Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ছোট পরদার পিছনের গল্পগুলো জানেন কি?

যাঁরা ছোট পরদার ধারাবাহিকের নিয়মিত দর্শক, তাঁরা কি জানেন পরদার পিছনের গল্পগুলো? মলাট সরাল আনন্দ প্লাসরাইটার যা বলবে, সেই মতো চলাই পরিচালকের কাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ধারাবাহিকের পরিচালক জানালেন, সেট ম্যানেজ করা ছাড়া তাঁর বিশেষ কোনও কাজ থাকে না।

অন্দরমহল

অন্দরমহল

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

টেনিদা যদি কোনও দিন সিরিয়ালের সেটে হাজির হতো, তা হলে অবশ্যই বলত, ‘এক্কেবারে রহস্যের খাসমহল’! ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পরদার পিছনের গল্প নিয়ে অনেক চর্চা হয়। ছোট পরদাও কিন্তু কম আকর্ষক নয়। একটা সমান্তরাল ইন্ডাস্ট্রি বলা যায়। বরং বড় পরদার তুলনায় লক্ষ্মী ঠাকুর ছোট পরদার উপরই বেশি সদয়। হবে না-ই বা কেন? সন্ধেবেলা নিয়মিত মেগা দর্শন যে দর্শকদের আবশ্যিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। পরদা সরিয়ে একবার এখানকার অন্দরমহলটা দেখা যাক...

• আসল কাণ্ডারী কে?

সিনেমার ক্ষেত্রে ছড়িটা যদি পরিচালকের হাতে থাকে, এ ক্ষেত্রে থাকে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নয়তো ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যকারের হাতে। কখনও বা কার্যনির্বাহী প্রযোজকের উপর। তা হলে পরিচালক কী করেন? কেন, স্রেফ নির্দেশ পালন। চ্যানেল এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার যা বলবে, সেই মতো চলাই পরিচালকের কাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ধারাবাহিকের পরিচালক জানালেন, সেট ম্যানেজ করা ছাড়া তাঁর বিশেষ কোনও কাজ থাকে না। বহু সফল ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য স্বীকার করে নিলেন, ছোট পরদায় গল্পের লেখকই আসল। তাঁর কথায়, ‘‘টেলিভিশন রাইটার্স মিডিয়াম। কিন্তু তা বলে বাকি সব তুচ্ছ, এটা ভুল। প্রোডাকশনের সকলের পরিশ্রমেই একটা ধারাবাহিক সফল হতে পারে।’’


আমার দুর্গা

• চরিত্র বাছাই

প্রথমে ঠিক হয়ে যায় লিড চরিত্র কারা করবেন। আর তাতে অবশ্যই মহিলা চরিত্র প্রধান গুরুত্ব পায়। বড় পরদা যদি পুরুষশাসিত হয়, ছোট পরদার সিংহাসনে মহিলারাই। হিন্দি আর বাংলা ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে একটা সূক্ষ্ম তফাত হল, বাংলার লিড নায়িকা ধারাবাহিক শেষ হয়ে গেলে অন্য সিরিয়ালে ফের কেন্দ্রীয় চরিত্র হতে পারেন। হিন্দিতে সেটা প্রায় হয় না বললেই চলে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বাছাই ভিলেনের। সেটা ছেলে-মেয়ে উভয়ই হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও খলনায়িকাদেরই পাল্লা ভারী। তা সে শাশুড়ি কিংবা বরের দুটো বউয়ের একজন কিংবা ত্রিকোণ প্রেম, যা কিছু হতে পারে। দ্বৈত চরিত্রের আবির্ভাবও আশ্চর্যের নয়। কেন্দ্রীয় চরিত্রদের জন্য মোটামুটি একটা চিত্রনাট্য থাকে। তাঁদের গল্পটাও বলতে হয়। কিন্তু বাকি চরিত্রদের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে তা মোটেই স্থির থাকে না। অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় যেমন জানালেন, অনেক সময় বাকি চরিত্রদের থেকে স্রেফ ডেট নিয়ে নেওয়া হয়। বলা হয় অমুক দিনগুলো ফাঁকা রাখতে। চরিত্রের একটা আভাস দেওয়া হয় বড়জোড়। কখনও ফ্লোরে গেলেই চিত্রনাট্য মেলে। অনেক দিন পর ছোট পরদায় ফিরেছেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অন্দরমহল’ ধারাবাহিকের লিড তিনি। বললেন, ‘‘আগের চেয়ে নিয়মকানুন অনেক বদলে গিয়েছে। কিন্তু আমার চরিত্রটা পুরোপুরি শুনেই রাজি হয়েছি।’’ তবে ভবিষ্যতে যে তাঁর চরিত্র অন্য দিকে বাঁক নেবে না, এটা নিশ্চিত করে নির্মাতারাও বলতে পারবেন না।

আরও পড়ুন: চলতি বছর কোন বলিউডি ছবি কেমন ব্যবসা করল? দেখে নিন


জামাই রাজা

• ভাগ্য টিআরপি-র হাতে

টিআরপি-র ওঠা-পড়ার উপর নির্ভর করেই গল্প বাঁক নেয়। লিড চরিত্রদের নির্দিষ্ট গতি থাকলেও পার্শ্বচরিত্রেরা যখন খুশি বদলে যেতে পারে। অনিন্দ্য যেমন বললেন, ‘‘একটি সিরিয়ালে আমার চরিত্রটা প্রথমে ভাল ছিল। তার পর নেগেটিভ হয়। আর পুরোটাই হঠাৎ করে।’’ টিআরপি অনুযায়ী যে কাহিনিতে রদ বদল আসে সেটা বললেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও। ‘‘দর্শকের চাহিদাই আমাদের কাছে আসল। তাঁদের মর্জি অনুযায়ীই আমাদের গল্প বদলাতে হয়। তবে যাঁরা সিরিয়ালের গল্পের মাথামুণ্ডু থাকে না বলে অভিযোগ করেন, তাঁরা বিষয়টা ঠিক মতো জানেন না। আমাদের প্রথমেই একটা গল্প চ্যানেলে জমা দিতে হয়। পরে হয়তো সেখানে বদল আসে। কিন্তু সেটাও দর্শকের পছন্দের উপর ভিত্তি করেই,’’ বললেন লীনা। টিআরপি একটা সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা বিচার করতে পারে। কিন্তু কোন চরিত্র কোন দিকে বাঁক নেবে, তা কী ভাবে টিআরপি নির্ধারণ করে? বিষয়টা বুঝিয়ে বললেন লীনা, ‘‘একটা গ্রাউন্ড রিসার্চ হয়। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আলাদা আর্থ-সামাজিক অবস্থানের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন রিসার্চারেরা। চ্যানেলই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়। সেই ফিডব্যাকের উপর ভিত্তি করেই কিন্তু আমাদের গল্প, চরিত্রের রূপরেখা বদলায়। অনেকে হয়তো ভাবেন, আমরা নিজেদের ইচ্ছে মতো কাউকে ভাল থেকে ভিলেন করে দিচ্ছি। তা কিন্তু নয়।’’


রাধা

• এমনও ঘটে!

লিড চরিত্রেরা যে আগাম চিত্রনাট্য পেয়ে যান তা নয়। ফ্লোরে গিয়েই তা হাতে আসে। অনেক সময় স্রেফ হোয়াটসঅ্যাপে সংলাপ বা দৃশ্যায়ন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শ্যুটিং চলাকালীন ফ্লোরে বসেও সংলাপ লেখা চলে। সেটাই হাতে-নাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় অভিনেতাদের। এ ক্ষেত্রে নির্মাতাদের যুক্তি, ডেলি সোপে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেকটা কাজ সারতে হয়। টেলি-অভিনেতাদের ওয়ার্কিং আওয়ার্সও অবাক করার মতো। ১৭-১৮ ঘণ্টা টানা ফ্লোরে থাকাটা কোনও ব্যাপারই নয়। কোনও অভিনেতা অনুপস্থিত থাকলে, ব়়ডি ডাবল দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার উদাহরণও আছে। হয়তো সেই এপিসোডে ওই অভিনেতাকে স্রেফ পিছনের দিক থেকেই দেখা গেল! টেলি-দুনিয়া সত্যিই আজব জায়গা!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE