টলিপাড়ায় এক দিকে গ্ল্যামারের ছড়াছড়ি। এক পরিচালকের সিনেমার পাশে দাঁড়াছেন অন্য পরিচালক। সম্প্রতি ফেডারশন পরিচালক সংঘাতে জোট বাঁধতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। তবে টলিউড নাকি দল বেঁধে কাজ করে। কানাঘুষোয় নানা গোষ্ঠীর কথাও শোনা যায়। যদিও মুখে সেই বিষয়ে সব পক্ষের কুলুপ। আপাতদৃষ্টিতে একটা বড় পরিবারিক ছাতার তলায় রয়েছে এই টলিপাড়া। কিন্তু সেখানেই কাজের অনুকূল পরিবেশ পেলেন না ‘বিলু রাক্ষস’, ‘পিউপা’, ‘পার্সেল’ হয়ে ‘নীহারিকা’-র মতো ছবির পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য। ফিরে গেলেন ছেড়ে আসা চাকরিজীবনে। খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবে তাঁর ছবি ‘গুড বাই মাউন্টেন’। ছবিটি তৈরি হয়েছিল অবশ্য বছর দুয়েক আগে। এখন আর সে ভাবে ছবি বানাচ্ছেন না। বরং চাকরিতেই সময় দিচ্ছেন। কিন্তু টলিউড ছেড়ে ফিরে যেতে হল তথ্যপ্রযুক্তির চাকরিতে?
আরও পড়ুন:
সিনেমা তাঁর কাছে অক্সিজেনের মতো। সিনেমা এখন বানাচ্ছেন না, কিন্তু পরে বানাবেন না তা নয়। তবে পরিচালক জানান, টলিউডে কাজের অনুকূল পরিবেশ পাননি তিনি। টলিপাড়ার একটা নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র রয়েছে, সেখানে মানাতে পারেননি নিজেও।
সাম্প্রতিক সময়ে টলিপাড়ার পরিচালকদের দেখা গিয়েছে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে। ইন্দ্রাশিসের কথায়, “একমাত্র সৃজিত আমার ছবি নিয়ে লিখেছেন, কথা বলেছেন। অতনুদা লিখেছেন। বাকিরা হয়তো আমার সিনেমা দেখার সময় পাননি।”
কিন্তু সকলের থেকে দূরত্ব রাখেন বলেই কি নাকউঁচু ভাবতে শুরু করেন অনেকে ইন্দ্রাশিসকে? পরিচালকের কথায়, “আমি শুনেছি আমাকে লোকে উন্নাসিক ভাবেন। তবে আমি সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে ভালবাসি। যাঁরা আমার সঙ্গে মিশেছেন, তাঁরা এই কথাটা বলতে পারবে না। আমি একেবারেই তেমন মানুষ নই। বন্ধুত্ব করতে ভালবাসি।”
পরিচালক মনে করেন টলিপাড়ায় অনেকেই তাঁর বন্ধু। তবু তারই মধ্যে তাঁর মনে হয় টলিপাড়া থেকে সেই উষ্ণতা তিনি পাননি। ইন্দ্রাশিস বলেন, “এটা আমারই ব্যর্থতা বলব। আমি হয়তো মিলেমিশে কাজ করতে পারিনি।” খানিক আক্ষেপের সুরেই তিনি জানান, তাঁর ছবিতে বাণিজ্যিক উপাদান না থাকায় প্রযোজক পেতেও বেগ পেতে হয়। যদিও পরিচালক নিজের ছবিতে সচেতন ভাবেই অতিশায্য রাখতে চান না।
ইন্দ্রাশিসের কথায়, “আমি তো পুজোয় ছবিমুক্তির কথা ভাবতেই পারি না। কারণ, হল পাব না। আমাদের মতো পরিচালকেরা সেটা এখানে ভাবতেই পারেন না। তার উপর আমার ছবিতে সেই মশলা থাকে না। আমি চাইও না। কারণ আমি চাই, দর্শক আমার সিনেমাটাই দেখতে আসুক, অন্য কোন উপাদানের টানে নয়।”
হতাশ গলায় ইন্দ্রাশিস দাবি করেন, তিন বছর লড়াই করে তিনি ক্লান্ত। হাল ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তা হলে কি জোট না বাঁধলে টলিপাড়ায় কাজ মেলে না? না কি শুধু টলিপাড়ার পরিচালক হয়ে আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া যায় না! ইন্দ্রাশিসের চাকরিজীবনে প্রত্যাবর্তন বার বার উস্কে দিচ্ছে এই প্রশ্ন। পরিচালক অবশ্য বলেন, “না অনেকেই তো পেরেছেন। সিনেমাই তৈরি করেছেন। তেমন যোগ্য পারিশ্রমিকও পান তাঁরা, স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করছেন।” সে ক্ষেত্রে নিজেকেই দোষী সাব্যস্ত করতে চান তিনি। টলিউডের বাস্তুতন্ত্রে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি, যেখানে তিনি অনেক কাজ করতে পারেন।
এরই মধ্যে আগামী ২০ জুন মুক্তি পাবে পরিচালকের ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত অভিনীত ‘গুড বাই মাউন্টেন’ ছবিটি। তাঁর অন্য ছবির তুলনায় এই ছবিটি অনেকখানি আলাদা। ছবির গান নিয়ে আশাবাদী পরিচালক। তিনিও চান তাঁর সিনেমা বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছে যাকে, তবে সিনেমার ব্যাকরণটা ঠিক রেখে।