অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
গত ৮ নভেম্বর সন্ধেবেলা। হঠাৎ টিভির পর্দায় নরেন্দ্র মোদী।
তার পরের এক ঘণ্টায় যা বললেন প্রধানমন্ত্রী, সেটা জানতে আর কারও বাকি নেই।
পরের সাত দিন ধরে হাহাকার। ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটের শোকবার্তার সোশ্যাল মিডিয়ায় মজাদার সব ‘মেম’।
পুরোনো টাকা বদলাতে ব্যাঙ্ক খোলার ঘণ্টা তিনেক আগে থেকেই ব্যাঙ্কের সামনে ভিড়। টাকা শেষ হয়ে যাওয়া এটিএম-এর সামনেও লম্বা লাইন।
উপায়? মন্ত্রীমশাইয়ের দাওয়াই ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড, অনলাইন ট্রানজ্যাকশন আর মোবাইল ওয়ালেট।
প্রথম দু’টো নয় বোঝা গেল।
কিন্তু মোবাইল ওয়ালেট? সেটা
আবার কী?
জিনিসটা কী
মোবাইল ওয়ালেট হল এমন এক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ‘ক্যাশ’ ছাড়াই শুধুমাত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা দেওয়া-নেওয়া করতে পারবেন। ‘ডিমনিটাইজেশন’ ঘোষণার পর থেকে মোবাইল ওয়ালেটের চাহিদা এতটাই বেড়ে গেছে যে, এর মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে দু’গুণ।
শুরু করতে
মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করতে প্রথমে একটা অ্যাপ ইন্সটল করতে হবে স্মার্টফোনে। যেমন, পেটিএম, মোবিকিউইক, ফ্রি চার্জ, সাইট্রাস পে। আইফোন হলে অ্যাপস্টোর আর অ্যানড্রয়েড ফোন হলে গুগল প্লে স্টোর থেকে কোনও একটা অ্যাপ ইন্সটল করে নিন। এ বার অ্যাপটা ওপেন করলেই দেখবেন সেখানে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হচ্ছে। নিজের ফোন নম্বর আর একটা পাসওয়ার্ড দিয়ে তৈরি করতে হবে অ্যাকাউন্ট। মনে রাখবেন, যে ফোন ব্যবহার করছেন, সেই নম্বরটাই দিন ইউজার আইডি-তে। কারণ এর পর থেকে টাকা লেনদেনে আপনার মোবাইল নম্বরই হবে আপনার পরিচয়। ব্যস, তৈরি আপনার মোবাইল ওয়ালেট।
টাকা আসবে কোথা থেকে
নিজের ওয়ালেট বা মানিব্যাগে যেমন টাকা রাখেন, ডিজিটাল ওয়ালেটেও তেমনই টাকা রাখতে হবে। আর সে টাকাটা দিতে হবে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। অ্যাপটা খুললেই দেখবেন, উপরে লেখা আছে ‘অ্যাড মানি’। ওখানে ক্লিক করলে একটা মেনু খুলবে। সেখানে কত টাকা ওয়ালেটে যোগ করতে চান সেটা লিখুন। এর পর আপনার ব্যাঙ্ক ডিটেল (অর্থাৎ নেট ব্যাঙ্কিংয়ের আইডি-পাসওয়ার্ড) বা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দিন। ব্যস, যত টাকা ওয়ালেটে রাখতে চাইছিলেন ট্রান্সফার হয়ে যাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে।
কোথায় কাজে লাগবে
•মোবাইলের রিচার্জ
•পোস্টপেড কানেকশনের বিল
•ইলেকট্রিসিটির বিল
•ডিটিএইচ কানেকশনের বিল
•ইনশিওরেন্সের প্রিমিয়াম
•স্কুলের ফি
•সিনেমার টিকিট
•ট্রেন ও প্লেনের টিকিট
•হোটেল বুকিং
•ট্যাক্সির বিল
কোথায় ব্যবহার করতে পারব
মোবাইলের রিচার্জ, পোস্টপেড কানেকশনের বিল মেটানো, ইলেকট্রিসিটি, গ্যাস, ডিটিএইচ কানেকশনের বিল থেকে শুরু করে ইনশিওরেন্সের প্রিমিয়াম, স্কুলের ফি, অটো-ট্যাক্সির ভাড়া বা মুদির দোকানের টাকাও মেটাতে পারবেন মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে! হ্যাঁ, শুধু ১০০-২০০ নয়, ফুচকার ১০-২০ টাকাও দিতে পারবেন তবে ফুচকাওয়ালারও মোবাইল ওয়ালেট থাকতে হবে। সিনেমার টিকিট, ট্রেন বা প্লেনের টিকিট, হোটেল বুকিংয়ের কথা না-ই বা বললাম। যেমন ভাবে
টাকা ‘অ্যাড’ করেছিলেন, টাকা দেওয়ার পদ্ধতিও তেমনই। অ্যাপটা খুললেই দেখবেন ‘অ্যাড মানি’র পাশেই রয়েছে ‘পে অর সেন্ড’ মেনু। এ বার সেখানে ক্লিক করতে হবে। যাকে টাকা পাঠাতে চান তার মোবাইল নম্বর দিয়ে ‘সেন্ড’ বাটনে ক্লিক করলেই টাকা চলে যাবে।
আর দোকানিদের কী সুবিধা হবে? যিনি টাকা পাচ্ছেন, তিনি অ্যাপের ‘সেন্ড টু ব্যাঙ্ক’ অপশনে ক্লিক করলে সেই টাকা চলে যাবে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। তার পরে সেখান থেকে টাকা তুলে নিলেই হল। ওলা বা উবেরের মতো ট্যাক্সি সার্ভিসে আবার যেমন সরাসরিই পেটিএম থেকে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এমন ট্যাক্সি বা অটোতে ড্রাইভারের মোবাইল নম্বরে পাঠালেই হবে। ব্যবস্থাটা একবার পরখ করতে সাউথ সিটি টু রবীন্দ্র সরোবরের অটোয় উঠে দেখতে পারেন। অনেক দিন থেকেই ওঁরা অনেকে পেটিএম-এ টাকা নেন।
সুবিধা কোথায়
অনেকেই ভাবছেন এত সুবিধা যখন দিচ্ছে, নির্ঘাত মোবাইল ওয়ালেট মেনটেন করতে গেলে কিছু খরচা করতে হবে! আজ্ঞে, মোবাইল ওয়ালেটে বাড়তি কোনও টাকা দিতে হবে না। বরং আপনার লাভই হবে। দোকানে যেমন ডিসকাউন্ট পান, এখানেও তেমনই ক্যাশ ব্যাক (যত টাকা দিলেন তার কিছু অংশ আবার ফেরত চলে আসবে আপনার ওয়ালেটে) পাবেন।
এক ঢিলে দুই পাখি আর কী!
তাই, বেশি না ভেবে চটপট কোনও একটা মোবাইল ওয়ালেট ইন্সটল করে নিন।
আর পাড়ার মুদিখানার দোকান বা চায়ের দোকানে একটা ‘কড়ক চা’ চেয়ে বলুন, ‘‘দাদা, আপনার মোবাইল ওয়ালেটের নম্বরটা কত?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy