Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
LGBT Film Festival

বন্ধুর ছক-ভাঙা যৌন ঝোঁক ছবিতে

সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ের পরে ‘তৃতীয় লিঙ্গে’র পরিচয়েই অত্রি ডব্লিউবিসিএস, রেলের পরীক্ষা এবং আইএএসে বসেছেন। হাইকোর্ট, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা লড়ে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হয়েছে অত্রিকে।

এলজিবিটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন। নিজস্ব চিত্র।

এলজিবিটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন। নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩১
Share: Save:

কলকাতার নামী কলেজের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির প্রজেক্টে সহপাঠী ‘পিনো’কে নিয়ে কাজ করতে সমস্যায় পড়েছিলেন নৈঋতা ঠাকুরতা। পিনোর মেয়েলি হাবভাবের জন্য হাসাহাসি করছিলেন ছবির অন্য দুই কুশীলব।

এই অপমানের গ্লানি থেকেই বন্ধুর রোজকার যাপন ক্যামেরাবন্দি করে ছবি তৈরির ইচ্ছেটা দানা বাঁধছিল নৈঋতার মনে। পাঁচ বছর বাদে সেটা সত্যি হয়েছে। বসুশ্রীতে যৌন সংখ্যালঘুদের (এলজিবিটি) চলচ্চিত্র উৎসব ‘ডায়ালগস’-এ ছবিটি দেখানো হবে। ২০০৭ থেকে চালু এই উদ্যোগই দেশের সবথেকে পুরনো ‘এলজিবিটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। চার দিনের উৎসবের সূচনা হয়েছে আজ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। নৈঋতার ছবি ‘হার-স্টোরি’, শনিবার আরও একগুচ্ছ শর্ট ফিল্মের সঙ্গে দেখানো হবে।

নৈঋতা এখন সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ‘চলচ্চিত্র সম্পাদনা’-পাঠ্যক্রমে চূড়ান্ত বছরের ছাত্রী। গত অগস্টে বেঙ্গালুরুতে ‘জেন্ডার বেন্ডার’ বলে লিঙ্গ বৈষম্য বিরোধী সৃষ্টিশীল কাজের একটি উৎসবের জন্য ছবি তৈরির রেস্ত পেয়েছিলেন তিনি। তখনই ঠিক করেন, পিনোকে নিয়ে ছবিটা করতেই হবে! শরীরে পুরুষ, মনে মেয়ে পিনোকে নিয়ে তাঁর মা-বাবার অবশ্য এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। ছবিতে তাঁর ভাল নাম তাই এড়িয়ে গিয়েছেন নৈঋতা। পিনোর সূত্রেই আর এক রূপান্তরকামী নারী অত্রি করের সঙ্গে আলাপ হয় নৈঋতার। যৎসামান্য হাজার ৩০ টাকার বাজেটে ১২ মিনিটের ছবির পরিসরে উঠে এসেছে অত্রি আর পিনোর গল্পই।

কুন্তিঘাটে সরকারি স্কুল শিক্ষক অত্রির গল্প অবশ্য আগেই খবরে এসেছিল। সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ের পরে ‘তৃতীয় লিঙ্গে’র পরিচয়েই অত্রি ডব্লিউবিসিএস, রেলের পরীক্ষা এবং আইএএসে বসেছেন। হাইকোর্ট, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা লড়ে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হয়েছে অত্রিকে। মেয়ে হয়ে ওঠার অস্ত্রোপচারের জন্য নির্দিষ্ট ডাক্তারি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন ২৯ বছরের অত্রি। ট্রেন-বাসে, আত্মীয়স্বজনের কাছে টিটকিরি সয়ে লড়াইয়ের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছেন তিনি।

তাঁর থেকে কয়েক বছরের ছোট পিনো কলেজে নিজেকে সমকামী পুরুষ ভাবতেন। ক্রমশ রূপান্তরকামী বা ট্রান্সজেন্ডার সত্তার সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন। নৈঋতার ছবিতে, চিকন স্বরে ‘পিনো’ বলছেন, ‘‘আমি ফিমেল না-ই বা হলাম, গার্ল তো বটেই।’’ অ্যাকাডেমিক কনটেন্ট লেখক হিসেবে সবে চাকরিতে ঢোকার পরে পিনোরও লক্ষ্য নিজের রোজগারে অস্ত্রোপচারের সংস্থান করা। গড়পড়তা নারী-পুরুষের তুলনায় অনেক না-পাওয়া ভিড় করে আছে পিনো-অত্রির জীবনে। কিন্তু তাতেই থমকে থাকতে রাজি নন তাঁরা। পরিচালক বলছেন, ‘‘দুই রূপান্তরকামী নারীর আত্মমর্যাদার স্বর মেলে ধরেছি ছবিতে। এই দিকটায় আর পাঁচ জনের থেকে তো তাঁরা আলাদা নন!’’ ডায়ালগস-এর অন্যতম আয়োজক অনিন্দ্য হাজরাও বলছিলেন, ‘‘এ বার উৎসবে অনেক ছবিই কিছুটা নিচু তারে বাঁধা। জীবনের ছোট-ছোট হাসি-কান্নার গল্পেই যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার, পছন্দের দিকগুলো উঠে এসেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

LGBT Film Festival Kolkata Gender Issue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE