দিল্লির আয়ুষ শর্মার সঙ্গে অর্পিতা খানের বিয়ে ইদানীং কালের বলিউডের সবচেয়ে চর্চিত বিষয়। শোনা যাচ্ছে বলিউডের অতীতের সব বিয়েকে ছাপিয়ে গেছে এই বিয়ের বাজেট। চার দিন ধরে চলা বিয়ের থিম, মেনু, ককটেলের ফোয়ারা থেকে ডান্স ফ্লোরের সেলেব ডান্স বলিউডের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল। ভাবছেন তো এ কেবল সেলেবদের পক্ষেই সম্ভব? তা কিন্তু একেবারেই নয়। চাই শুধু সঠিক প্ল্যানিংয়ের বিয়ে। তা হলে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন টক অব দ্য টাউন।
“সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বিয়েকে এখন জীবনের সেরা ‘মেগা ইভেন্ট’ হিসেবে দেখছেন। এর প্রস্তুতি কিন্তু বছরখানেক আগেই শুরু হয়ে যায়,” জানালেন ওয়েডিং প্ল্যানার সোনালি বণিক। আই টি সেক্টরের অদিতির ডিসেম্বরেই এনগেজমেন্ট। তিনি যদিও এনগেজমেন্ট শব্দটা ব্যবহার করতে নারাজ। বললেন, “এখন এনগেজমেন্ট বলে কিছু হয় না। অরিত্র আগামী বছর আমেরিকা থেকে ফিরে এলে আমাদের বিয়ে হবে। অরিত্র আমেরিকা যাওয়ার আগে আমরা বিয়ের দিনটা জানিয়ে ‘ডেট ব্লকিং ডে’ সেলিব্রেট করব।”
ডেট ব্লকিং ডে
আসলে কী এই ডেট ব্লকিং ডে? সোনালি জানালেন, আশীর্বাদ বা এনগেজমেন্টের বদলে এই ডেট ব্লকিং ডে দিয়েই বিয়ের পিঁড়িতে পা রাখছেন আজকের প্রজন্ম।
ওই দিন ছেলে আর মেয়ের একসঙ্গে ভিডিয়ো শ্যুট করে ওই ভিডিয়োর মধ্যেই বিয়ের দিন জানিয়ে সকলকে দিনটা ব্লক করতে বলা হয়। মেল, ফেসবুক আর হোয়াটস্ অ্যাপে পৌঁছে যাবে বিয়ের এই ভিডিয়ো। তবে সোনালি বলছেন ওই দিনই বিয়ের থিমটা ঠিক করে নিতে হবে।
থিমের মেগা বিয়ে
“আসলে বাঙালি, পঞ্জাবি, গুজরাতি বিয়ে বলে এখন আর কিছু হয় না। যে কোনও বিয়েকেই ডেট ব্লকিং, ব্যাচেলরস্ পার্টি (ছেলে-মেয়ে দু’জনের জন্য), সঙ্গীত-হলুদ, মেহেন্দি আর বিয়ে, এই ভাবে ভাগ করে দিই আমরা,” জানালেন ইভেন্ট ম্যানেজার সুষমা খৈতান। তবে সকলকেই যে এই প্রত্যেকটা ইভেন্টের মধ্যে দিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে হবে এমনটাও নয়। কপিরাইটার বীথি ইসলাম যেমন বিয়ের আগে মেহেন্দি রাতটাকেই মনের মতো করে সাজিয়েছিলেন। তিনি বললেন, বিয়ের দিন নানা রকমের টেনশন থাকে, যার বিয়ে, সে ছাড়া সকলেই আনন্দ করে। কিন্তু মেহেন্দির পার্টিটা এমনই ইনফর্মাল পার্টি যেখানে ছেলে ও মেয়ের বাড়ির সকলেই নাচ, গান করে দেদার মজা করতে পারে। কেবল মেহেন্দি পার্টি নয়, রিটেল ম্যানেজার সুনন্দিনী বিয়ের আগে ব্যাচেলার্স পার্টিতে ‘হলিউড রেট্রো’ থিম নিয়ে ওয়াইনের কাউন্টার করে বান্ধবীদের চমকে দিয়েছিলেন।
ট্যাটু অ্যান্ড কামসূত্র
“আমি সব সময় নতুন কিছু করে সকলকে চমকে দিতে ভালবাসি। বিয়ের সময় হাতে, পিঠে, কোমরে আর ডান পায়ে আমি ট্যাটু করিয়েছিলাম। যে সে ট্যটু নয়! কামসূত্রর কিছু ইরোটিক মোটিফ ব্যবহার করে সে দিন আমার শরীরে জেল্লা খুলে গিয়েছিল। লেহেঙ্গা শাড়ি আর খোলা পিঠের চোলিতে দেখে বাড়ির বড়রা অনেকেই মুখ বেঁকিয়েছিলেন। তবে সেদিন কেউই যে আমার থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলেন না, সেটা কনফার্ম ছিল,” চোখ টিপে জানালেন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ফিনান্সের হেড দয়ানি শর্মা। কামসূত্রের বিতর্কে না গিয়ে ঘাড়ে বা পিঠে একটা প্রজাপতি ট্যাটু করা যেতেই পারে।
শপিং অ্যাসিস্টেন্ট
ইতালি থেকে কলকাতায় এসে মেয়ের বিয়ের কেনাকাটা করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলেন অনিন্দিতা বসু।
মেয়ের পঞ্জাবি শ্বশুরবাড়িতে বাঙালি বিয়ের ধরনধারণ বোঝাতে গিয়ে কোথায় কোন জিনিস কিনবেন তা ভেবেই পাচ্ছিলেন না তিনি। শপিং মল? নাকি গড়িয়াহাট? প্রণামীর শাড়ি থেকে বাঙালি বরের লেটেস্ট সাজ কোথায় পাবেন? খুঁজতে খুঁজতেই অনিন্দিতা অনলাইনে বিয়ের বিভিন্ন সাইট থেকে পেয়ে গেলেন শপিং অ্যাসিস্টেন্টের নাম আর ফোন নম্বর। “হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম সেদিন,” জানালেন অনিন্দিতা।
বেনারসি বাই বাই
বিয়ের দিনে কি বেনারসি শাড়ি? জিজ্ঞেস করতেই বিরক্তির সঙ্গে যাদপুরের ছাত্রী নয়না বলেন, “উফ্ফ! ওই গাঁইয়া সাজ এখন চলে নাকি?”
তাই বলে কি বেনারসি আর কাঞ্জিভরমের ঐতিহ্য মুছে যাবে? একেবারেই না।
বিয়ের ঐতিহ্যকে জেন ওয়াইয়ের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে লেহেঙ্গা শাড়ি, কলিদার লেহেঙ্গা, রেডিমেড কোঁচানো ধুতির মতো নানা স্টানিং পোশাক তৈরি করছেন ফ্যাশন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য। বিয়ের দিনে কেউ এখন মা, মাসি বা দিদির মতো নিজেদের দেখতে লাগুক সেটা চান না। শাড়ি পরতেও চান না আজকের প্রজন্ম। শাড়ির ওজন আর কুঁচি দেওয়ার ভয়ে। “আমি তাই রেডিমেড ধুতি আর শাড়ি এমন করে তৈরি করছি যেখানে অন্য কারও সাহায্য ছাড়াই পোশাক পরা যাবে। আর বিয়ের পোশাকে জর্জেট, শিফন, লেস, র সিল্ক ব্যবহার করেছি। যাতে পোশাক ভারী না হয়। বেনারসি ভারী লাগছে? আমি ফ্যাব্রিকটাকে শুধু পল্লুতে রেখে আঁচলটায় জর্জেট ব্যবহার করছি,” বললেন প্রণয়। বিয়ের দিনে বরপক্ষ আর কনেপক্ষকে আলাদা করার জন্য সোনালি বলছেন দুই পক্ষের আলাদা রং ভেবে রাখতে। মেয়ের বাড়ির সকলে যদি মেরুন বা লাল ঘেঁষা শেড পরেন তা হলে ছেলের বাড়ি পিঙ্ক বা মভ পরতে পারেন বলে পরামর্শ দিচ্ছেন সোনালি।
মেক আপে নো মেক আপ
মেক আপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদার বলছেন, “প্ল্যান করে যাঁরা বিয়ে করছেন তাঁদের একগাদা সাজার প্রবণতাই চলে গেছে। যারা কালো, তাঁরা ফাউন্ডেশন লাগিয়ে আর ফর্সা হতে চান না। যাঁর চুল ছোট তিনি জোর করে নকল খোঁপা মাথায় গোঁজেন না। বিয়ের মেক আপ-এ ন্যাচারাল লুকটাই এখন সকলে চায়। বিয়ে মানেই যে চন্দন তাও আজকাল অনেকে মনে করেন না।” মেক আপের দিকে বেশি ঝোঁক না দিয়ে, বিয়ের আগে কোনও বিউটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে ত্বক, চুলের আলাদা যত্ন নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিউটিশিয়ানরা।
গা ভর্তি গয়না নয়
এই শীতেই বিয়ে করছেন ডিজাইনার মেঘনা রায়। গয়না নিয়ে প্রশ্ন করতেই মেঘনা বললেন, “এখন কেউ আর গা ভর্তি গয়না পরে সং সাজে না। আমার বিয়ের থিমটাই রাজস্থানী। রাজস্থানী ঢোলক, টিকলি, একটা গলাভর্তি হার, ঝুমকো, প্রচুর চুড়ি আর মাকড়ি পরব। এগুলোর সব’কটাই রুপোর। সোনার গল্প নেই আমার বিয়েতে।
সাত পাকের সাত টিপস্
• খাবারের মেনু কমিয়ে লাইভ কাউন্টার করুন
• লোক দিয়ে তত্ত্ব না পাঠিয়ে বিয়েবাড়ির একটা কর্নারে তত্ত্ব সাজিয়ে রাখুন
• কার্ড না করে ছোট জুয়েলারি বক্সে চকোলেট ভরে নেমন্তন্ন করুন
• মেহেন্দিতে সাবেকি গান বাজালে, সঙ্গীতে হলি-টলির সুরে ডান্স ফ্লোর মাতান
• রুপোলি জরির বেনারসির সঙ্গে সোনার গয়না চলবে না
• একটা ফ্যামিলি অ্যালবাম। আরেকটা শুধুমাত্র বর-কনের অ্যালবাম রাখুন
• অবশ্যই বিয়ের প্ল্যানিংয়ে ওয়েডিং প্ল্যানারের সাহায্য নিন
মেঘনার শ্বশুরবাড়ি কিছু মনে না করলেও বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় মেয়ের বিয়ে দিতে আসা শুভা চট্টোপাধ্যায় তো চোখ কপালে তুলে বসলেন! বললেন, “বাঙালি ঘরে মেয়েকে সোনা না দিলে লোকে বলবে কী?
একান্ত সোনা নিয়ে আদিখ্যেতা করতেই হলে ম্যারেজ প্ল্যানার অনিতা সিংহ বলছেন বিয়ের থিমটা তা হলে বাঙালি রাখুন। আর গয়নার ডিজাইন মাথায় নিয়ে বিয়ের দিনের শাড়িটা সেই ডিজাইনে করতে বা বুনতে দিন। তবে আজকের জেন ওয়াই স্টেটমেন্ট নেকপিস, বড় হিরে বা চুনির আংটি, আর কেবল বড় নথের চমকে চমকে দিতে চাইছেন। বিয়ের ‘হলুদ’ বা ‘সঙ্গীত’-এর রাতে কনেকে শুধুমাত্র কড়ি আর ফুলের গয়না পরার পরামর্শ দিচ্ছেন জুয়েলারি ডিজাইনার নীতা খৈতান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy