প্রতিবেদন প্রকাশের পরে পরিচালক অনীক দত্ত, বাংলাদেশের টিএম আহমেদ কায়সর-সহ দুই বাংলার একাধিক ব্যক্তিত্ব তীব্র সমালোচনা করেছেন। সমর্থন জানিয়েছেন সোহিনীকে। তাঁদের বক্তব্য, নিজস্ব মতামত দেওয়ার স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা সবার আছে। তাই সোহিনী বক্তব্য রাখতেই পারেন।
মান্নাকে নিয়ে কথা বললেন অনুপম, রণজয়, শোভন
মান্না দে-র ‘কফি হাউজ’ গান নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু গত শুক্রবার থেকে। গানটি নিয়ে ফেসবুকে পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের স্ত্রী সোহিনীর দাশগুপ্তের মন্তব্য, ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা ভীষণ ‘লুজার সং’! সাতটা ন্যাকার ঘ্যানঘ্যান। নস্টালজিয়ারও একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকা উচিত।’ বিষয়টি সবিস্তার জানতে আনন্দবাজার অনলাইন কথা বলেছিল তাঁর সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সকালে এফএম চ্যানেলে গানটি শুনতে শুনতে এ কথাগুলোই মনে হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে কথাগুলো বলেছি। এগুলোই আমার উপলব্ধি। স্বাধীন মতপ্রকাশের জায়গা থেকেই ফেসবুকে এই মন্তব্য লিখেছি। সুরকার, গীতিকার বা গায়ককে আক্রমণ করতে নয়। পুরোটাই করেছি মজার ছলে!’’
প্রতিবেদন প্রকাশের পরে পরিচালক অনীক দত্ত, বাংলাদেশের টিএম আহমেদ কায়সর-সহ দুই বাংলার একাধিক ব্যক্তিত্ব তীব্র সমালোচনা করেছেন। সমর্থন জানিয়েছেন সোহিনীকে। তাঁদের বক্তব্য, নিজস্ব মতামত দেওয়ার স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা সবার আছে। তাই সোহিনী বক্তব্য রাখতেই পারেন। সেই জায়গা থেকেই অনীকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘স্বাধীন মতামত জানালে কি আগামী দিনে মারধর খেতে হবে?’ পাশাপাশি, সোহিনীর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রয়াত কিংবদন্তি শিল্পীর ভাইপো সুদেব দে-ও। তাঁর কটাক্ষ, ইদানীং পাঁক ঘাঁটার লোক অনেক। ভাল কাজ করে প্রশংসা পাওয়া কষ্টের। তুলনায় নেতিবাচক বক্তব্য দ্রুত প্রচার পায়। সোহিনী সম্ভবত সেই কারণেই তাঁর কাকা এবং ‘কফি হাউস’ গানটিকে বেছেছেন।
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথা, সূপর্ণকান্তি ঘোষের সুরে সমৃদ্ধ, কিংবদন্তি হয়ে ওঠা গানটি সত্যিই ‘ভ্যাদভ্যাদে’? মজার ছলেই যদি আগামী প্রজন্ম কোনও প্রথিতযশা শিল্পীর কাজ নিয়ে এই ধরনের শব্দবন্ধে স্বাধীন মতপ্রকাশ করেন, কতটা গ্রহণীয়? আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল এই প্রজন্মের তিন গীতিকার অনুপম রায়, রণজয় ভট্টাচার্য এবং শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। কী বলছেন তাঁরা?
অনুপমের কথায়, ‘‘ফেসবুকে মন্তব্য করা নিয়ে কোনও কথা বলব না। তবে গানটির গ্রহণযোগ্যতা বা তার জনপ্রিয়তা নিয়ে আমার কোনও দ্বিমত নেই। ছোট থেকে এই গান শুনে বড় হয়েছি। সুপর্ণকান্তি ঘোষ যত গানের সুর দিয়েছেন, এই গানের সুর তার মধ্যে সেরা। গানটি যেন সেই সময়ের কফি হাউসের প্রতিনিধিত্ব করেছে। সুযোগ পেলে নিজেও গুনগুন করি। শ্রদ্ধেয় মান্না দে-র এই গানটি তাঁর গানগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা, সেটি আগেও মনে করতাম। আগামী দিনেও সে কথাই বলব।’’
এই প্রজন্মের প্রতিনিধি শোভন। চর্চিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতেই সরাসরি বিরোধিতা করেছেন সুরকার-শিল্পী। শোভনের মতে, ‘‘কিছু শিল্পী এবং তাঁদের কিছু গান নিয়ে আমাদের বাঙালিদের কারওরই বোধহয় মুখ খোলা উচিত নয়। কারণ, তাঁরা বাংলার গর্ব। তাঁদের সৃষ্টি বাংলার সম্পদ। মান্না দে সে রকমই এক কালজয়ী শিল্পী। এবং তাঁর ‘কফি হাউস’ গানটিও সেই গোত্রের। আমি বা আমরা এখনও বোধহয় সেই জায়গায় পৌঁছোতে পারিনি। তাই এই ধরনের স্পর্ধা দেখানোর কথাও ভাবতে পারি না।’’ শোভনের আরও দাবি, শহরবাসী যে কোনও অনুষ্ঠানে এখনও এই প্রজন্মের শিল্পীর থেকেও এই গানটি শুনতে চান। প্রত্যন্ত গ্রামবাসীরা, যাঁরা হয়তো মান্না দে-র হাতেগোনা গান শুনেছেন, তাঁদের পছন্দের তালিকাতেও এই গান থাকে। এই কারণেই গানটি কালোত্তীর্ণ।
সুরকার-শিল্পী রণজয় ভট্টাচার্যের ‘প্রেমে পড়া বারণ’, বা ‘মনখারাপের জন্মদিন’ এই প্রজন্মের মুখে মুখে ফেরে। তাঁর ‘আবার বছর ২০ পরে’ ছবির গানও শ্রোতাদের ভাল লেগেছে। রণজয় সরাসরি বিরক্ত ফেসবুকের বর্তমান ভূমিকা নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘ছবি পোস্ট, প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি বাক-স্বাধীনতার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এই মাধ্যম। ফলে, সবাই সবার মতো করে বলছেন। কটাক্ষ করছেন। সেই মতামত ছড়িয়েও পড়ছে। অনেক সময়েই খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু বলার নেই।’’ গান নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘শ্রদ্ধেয় শিল্পীর গানটি শুনলেই আমার চোখে সেই সময়ের ‘কফি হাউস’ ভেসে ওঠে। আমার ছোটবেলা ফিরে আসে। সেই সময় কফি হাউসে এ ভাবেই বন্ধুত্ব হত। বন্ধুদের সুখ-দুঃখ নিয়ে এ ভাবেই আলোচনা হত। সুরকার এবং শিল্পী হিসেবে আমার কাছে এই গান তাই আগামী দিনেও কালজয়ী হয়েই থাকবে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy