‘রকি অওর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিতে রণবীর সিংহ-আলিয়া ভট্ট। ছবি: সংগৃহীত।
বলিউড ছবিতে বাঙালি চরিত্র বললে এক ঝলকে কী মনে পড়ে? লাল পাড় সাদা শাড়ি, কপালে টিপ, চোখে গাঢ় কাজল, পরিপাটি করে বাঁধা খোঁপা, নাকে নাকছাবি... আর? দুর্গাপুজো, হাওড়া ব্রিজ, হলুদ ট্যাক্সি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মিষ্টি দই! আর কিছু কি বাদ পড়ে যাচ্ছে? বোধ হয়, না। কারণ, বলিউডে বাঙালি চরিত্র মানেই ‘টোকেনিজ়ম’-এ ঠাসা। আদ্যোপান্ত অবাঙালি টানে ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ আর ‘কলকাতা, কেমন আছো?’-র বাইরে আজ পর্যন্ত বেরোতে পারেনি মূলধারার বাণিজ্যিক বলিউড ছবি। ব্যতিক্রম বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানের ‘লুটেরা’, সুজিত সরকারের ‘পিকু’র মতো কিছু ছবি।
তবে মুম্বইয়ের বিনোদন জগতে নিত্যদিন যত ছবির আনাগোনা, তার মধ্যে এই অন্য ধরনের ছবির সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। নিজের পরবর্তী ছবি ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’-তে বাঙালি নারীচরিত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন পরিচালক-প্রযোজক কর্ণ জোহর। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বললে ভুল হবে অবশ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে ভোটের আলাপ-আলোচনার মধ্যেই বাঙালি বাড়ির অন্দরমহলকে সাজিয়ে ফেলেছেন কর্ণ।
কর্ণের ‘রকি অউর রানি...’ ছবিতে নায়িকা আলিয়া ভট্টের চরিত্রের নাম রানি। সে নাকি বাঙালি। চেনা ছকে হেঁটে রানি শাড়ি পরে, কপালে টিপ, চোখে কাজল। দুর্গাপুজোয় লালের আভায় সাজে, সুন্দর ভাবে খোঁপা বাঁধে। পাশাপাশি, হবু শ্বশুরবাড়ির এক সদস্যকে চ্যালেঞ্জ করে ভাঙা বাংলায় বলে ‘খেলা হবে’। বলিউডের আর পাঁচটা ছবিতে গতে বাঁধা বাঙালি চরিত্র আজ পর্যন্ত এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেনি। বছর দু’য়েক আগে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই শব্দবন্ধের অবতারণা।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন এই মর্মেই, ‘খেলা হবে’। তার পর থেকে বেনজির জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই শব্দবন্ধ। মিছিলের স্লোগান থেকে ডিস্ক জকির রিমিক্স করা গান— ‘খেলা হবে’র তালে পা মিলিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এ বার আগাগোড়া বাংলা সেই শব্দবন্ধ শোনা গেল কর্ণ জোহরের মতো পরিচালকের ছবিতে, আলিয়ার বলা সংলাপে। বলিউড ছবিতে বাঙালি চরিত্রায়ণের বিচার হলে সেই নিরিখে কি তবে অন্য পরিচালকদের থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলেন কর্ণ? তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে।
সিনেমা নাকি আদপে সমাজের দর্পণ। এ প্রবাদ নতুন নয়। আমাদের চারপাশে প্রতি দিন যা ঘটে, তা-ই নাকি আরও একটু ঘষামাজা করে সিনেমার পর্দায় দেখি আমরা। বলিউডের বাণিজ্যিক ছবি দেখে যদিও তা বুঝে ওঠার জো নেই। এই ধরনের ছবিতে গল্পের গরু গাছের মাথায় উঠে ন়ৃত্য করে। কলেজ পড়ুয়ারা নামীদামি বিদেশি ব্র্যান্ডের পোশাক পরে এসে বাস্কেটবল কোর্টে আড্ডা দেয়। আর বাঙালি হলে, দুর্গাপুজোয় লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে এক-দেড়শো ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সারের সঙ্গে ধুনুচি হাতে নাচ করে। কর্ণের ‘রকি অউর রানি...’ ছবিতেও সেই দৃশ্যের দেখা মিলবে, নিশ্চিত।
ট্রেলারে ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে সেই ঝলক। তবে পাশাপাশি দেখা মিলেছে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, টোটা রায়চৌধুরী সমেত বাঙালি অন্দরমহলেরও। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখে চিনতে পারে না রকি তথা রণবীর সিংহ। যেখানে ভোট নিয়ে আলোচনা হলে রকি ভাবে ‘বিগ বস্’-এর ঘরের প্রতিযোগীদের কথা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ যতই বিশ্বকবি হোন না কেন, আর ভোট দেওয়া যতই গোটা দেশের নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার হোক না কেন— কর্ণের ছবির ট্রেলার দেখে মনে হয়, এই দুই বিষয় নিয়ে সচেতনতা রয়েছে কেবলমাত্র বাঙালিরই। বাঙালি নিজে অবশ্য ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সেটাই মনে করে। সেই অহমিকার কারণে যে অবাঙালিদের কাছে মশকরার পাত্র হতে হয়নি বাঙালিকে, তা-ও বলা যায় না। নিজের ছবিতেও কি কর্ণ তবে বাঙালির সেই ‘টোকেনিজ়ম’-এর উপরেই ভরসা রেখেছেন? সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ২৮ জুলাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy