জুটি হিসেবে সমাজমাধ্যমে তাঁরা অত্যন্ত চর্চিত, যাঁদের প্রেম থেকে বিয়ে নিয়ে পরতে পরতে রোমাঞ্চ— কাঞ্চন মল্লিক ও শ্রীময়ী চট্টরাজ। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই বিয়ে সেরেছেন। জনপ্রিয় দম্পতি তো বটেই, এখন তাঁদের আরও একটি পরিচিতি হয়েছে। তাঁরা কৃষভির বাবা-মা। উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন ঈশ্বরে বিশ্বসী, অন্য দিকে শ্রীময়ী ছোটবেলা থেকে আধ্যাত্মিক পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছেন। বিয়ের আগে থেকেই কাঞ্চনের বাড়ির কালীপুজোর ভার নিয়েছিলেন শ্রীময়ী। এর মাঝে সরস্বতীপুজোও করেছেন। বিয়ের পর এটাই তাঁদের প্রথম শিবরাত্রি। আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, নিষ্ঠাভরেই শিবের পুজো করবেন। শ্রীময়ীর কথায়, ‘‘কাঞ্চনই আমার কাছে শিব, কত বছরের তপস্যার ফল।’’
আরও পড়ুন:
কাঞ্চনের সঙ্গে যখন আলাপ তখন শ্রীময়ীর বয়স অনেকটাই কম। কিন্তু সেই সময় থেকেই অভিনেতা শ্রীময়ীকে নিয়ে যেতেন কালীঘাট চত্বরে নকুলেশ্বর ভৈরব মন্দিরে। সেখানেই এত বছর পুজো দিয়েছেন। কিন্তু এ বছর অবশ্য পরিকল্পনা খানিকটা আলাদা। বেনারস থেকে শিব এনেছেন, একেবারে যজ্ঞ করেই প্রতিষ্ঠা করেছেন বাড়িতে। তাই এ বছরটা বাইরের মন্দিরে নয়, বরং বাড়িতেই শিবরাত্রি করবেন। যদিও শিবের পুজো ছোটবেলা থেকেই করেন শ্রীময়ী। সেই কারণেই নাকি শিবের মতো স্বামী পেয়েছেন। শিবঠাকুর বেলপাতায় তুষ্ট। আর শ্রীময়ীর কথায়, ‘‘আমার স্বামীও অল্পেই সন্তুষ্ট। কোনও চাহিদা নেই ওঁর। কখনও মুখ ফুটে কিছু বলে না। সেটাই বরং আমার চিন্তার বিষয়। বড্ড মুখচোরা। আমি বরং খোঁচাই, মনের কথা জানতে চাই।’’ যদিও শিবের মতো স্বামী পাওয়ার উদ্দেশ্যে কখনও যে পুজো করেছেন তেমনটা নয়। শ্রীময়ীর কথায়, ‘‘আসলে ঈশ্বরের কাছে কখনওই আমার চাওয়া-পাওয়া নেই, সেখানে নিজেকে সমর্পণ করি।’’ অবশ্য শিবের মতো বর পাওয়ার ইচ্ছের নেপথ্য কারণ হিসেবে শ্রীময়ী মনে করেন, ‘‘শিব তো মা কালীকে শান্ত করতে নিজে পায়ের তলায় শুয়ে পড়ে। আসলে বাড়িটাও তাই হোম মিনিস্টারের দখলে। বাইরে যত বড় গুন্ডা, নেতা-মন্ত্রী হও না কেন, বাড়িতে সকলেই ঠান্ডা। সেই জন্যই শিবের মতো ঠান্ডা স্বামী দরকার। কাঞ্চনকেও আমার সব কথা শুনতে হয়। আমার হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলায়। ঠিক যেমন আমার জেদের জন্য মহাকুম্ভ গেল, কাঞ্চন তো যেতে চায়নি।’’
কাঞ্চন মুখ বুজে শ্রীময়ী কথা মেনে নিলেও মাঝেমধ্যে অবাধ্য হয়, আক্ষেপ তারকা-পত্নীর। শ্রীময়ী অভিযোগ, অসুস্থ হলে ওষুধ খেতে চান না বিধায়ক। বাড়ির খাবার অন্যদের খাইয়ে দিয়ে নিজে বাইরে মুখরোচক খাবার খেতে পছন্দ করেন। শ্রীময়ীর কথায়, ‘‘আসলে শান্ত, কিন্তু বড্ড আবাধ্য। আবার এককথায় ক্ষমা চেয়ে নিতেও পারে। তার পর আর কি রেগে থাকা যায়!’’
কাঞ্চনের আগে বেশ কিছু ভাল লাগা তৈরি হলেও সকলকেই নাকচ করেছেন শ্রীময়ী। কারণ, প্রায় প্রত্যেকের বাহন ছিল মোটরবাইক। শ্রীময়ীর কথায়, ‘‘মোটরবাইক চাপতে বড্ড ভয় করে। এই মহাকুম্ভে গিয়ে চড়তে হয়েছিল। তাও কাঞ্চনের কাঁধে মাথা দিয়েছিলাম। মোটরবাইকের ভয়েই আগের প্রেমিকদের নাকচ করেছি। তবে কাঞ্চন আমার অনেক তপস্যার ফল। ১৪ বছর ধরে কাঞ্চন বাবার পুজো করছি।’’
তবে কাঞ্চনের যে গুণটা শ্রীময়ীকে আকর্ষণ করে সেটা হল তাঁর সততা। শ্রীময়ীর কথায়, ‘‘যখন কাঞ্চনের সঙ্গে আলাপ, আমার ভাল লাগে ওকে। তখন কাঞ্চন সাফ বলে আমি কিন্তু বিবাহিত, আমার সাজানো বাগান আছে। আমি বিবাহিত কাঞ্চন মল্লিককেই ভালবেসেছিলাম। আর ওঁর জীবন সব পরিস্থিতি একাকিত্বটাও দেখেছি।’’ অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এখন কাঞ্চন-শ্রীময়ী বিবাহিত, সঙ্গে রয়েছে ছোট্ট কৃষভি। মেয়েকে কি শিবপুজোর মাহাত্ম্য বোঝাবেন? শ্রীময়ী অবশ্য কোনও কিছুই মেয়ের উপর চাপিয়ে দেওয়ায় বিশ্বাসী নন। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে ও বাড়িতে পুজোপাঠ দেখে বড় হবে। ওঁর বাবা-মা দু’জনেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী। মানুষ যা দেখে তা-ই শেখে। আমার মা-ও জোর করেননি, আমি নিজে থেকেই শিবের পুজো শুরু করেছিলাম।’’ তাই কৃষভির ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করবেন মিসেস মল্লিক।