Advertisement
E-Paper

সুচিত্রা-উত্তমের প্রেম আসলে পর্দার বোঝাপড়া, হালের ট্যাটুসর্বস্ব নয়: রূপসজ্জা শিল্পী কিশোর

“উত্তমকুমারের বিপরীতে সুচিত্রা সেন-সুপ্রিয়া দেবীকে রেখে কেন ছবি হল না? বেণুদির মতে, হয়তো তিন জনকে সামলানোর ভয়ে কোনও পরিচালক এগোননি।”

পর্দার এই প্রেম বাস্তবেও?

পর্দার এই প্রেম বাস্তবেও? ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

কিশোর দাস (কালুদা)

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৫৬
Share
Save

আমি সুপ্রিয়া দেবীর খাস রূপসজ্জা শিল্পী। আর উত্তমকুমারের রূপসজ্জা শিল্পী বসির আহমেদের সহকারী। কোনও দিন সুচিত্রা সেনকে সাজানোর সুযোগ পাইনি। তাই ওঁকে যে খুব বেশি জানি বা দেখেছি— তেমন নয়। কাছে যেতে ভয়ও পেতাম। সারা ক্ষণ ওঁকে গাম্ভীর্যের অদৃশ্য বলয় ঘিরে থাকত। বিশেষ করে ওঁর চোখ দুটো। একবার যাঁর দিকে তাকাতেন তিনি বাক্‌রুদ্ধ। ম্যাডাম হয়তো নিজের চরিত্র নিয়ে ভাবতে ভাবতে তাকিয়েছেন। দেখবেন বলে আদৌ দেখেননি। কিন্তু বিপরীতে থাকা মানুষটি তো বুঝতে পারছেন না সেটা! আমারই হয়েছে এ রকম। দূর থেকে দেখছি, ম্যাডাম শট দিতে সেটে ঢুকছেন। ঢুকতে ঢুকতেই সরাসরি তাকালেন। আমি স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে।

তার মধ্যেই যতটুকু দেখেছি, অপরূপ সুন্দরী। কোনও দিন সে ভাবে তাই সাজতে হয়নি। ওঁর রূপসজ্জা শিল্পী জামাল ভাই। তাঁর উপর নির্দেশ ছিল, খুব ভাল করে যেন ম্যাডামের চোখ দুটো আঁকা হয়। কারণ, সুচিত্রা সেন চোখ দিয়ে অভিনয় করতে বেশি ভালবাসতেন।

তা বলে রাশভারী মানুষটি কি কখনও মজা করতেন না, কারও সঙ্গে কথা বলতেন না?

একেবারেই এমন নয়। খুনসুটিতেও নাকি মাততেন। তবে কোথাও কোনও বাড়াবাড়ি ছিল না। বরং শুটিং না থাকলে ম্যাডাম বইয়ের পাতায় ডুবে যেতে ভালবাসতেন। কোনও দিন তাঁকে গল্পগুজবে দেখা যায়নি। পরনিন্দা-পরচর্চা থেকে অনেক দূরে। আর কাজ ফুরোলেই বাড়ি।

সুচিত্রা সেন ছিলেন একজন পারিবারিক মানুষ। কাজের পরে স্টুডিয়োয় বসে আড্ডা দেওয়া ওঁর ধাতে ছিল না। কিন্তু যত ক্ষণ থাকতেন তত ক্ষণ অভিনয়ে বিভোর। ওঁর খাওয়াও ছিল অল্প। কোনও দিন পেটভরে খেতেন বলে শুনিনি। যাতে শরীর ভারী না হয়ে যায়, শুটিংয়ের সময় ঘুম না পেয়ে যায়— মাথায় থাকত সব সময়। তাই স্বল্পাহারী।

উত্তমকুমারের সঙ্গে ছিল অদ্ভুত বোঝাপড়া। এক একটি দৃশ্য প্রাণবন্ত করতে কী পরিশ্রমটাই না করতেন তাঁরা। একটা শটের পরে একটু বসতেন হয়তো। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেন পরের শট নিয়ে। ওই জন্যই দিনের পর দিন ওঁদের ছবি হিট। দর্শক যেন কাচপোকা! জুটির আকর্ষণে বাড়িতে তিষ্ঠোতে পারতেন না। ছবিমুক্তি পেলে প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমাতেন।

আর তা থেকেই সর্বজনীন একটা কৌতূহল জন্ম নিল, তা হলে কি ওঁদের মধ্যে প্রেম ছিল?

আমার নিজেরও এমন মনে হয়েছে অনেক বার। কিন্তু ওঁদের দেখতে দেখতে বুঝেছি, উত্তম-সুচিত্রার প্রেম মানে পর্দার বোঝাপড়া। পারস্পরিক আদানপ্রদান। ছবির প্রত্যেকটা দৃশ্য প্রাণবন্ত করে তোলা। এখনকার মতো তখন শরীরে ট্যাটু করার ব্যাপার ছিল না। ওঁদেরও তাই ট্যাটুসর্বস্ব প্রেম নয়। এই আন্তরিকতা ওঁরা বাকিদের সঙ্গেও বজায় রাখতেন। যেমন, সুচিত্রা সেন-সুপ্রিয়া দেবীর সম্পর্ক। তখন ছোট পর্দা বলতে দূরদর্শন চ্যানেল। ওখানে ম্যাডামের ছবি দেখার পর নিয়ম করে তাঁকে ফোন করতেন বেণুদি। বলতেন, “রমাদি, তোমার অমুক ছবিটা আবার টিভিতে দেখলাম। কী যে ভাল লাগল...।” এই নিয়ে হালকা আড্ডা হত তাঁদের।

ওঁদের কথোপকথন শুনতে শুনতে কত বার মনে হয়েছে, উত্তমকুমারের বিপরীতে সুচিত্রা সেন-সুপ্রিয়া দেবীকে রেখে কেন ছবি হল না? সে সময়ে বাঘা বাঘা পরিচালকেরা ছিলেন! তাঁদের কারও কি বিষয়টি মনে হয়নি? বেণুদিকেও জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ওঁর উত্তর ছিল, “কী জানি! হয়তো তিন জনকে সামলানোর ভয়ে কোনও পরিচালক এগোননি!”

Suchitra Sen uttamkumar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}