ছ’টি ছবির ছয় তারকা, কে কোন জায়গায় রয়েছেন?
১২ অক্টোবর, ২০১৮। পুজোর ঠিক আগে একগুচ্ছ পুজোর ছবি উপহার পেয়েছে বাঙালি। কয়েক বছর আগেও পুজো মানেই ছিল নতুন বাংলা ছবিরও উৎসব। সে রেওয়াজই ফিরেছে বলে মনে করেন টলিপাড়ার বড় অংশ। আবার একসঙ্গে ছ’টা বাংলা ছবি রিলিজ করলে, সব ছবি আদৌ সিনেমা হল পাবে তো? ব্যবসা কি মার খাবে? এ সব প্রশ্নও নতুন নয়। মুক্তির পাঁচ দিন পরে কে কোথায় দাঁড়িয়ে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম আমরা। কার ঝুলি পূর্ণ হল, আর কারই বা মনখারাপ?
মালিপ্লেক্স হোক বা সিঙ্গল স্ক্রিন সকলেই এই দৌড়ে এক নম্বরে রাখলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘এক যে ছিল রাজা’কে। মূল ভূমিকায় রয়েছেন যিশু সেনগুপ্ত। তাঁর ফার্স্ট লুক সামনে আসার পরই ছবিটা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল দর্শক মহলে। সেই আগ্রহের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বক্স অফিসে। স্টার থিয়েটারের তরফে রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমার সিনেমা হল যদি বলেন, ‘এক যে ছিল রাজা’ হাউসফুল যাচ্ছে। বাকি সিনেমাগুলোর তুলনায় সেল অনেক বেশি। তার পর ‘ব্যোমকেশ গোত্র’। থার্ড পজিশন ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’। আর ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’ও ভাল করছে। আমরা এই চারটেই দেখাচ্ছি। ফলে বাকিগুলো বলতে পারব না।’’
বক্স অফিসের লড়াইয়ে দ্বিতীয় স্থানে অরিন্দম শীল পরিচালিত ‘ব্যোমকেশ গোত্র’কে নাকি জায়গা দিয়েছেন দর্শক। অরিন্দম শীল রিলিজের আগে দাবি করেছিলেন, এটা তাঁর তৈরি সেরা ব্যোমকেশ। সে কথা মেনে নিচ্ছেন টলি মহলের একটা অংশ। আবির-সোহিনী জুটির চেনা ম্যাজিকের পাশাপাশি কুর্নিশ আদায় করে নিচ্ছেন ‘সত্যকাম’-এর ভূমিকায় অর্জুন চক্রবর্তী। ব্যারাকপুরের ‘অমলা’ সিনেমা হলের পক্ষ থেকে জয়ন্ত দাস দাবি করলেন, ‘‘আমার এখানে তিনটে সিনেমা চলছে। ‘ভিলেন’-এর দু’টো শো। আর একটা করে শো-এ চলছে ‘ব্যোমকেশ গোত্র’ এবং ‘এক যে ছিল রাজা’। ব্যোমকেশ আর রাজারপারফরম্যান্স ভাল। ‘ভিলেন’ও করছে মোটামুটি। নবমী থেকে আরও ভিড় হবে।’’
আরও পড়ুন, দ্বিতীয়বার প্রসেনজিতের স্ত্রী হয়ে কেমন লাগল? অপরাজিতা বললেন...
এই পুজোতেই বাঙালির নস্ট্যালজিয়াকে উস্কে দিতে মুক্তি পেয়েছে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালিত ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’। এই ছবির প্রযোজক সংস্থা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের ‘উইন্ডোজ’। তাঁদের দাবি,এ ছবির প্রচার কম হওয়া সত্ত্বেও বক্স অফিসে রেসপন্স ভাল। শিবপ্রসাদ শেয়ার করলেন, ‘‘এখন কনটেন্ট ইজ দ্য কিঙ্গ। মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি সেটাই প্রমাণ করেছি। যেখানে যা মিথ আছে, আমরা সেটা সব সময় ভাঙার চেষ্টা করেছি। লোকে বলত গরমে ছবি চলে না। আমরা চালিয়েছি। তারকা ছাড়া নাকি ছবি হিট হয় না, আমাদের হয়েছে। তেমনই পুজোতে প্রচার ছাড়া ছবি ব্যবসা করে না মিথ ছিল। এই ছবি সেটা ব্রেক করেছে। ফলে ভবিষ্যতে অন্য প্রযোজকরাও পুজোতে ছবি রিলিজ করাতে ভয় পাবেন না। এটার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্ত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এবং বাংলার সিনে প্রেমী দর্শকদের।’’
শিবপ্রসাদের কথাকেই যেন মান্যতা দিলেন সিনে বিশেষজ্ঞ পঙ্কজ লাডিয়া। তিনি বললেন, ‘‘এটা একটা ছোট ছবি বলেছিলেন অনেকে। তেমন প্রচারও হয়নি। আমরা ভেবেছিলামপরে পারফর্ম করবে। সোমবার মানে পুজোর দিন থেকে ভাল ব্যবসা শুরু হবে। কিন্তু শুক্রবার থেকেই পারফর্ম করতে আরম্ভ করেছে ছবিটা। অর্থাৎ শুধু প্রচারই সব নয়। মানুষ যেটা দেখতে চান, প্রচার না থাকলেও সেটা দেখবেন।’’
আরও পড়ুন, ‘সত্যকাম’-এর মধ্যে কতটা সত্য, আর কতটা কাম? অর্জুন বললেন...
এই দৌড়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’। সপ্তমীর বিকেল পর্যন্ত পাওয়া খবরে বিভিন্ন জেলায় এই ছবির বেশ কয়েকটা শো হাউসফুল যাচ্ছে। রমরম করে চলছে কৌশিক-প্রসেনজিৎ জুটির দ্বিতীয় প্রয়াস। কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সে অন্য ছবির থেকে এর ব্যবধান ১৫-২০ শতাংশ। অর্থাৎ কলকাতা এবং জেলা দু’জায়গার দর্শকের ভালবাসা পাচ্ছে এই ছবি। সেই ইঙ্গিতই দিলেন প্রসেনজিৎও। তিনি বললেন, ‘‘প্রথম লোকে বেরিয়ে যেটা বলছেন, অনেকদিন পর একটা পরিচ্ছন্ন বাংলা ছবি দেখলাম যার ব্যাকগ্রাউন্ড গান। ফ্যামিলি ড্রামা, গান, ইমোশনাল কানেকশনই বোধহয় কিশোর কুমার জুনিয়রের সবচেয়ে বড় জায়গা। মানুষ দেখছেন। সকলেরই খুব ভাল লাগছে। একে তো কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি, অসম্ভব ভাল একটা গল্প, বাঙালিয়ানা, গান আর প্রত্যেকের ভাল অভিনয়ের কথা বলছেন সকলে। ছবিটা আনন্দ করে দেখছেন সকলে। কিন্তু বেরোনোর সময় হয়তো চোখে জল। সকলেই বলছেন এটা একটা ভাল পারিবারিক ছবি।’’
সিনেমা হলে দর্শকদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন কৌশিকও। তাঁর কথায়, ‘‘বাঙালিয়ানায় ভরপুর এ ছবি। বাঙালির মগজাস্ত্র বলুন বা বাঙালির হেঁশেল— সবই রয়েছে এখানে। খুব ভাল ফিডব্যাক। প্রচুর ফোন পেয়েছি দর্শকের। আমরা যখন পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দর্শকদের সঙ্গে দেখা করছি, তখনও তাঁরা জানিয়েছেন ভাল লাগছে। বহু মানুষ দু’বার করেও দেখছেন ছবিটা।’’
আরও একটি বড় ছবি রয়েছে পুজোর লড়াইয়ে। অনিকেত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘হইচই আনলিমিটেড’। অভিনব প্রচারের কৌশল দেখিয়েছেন অভিনেতা তথা এ ছবির প্রযোজক দেব। তার রেজাল্ট কেমন? অনিকেত বললেন, ‘‘জেলার রেজাল্ট আনএক্সপেক্টেড। অসম্ভব ভাল। পাঁশকুড়া, লাভপুর- এ সব জায়গায় আর কেউ নেই। আমি ভেবেছিলাম শহরের মাল্টিপ্লেক্সে হয়তো তেমন ভাল হবে না। সেখানেও তো ভালই করছে। গতকাল রুরাল এবং আর্বান মিলিয়ে আমরা ৩৭টা সিনেমা হল হাউজফুল পেয়েছি।শহরে হয়তো একটু পিছিয়ে। কিন্তু সব মিলিয়ে গ্রেট।’’
আরও পড়ুন, ‘অন্য হিরোরাও তো প্রোডিউসার হয়েছেন, ডিফারেন্স দেখতে পাচ্ছেন?’ বলছেন দেব
এ তো গেল বক্স অফিসের জটিল হিসেব। কিন্তু সিনেপ্রেমী দর্শক ভাল বাংলা ছবি দেখতে চান। সে স্বাদ পূরণ করছে পুজোর সিনেমা।
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
(কোন সিনেমা বক্স অফিস মাত করল, কোন ছবি মুখ থুবড়ে পড়ল - বক্স অফিসের সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy