ বছরে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ কি তবে পাল্টে গেল? সদর্পে বললেন, ‘‘মোটেও নয়। দর্শন তো একটাই হয়।’’ তার পরেই ফের গুন গুন থেকে জোরালো কণ্ঠে গেয়ে উঠলেন, ‘দু’ চোখে আকাশ, ডানায় আগুন, আরও আরও কত ওড়া বাকি...’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy