Jagdeep's Journey From a Child Extra to An Acclaimed Comedian dgtl
bollywood
অনাথাশ্রমে রান্না করে সংসার চালাতেন মা, ‘শোলে’-র সুরমা ভোপালীর চরিত্র করতেই চাননি জগদীপ!
চিত্রনাট্যকার জুটি সেলিম-জাভেদের কথায় জগদীপ রাজি হন। কারণ সেলিম জাভেদ বলেছিলেন, সুরমা ভোপালীর চরিত্র ছাড়া ‘শোলে’ হবে না। এবং জগদীপ ছাড়া এই চরিত্রে কেউ অভিনয় করতে পারবে না।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ১২:১৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
দেশভাগের পরে ভারতের মুম্বইয়ে এসে পৌঁছয় একরত্তি ছেলেটি। মায়ের হাত ধরে। তার অনেক আগে মৃত্যু হয়েছে বাবার। মনেও নেই তাঁর স্মৃতি। কোনওমতে এক অনাথাশ্রমে কাজ পেয়েছিলেন মা। সেখানে রান্না করে ছেলের দেখভাল করতেন।
০২২২
মাকে দিনভর কঠোর পরিশ্রম করতে দেখে কষ্ট হত ছেলের। স্কুলে যেতে ইচ্ছে করত না। মনে হত, কিছু কাজ করে যদি মায়ের পাশে দাঁড়ানো যায়।
০৩২২
ইশতিয়াকের জন্ম ১৯৩৯-এর ২৯ মার্চ। মায়ের আপত্তি না শুনেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করল সে। স্কুলের খাতায় যদিও ছিল তাঁর পোশাকি নাম, সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ জাফরি। বইপত্র পাশে সরিয়ে ইশতিয়াকের ছোট্ট হাত দুটো ঘুড়ি বানাতে শুরু করল।
০৪২২
বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিলে রাস্তায় সাবান বিক্রি করত। পাশাপাশি শুরু করল আরও নানা রকম ছোটখাটো কাজ। এক দিন রাস্তায় কাজ করার সময়েই ঘুরে গেল জীবনের মোড়।
০৫২২
এক জন এসে জানতে চাইলেন ইশতিয়াক সিনেমায় কাজ করবে কি না! কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরনো ঘরের ছেলে জানতই না সিনেমা জিনিসটা আদপে কী! সে শুধু শুনল সেখানে কাজ করলে তিন টাকা মজুরি পাওয়া যাবে।
০৬২২
তি-ন-টা-কা! পঞ্চাশের দশকে সেটাই ইশতিয়াকের কাছে অনেক। কিছু না বুঝেই মায়ের সঙ্গে সে চলে গেল স্টুডিয়ো। সেখানে গিয়ে দেখে তার মতো অনেক বাচ্চা-ই জড়ো হয়েছে। তাদের বসে থাকতে হবে।
০৭২২
সেই দৃশ্য ছিল বাচ্চাদের নাটক চলছে মঞ্চে। বাকি বাচ্চারা বসে বসে নাটক দেখছে। তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে উর্দুতে সংলাপ বলতে বলা হল। কিন্তু তারা কিছুতেই ক্যামেরার সামনে উর্দু বলতে পারে না।
০৮২২
এ বার ইশতিয়াক শুনল ক্যামেরার সামনে উর্দুতে শেখানো বুলি বললে ছয় টাকা মজুরি মিলবে। শুনে সে যেন হাতে চাঁদ পেল। কিছু না ভেবেই সে সংলাপ বলতে চাইল। সুযোগও পেল। উর্দু বলায় তার কোনও জড়তা ছিল না। প্রথম সুযোগেই বাজিমাত করল।
০৯২২
শুরু হল সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ জাফরির অভিনয়-জীবন। প্রথম সিনেমা, যেখানে দর্শক সেজে বসে থাকতে হয়েছিল, তার নাম ছিল ‘অফসানা’। বি আর চোপড়ার পরিচালনায় ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫১ সালে। সহকারী পরিচালক ছিলেন যশ চোপড়া।
১০২২
এর পর কাজের সুযোগ আসতেই লাগল। ‘লায়লা মজনু’, ‘মুন্না’, ‘আর পার’ ছবিতে অভিনয় করার পরে সুযোগ এল ‘ধোবি ডক্টর’-এ কাজের সুযোগ।
১১২২
ফণী মজুমদারের পরিচালনায় এই ছবিতে নায়ক কিশোরকুমারের শৈশবের অংশে অভিনয় করেছিল ইশতিয়াক। ছবিতে ছিল আর এক জন শিশুশিল্পীও। তার নাম আশা পারেখ।
১২২২
ধোবি ডক্টর’ দেখে ইশতিয়াককে পছন্দ হয় পরিচালক বিমল রায়ের। তাঁর ‘দো বিঘা জমিন’ ছবিতে বুট পালিশওয়ালা লালু ওস্তাদের ভূমিকায় দেখা গেল ইশতিয়াককে। তত দিনে অবশ্য তাঁর ফিল্মি নাম হয়ে গিয়েছে জগদীপ। এই পরিচয়েই পরবর্তী কয়েক দশক তিনি মাতিয়ে রাখেন বলিউডকে।
১৩২২
এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ‘ভাভী’, ‘বরখা’, ‘তিন বহুরানিয়াঁ’, ‘খিলোনা’, ‘সাস ভি কভি বহু থি’, ‘বিদাই’, ‘হম পঞ্ছি এক ডাল কে’,‘শোলে’, ‘এজেন্ট বিনোদ’, ‘ব্রহ্মচারী’, ‘অন্দাজ অপনা অপনা’, ‘চায়না গেট’, ‘বম্বে টু গোয়া’, ‘কহিঁ প্যায়ার না হো যায়ে’— সহ চারশোর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
১৪২২
বলিউডের ভয়ের ছবিতেও পরিচিত মুখ ছিলেন জগদীপ। ‘পুরানা মন্দির’, ‘খুনি পঞ্জা’ ছবিতে ভয়ের আবহে এক চিলতে কমিক রিলিফ ছিল তাঁর অভিনয়। জগদীপের শেষ ছবি ‘গলি গলি চোর হ্যায়’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১২-এ।
১৫২২
অভিনয় করে যা উপার্জন করেছিলেন, তার বড় অংশ জগদীপ খরচ করেছিলেন বাড়ির পিছনে। প্রথমে মুম্বইয়ের ঝুপড়ি থেকে এক কামরার বাড়ি। তার পর মুম্বইয়ে একটি বাংলো কিনেছিলেন তিনি। চেন্নাইয়েও একটি বাংলো ছিল তাঁর। শৈশবের কষ্টের দিনগুলো ভুলতে চেয়েছিলেন তিনি।
১৬২২
বলিউডে এভিএম প্রোডাকশনের অন্যতম মুখ ছিলেন জগদীপ। এই প্রযোজনা সংস্থায় যোগ দেওয়ার পরে এই কৌতুকাভিনেতার আর্থিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হয়।
১৭২২
জগদীপের নাম বললেই দর্শকের মনে সবার আগে আসে ‘শোলে’-র কথা। এই ছবিতে কাঠুরে সুরমা ভোপালীর চরিত্র চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তাঁর অভিনয়ে। অথচ শোনা যায়, এই ছবিতে অভিনয় করতে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না তিনি।
১৮২২
শেষে চিত্রনাট্যকার জুটি সেলিম-জাভেদের কথায় জগদীপ রাজি হন। কারণ সেলিম জাভেদ বলেছিলেন, সুরমা ভোপালীর চরিত্র ছাড়া ‘শোলে’ হবে না। এবং জগদীপ ছাড়া এই চরিত্রে কেউ অভিনয় করতে পারবে না।
১৯২২
জগদীপের প্রথম স্ত্রীর নাম নাসিম বেগম। জগদীপ-নাসিমের একমাত্র ছেলের নাম হুসেন জাফরি। জগদীপের দ্বিতীয় স্ত্রী সুঘরা বেগমের দুই ছেলে। জাভেদ জাফরি এবং নাভেদ জাফরি।
২০২২
জাভেদও তাঁর বাবার মতো কৌতুকাভিনেতা। পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পীও। নাভেদও অভিনেতা এবং টেলিভিশনে পরিচিত মুখ।
২১২২
তিন ছেলে ছাড়াও জগদীপের তিন জন মেয়েও আছেন। প্রথম স্ত্রী নাসিম বেগম এবং জগদীপের দুই মেয়ে— শকিরা সফি এবং সুরাইয়া জাফরি। জগদীপের তৃতীয় স্ত্রী নাজিমার একমাত্র মেয়ের নাম মুসকান।
২২২২
কিশোর কুমার, দিলীপ কুমারের শৈশব থেকে সলমন খানের বাবা। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বড় পর্দায় সব রকম ভূমিকাকে রঙিন করে তুলেছেন জগদীপ। তাঁর নামটাই দর্শকদের মনের কোণে রেখে যায় এক চিলতে হাসির অবসর।