Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ফেলুদা বাংলায় কাউকে দেব না, হিন্দিতে হোক

গুগল না সিধু জ্যাঠা? হোয়াটসঅ্যাপ না চিঠি? ২০১৬-য় কতটা বদলাবেন ফেলুদাকে? সন্দীপ রায় দোটানায়। দেখে এলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।আমি নাকি যকের ধনের মতো ফেলুদাকে আটকে রেখেছি। আজ বলি তা হলে, এটা ভুল। বরং আমি চাই খুব শিগগির হিন্দিতে ফেলুদা হোক।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:২২
Share: Save:

ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার অন্য নাম আছে জানেন?

(আকাশ থেকে পড়লেন) আমার নাম?

গোপনে আপনাকে বিশ্বভারতী বলা হয়...

ওহ বুঝেছি! ইদানীং আমার বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে বড় অভিযোগ। আমি নাকি যকের ধনের মতো ফেলুদাকে আটকে রেখেছি। আজ বলি তা হলে, এটা ভুল। বরং আমি চাই খুব শিগগির হিন্দিতে ফেলুদা হোক।

বাঃ এটা তো ভাল খবর। কিন্তু বাংলায় যদি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বা সৃজিত মুখোপাধ্যায় ফেলুদা করতে চান তা হলে তাঁরা কত বছর বাদে করতে পারবেন?

ঠিক কত বছর বলতে পারব না। এই মুহূর্তে অন্য পরিচালক বাংলায় ফেলুদা করতে পারবেন না। বাংলায় ফেলুদা হলে সেটা আমি করব। তবে আরও কিছু দিন পরে ফেলুদার বাংলা স্বত্ব তো ছাড়তে হবে। ফেলুদার সব গল্প এক জীবনে আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। হিন্দির ক্ষেত্রেও কোনও বাঙালি, যাঁর ফেলুদা সম্পর্কে একটা ধারণা আছে সেই রকম কেউ যদি এগিয়ে আসেন তা হলে ফেলুদার প্রতি খুব একটা অবিচার হবে না।

বাংলায় ফেলুদা আর ব্যোমকেশ তো এক হয়ে গেল।

ফেলুদা আপাতত আবীর চট্টোপাধ্যায়ই থাকছেন।

আপনি প্রশ্নটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। সত্যি কথা বলুন তো আপনার মনে হয় না ব্যোমকেশ আর ফেলুদা দুটো গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করায় দর্শকদের আবীরকে ফেলুদা হিসেবে গ্রহণ করতে কোথাও অস্বস্তি হচ্ছে?

ব্যোমকেশ আর ফেলুদা একই অভিনেতা করলে দু ক্ষেত্রেই ব্র্যান্ডের সমস্যা হচ্ছে।

আবীরকে কখনও বারণ করেননি ব্যোমকেশ করতে?

ওই ভাবে কোনও অভিনেতার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।

আপনি যিশু সেনগুপ্তের ব্যোমকেশ দেখেছেন?

দেখা হয়নি। শুনেছি সকলেই যিশুকে ব্যোমকেশ হিসেবে পছন্দ করেছে। আর অভিনয়ও খুব ভাল হয়েছে।

কখনও মনে হয়নি যিশুকে ফেলুদা হিসেবে?

(থামিয়ে দিয়ে) না না আমার এখনও পর্যন্ত আবীর ছাড়া কাউকেই ফেলুদা হিসেবে মনে হচ্ছে না। আমার ফেলুদার বয়স তিরিশ। সে একটু আধটু চারমিনারও খাবে। ইন্টারনেট আর বাঙালিয়ানাটা দুইই থাকবে।

হিন্দিতে ‘কিসসা কাটমাণ্ডু কা’ একটাই ফেলুদা হয়েছিল টিভির জন্য...

ওহ্ দ্যাট ওয়াজ রাবিশ।

রাবিশ কেন?

শশী কপূর ফেলুদা করেছিলেন। ১৯৮৬ তে যখন ‘কিসসা কাঠমাণ্ডু কা’ হল তখন পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ফেলুদা নিয়ে এখনকার মতো মাতামাতি ছিল না। সেই কারণে বাইরের লোকজনের শশী কপূরকে পছন্দ হলেও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ‘কিসসা কাঠমাণ্ডু কা’ মেনে নিতে পারেননি। আমিও সেখানে ফেলুদাকে পাইনি।

বাংলা ছবিতে এখন গোয়েন্দাদের রমরমা। ব্যোমকেশ, শবর, কিরীটী, কাকাবাবু—আপনি নতুন কী ভাবছেন?

কী আর ভাবব? ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’র সময় ফেলুদার হাতে সিগারেট ধরিয়েছিলাম বলে আনন্দবাজারেই তো লেখা হয়েছিল ফেলুদা কি বদলে গেল? দেখুন ফেলুদার টুকটাক বদল নিয়ে বাঙালি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে ভাগ হয়ে গিয়েছে। তবে ফেলুদা প্রকাশনার ৫০ বছরের কথা মাথায় রেখে এ বছর জোড়া ফেলুদা করার ইচ্ছে আছে। তবে কাকাবাবুকে আমি গোয়েন্দা ভাবি না।

কেন?

উনি অ্যাডভেঞ্চারার নায়ক। আর ব্যোমকেশ বা কিরীটী কিন্তু ফেলুদার মতো আট থেকে আশি নয়। ব্যোমকেশকে বোঝার জন্য একটু ম্যাচিওরিটি দরকার।

এ বারেও কি সিধু জ্যাঠা থাকছেন?

কী গল্প, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ‘পেরিগাল রিপিটার’-এর জন্য আজ সিধু জ্যাঠার প্রয়োজন নেই। গুগল আছে কিন্তু টমাস গডউইনের কথা গুগল জানবে না।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায়—এই তিন ফেলুদার মধ্যে আপনার পছন্দের ফেলুদা কে? প্লিজ তিনজনেই ভাল বলে এড়িয়ে যাবেন না।

যিনি ফেলুদাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর কাস্টিংই সবচেয়ে ভাল। আর বেণুর ক্ষেত্রে একটা সুবিধে ছিল বেণু বড় পর্দায় ফেলুদা ছাড়া আর এত বড় গোয়েন্দা চরিত্র করেনি। ও প্রথমে ছিল ‘তেরো পার্বণ’য়ের গোরা, পরে ফেলুদা। তবে এটাও ঠিক যখন প্রযোজক বা বাংলা ছবির বাজারে ফেলুদার চাহিদা বাড়ল তখন বেণুর বয়স হয়ে যাচ্ছে। তাই খুব তাড়াতাড়ি আমাকে অনেকগুলো ফেলুদা করতে হয়েছিল।

কোন দুটো গল্প নিয়ে ফেলুদা হচ্ছে?

এখনও বাছাই চলছে। এই মুহূর্তে বলা যাবে না।

তবুও একটা চিন্তা-ভাবনা তো থাকেই।

বাবার প্রিয় গল্প ছিল ‘সমাদ্দারের চাবি’। ওই গল্পের মধ্যে একটা অদ্ভুত মিউজিকাল জার্নি আছে। গল্পটা আমারও খুব প্রিয়। দেখি....

ভেঙ্কটেশের বাইরে এসে তো ‘মনচোরা’ করলেন। এ বারের ফেলুদা কারা প্রযোজনা করবেন?

(মাথা নিচু করে একটু ভেবে) এ বারের ফেলুদার প্রযোজকের নাম এখনই বলা যাবে না। আমি বলতে চাই না। সময় এলে নিশ্চয়ই জানতে পারবেন। প্লিজ জোর করবেন না।

লালমোহনবাবু খুঁজে পেলেন?

সত্যি বলতে কি লালমোহনবাবুকে খুঁজে পাচ্ছি না। সেই কারণেই গল্প বাছার ক্ষেত্রে ঝামেলা হচ্ছে। পাকাপাকি কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না।

ফেলুদার চাহিদা তো বরাবরই ছিল।

না এটা একেবারেই ভুল। আমি যখন ফেলুদা করার কথা ভাবছি তখন সব প্রযোজকই আমায় বলেছিলেন ‘‘‘সোনার কেল্লা’, ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ হয়ে গিয়েছে। এখন আর এ সবের ডিমান্ড নেই।’’ আমি তো শেষে টিভিতে ফেলুদা করতে শুরু করি। কী আর করতাম? হঠাৎ টিভিতে ফেলুদা দেখে রামোজি রাওকে অনেকে অনুরোধ করেছিলেন ফেলুদা সিনেমা করার জন্য। ভাবুন একজন অবাঙালি প্রযোজক আবার ফেলুদা করার কথা ভাবলেন। ফেলুদাকে না জেনে‌, না পড়ে। সেখান থেকেই শুরু।

‘দেশ’ পত্রিকার পুজো সংখ্যাতেও নাকি সাগরময় ঘোষ প্রথমে ফেলুদা ছাপতেই রাজি হননি?

হ্যাঁ, সেও আর এক ঘটনা। বাবার কাছে পুজো সংখ্যার লেখা চাইলে বাবা সাগরদাকে বলেছিলেন লেখা যদি দিতেই হয় তা হলে ফেলুদাই দেবেন। নয়তো দেবেন না। সাগরদা ছোটদের গোয়েন্দা গল্প হিসেবে দেশে ফেলুদা ছাপতে চাননি। কিন্তু বাবার জেদ...রাজি হলেন। এবং প্রথম ফেলুদা ছাপার পর ‘দেশ’য়ের দফতরে এমন চিঠি এসেছিল যে পরের পুজো সংখ্যায় ফেলুদা ছাড়া ভাবাই যায়নি। আমার মনে আছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাবাকে বলেছিলেন ‘দেশ’য়ের পুজো সংখ্যা পেয়ে উনি সবচেয়ে আগে ফেলুদা পড়ে ফেলতেন।

ডবল ফেলুদা ছাড়া আর কী হচ্ছে ফেলুদার ৫০ বছরে?

ছবি রিলিজের সঙ্গে আমার ফেলুদা নিয়ে একটা এগজিবিশন করার ইচ্ছে আছে। ভাবছি বাবার ফেলুদার প্রথম গল্পের ম্যানস্ক্রিপ্টটা সন্দেশে ফেলুদা সংখ্যায় প্রকাশ করব। ওখানকার কাটাকুটিগুলো আশা করছি ফেলুদার ফ্যানদের ইন্টারেস্টিং লাগবে। এ ছাড়া বোরিয়া মজুমদার ফেলুদার ফ্যান হিসেবে ‘ফেলুদা@ফিফটি’ নামে একটা ইন্টারেস্টিং বই এডিট করেছেন। সৌমিত্রকাকু, বেণু, আবীর লিখেছে তাতে। খুব শিগগির বইটার উদ্বোধন হবে।

দর্শক সন্দীপ রায়ের ফেলুদা যে ভাবে দেখতে ভালবাসেন অন্য ছবি তেমন দেখতে চান না।

এটা কিন্তু ঠিক নয়। লোকে ‘ফটিকচাঁদ’, ‘নিশিযাপন’, ‘চার’, ‘যেখানে ভূতের ভয়’ এমনকী ‘মনচোরা’ও দেখেছেন। আমি শুধু ফেলুদাই করব এটা কিন্তু আমার ওপর একধরনের প্রেশার তৈরি করা। যদিও ফেলুদা করতে আমি খুবই ভালবাসি। আর এই প্রথম মায়ের পরামর্শ ছাড়া ফেলুদা করতে হবে এটা ভেবে খারাপ লাগছে।

অন্য বিষয়গুলি:

sandip ray srobonti bandopadhay interview feluda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE