Advertisement
E-Paper

স্বস্তিকার দুরন্ত অভিনয়ে কি জমল হত্যারহস্যের কাহিনি ‘দুর্গাপুর জংশন’?

ছবির প্রেক্ষাপট দুর্গাপুর শহর হলেও, সিনেমার শেষে পরিচালকের তরফ থেকে জানানো হয়— ‘দুর্গাপুর জংশন’ আসলে আমেরিকায় ঘটে যাওয়া এক নির্মম সত্যি ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত।

‘দুর্গাপুর জংশন’ ছবিতে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়,

‘দুর্গাপুর জংশন’ ছবিতে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, ছবি: সংগৃহীত।

অদিতি বসু রায়

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৩৫
Share
Save

পোড়ো বাড়ি সংলগ্ন এক জঙ্গুলে জায়গা। সেখানে ধরে আনা হয়েছে আনওয়ারকে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে করতেই হঠাৎ এনকাউন্টারে এক পুলিস অফিসার সেই সন্দেহভাজনকে গুলি করে মেরে ফেলছে— এখান থেকে ‘দুর্গাপুর জংশন’ নামের ছবির শুরু।

প্রথম দৃশ্যতেই পরিচালক বুঝিয়ে দেন ছবিটি থ্রিলার জ্যঁর-এর। পটভূমি দুর্গাপুর। যা, কলকাতার তুলনায় ছোট জনপদ। সেখানে হঠাৎ করে বয়স্ক পুরুষদের মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এবং তদন্তে উঠে আসে, প্রতিটি মৃত্যু আসলে হত্যা। সেই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে আবার বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধকে জাল করে। নিরীহ ভিটামিনের শিশিতে সায়ানাইড ব্যবহার করে। পুলিশ গোড়ায় কোনও রকম সূত্র না পেলেও, ধীরে ধীরে গল্প জমে উঠতে থাকে। থ্রিলারের কাহিনি জানিয়ে দিলে ছবি দেখার উত্তেজনা কমে যেতে বাধ্য। ফলে সে পথে না যাওয়াই ভাল। তবে ছবির চিত্রনাট্য কিন্তু থ্রিলার বিষয়টিকে খুব একটা মান্য করে বোনা হয়নি। এই বক্তব্যের কারণ হিসেবে প্রথমেই খুনের মোটিভ হিসেবে যে বিষয়টিকে দেখানো হয়েছে, তা একটি মানুষকে সটান সিরিয়াল কিলারে রূপান্তরিত করার পক্ষে যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে ধন্ধ রয়ে যায়। এবং খুনি দিনের পর দিন দুর্গাপুরের মতো জায়গায় পরিবার এবং পরিবারের বাইরের পুরুষদের খুন করে যাবে আর পুলিশ তার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না, এ-ও খুব বিশ্বাসযোগ্য নয়।

‘দুর্গাপুর জংশন’ ছবিতে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

‘দুর্গাপুর জংশন’ ছবিতে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ও দিকে সন্দেহের তালিকায় থাকা লোকজনের সঙ্গে খুনি দুর্গাপুরের মতো ছোট জায়গায় ও ভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াবে কেন? তার কি চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না? সায়ানাইডের মতো নিষিদ্ধ বিষ, যে ভাবে বহুল পরিমাণে জোগাড় করতে পারল অপরাধী, তা-ও খুব বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই সব ধাঁধার উত্তর মেলেনি। তবে যে বিষয়টির উল্লেখ না করলেই নয়, তা হল বর্তমানের বহুল চর্চিত জাল ওষুধের রমরমার ব্যাপারটি। যা এই ছবির অনেকখানি অংশ জুড়ে আছে।

এখানে ছবির প্রেক্ষাপট দুর্গাপুর শহর হলেও, সিনেমার শেষে, পরিচালকের তরফ থেকে জানানো হয়— ‘দুর্গাপুর জংশন’ আসলে আমেরিকায় ঘটে যাওয়া এক নির্মম সত্যি ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। নব্বইয়ের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক স্টেটে ভিটামিনের সঙ্গে সায়ানাইড মিশিয়ে একের পর এক খুন করা হতে থাকে। সেই ঘটনাই ‘দুর্গাপুর জংশন’-এর কাহিনির উৎস। পরিচালক, সেই বিদেশি ঘটনাকে এ দেশের উপযোগী করে নিয়েছেন। কিন্তু প্লটটি দানা বাঁধেনি সে ভাবে। রান্নায় যেমন সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান মজুত থাকলেও নুন কম হলে স্বাদ পানসে হয়ে যায়, তেমনই এই ছবিতে অভিনয়, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, ঝাঁ চকচকে স্ক্রিন প্রেজেন্স, ক্যামেরার ব্যবহার উচ্চমানের হলেও গল্পের চলন বাস্তবসম্মত না হওয়ায় থ্রিলারের টানটান উত্তেজনা ম্লান হয়ে যায়। তবে ছবিটি যে মূল বিষয়টিতে ফোকাস করে, সেটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং জ্বলন্ত সমস্যা। বিশেষ করে যে ‘চাইল্ডহুড ট্রমা’ এবং ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’-এর কথা বলা হয়েছে, তার ভুক্তভোগী আমরা অনেকেই। এর বহু উদাহরণ, প্রাত্যহিক জীবনে আমরা পাই। এই অতি জরুরি বিষয়টিকে পর্দায় থ্রিলার হিসেবে উপস্থাপিত করতে আরও দক্ষতার প্রয়োজন।

‘দুর্গাপুর জংশন’-এর রেটিং চার্ট।

‘দুর্গাপুর জংশন’-এর রেটিং চার্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ছবিতে ঊষসী নামের এক সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। যদিও পরবর্তীতে তার চাকরি যায় এই কারণে যে, শহরের ব্রিজভূষণ নামের এক গণ্যমান্য ব্যক্তির অন্ধকার দিকটি নিয়ে সে খবর লিখেছিল। এখানে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়েও পরিচালক প্রশ্ন তুলেছেন, যা আজকের দিনে অতি প্রাসঙ্গিক। যাই হোক, স্বস্তিকার অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। তীব্র রাগ, অসহায়তা, লাস্য— সব রকম অনুভূতি যথাযথ ভাবে প্রকাশ করেছেন তিনি। পুলিশ অফিসার সৌম্যের চরিত্রে বিক্রম চট্টোপাধ্যায় সারা ক্ষণ চোখ-মুখ শক্ত করে অত্যন্ত রাগত ভঙ্গিতে কথা বলে গেলেন! সম্ভবত পুলিশের চরিত্রের ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ ব্যাপারটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু এতে তাঁকে খানিক আড়ষ্ট এবং একমাত্রিক দেখিয়েছে। ছবিতে বিক্রমের বস, গৌরীর চরিত্রে একাবলী খন্নার খুব বেশি কিছু করার ছিল না। তবু যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন, একাবলী তার সদ্ব্যবহার করেছেন।

প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সাউন্ড ডিজ়াইনার সৃজন দেবের গানের ব্যবহার, ভাল লাগে। বিশেষ করে, রূপম ইসলামের গানের রেশটি ছবির মেজাজের সঙ্গে চমৎকার সঙ্গত করেছে। ভাল লাগে ইমনের ‘সময় জানে, কিসের মায়া’ গানটিও। পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্যের এই ছবি চলতি বাংলা ছায়াছবির ট্রেন্ডের বাইরে কথা বলে। ফলে, না দেখার কোনও কারণ নেই।

Swastika Mukherjee Vikram Chatterjee Durgapur Junction

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।