অনিকেত
পেট গুলিয়ে হাসাতে পারার জন্য তাঁর খ্যাতি ছিল। কিন্তু কোনও পরিচালকই নিজেকে ধরাবাঁধা গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখতে চান না। তাই ‘ছ-এ ছুটি’ বা ‘বাই বাই ব্যাঙ্কক’ করার পর কমেডি ছবি থেকে ছুটি নিয়েছিলেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। স্যাটারিক্যাল ছবি ‘মহাপুরুষ ও কাপুরুষ’-এর পর সিরিয়াস দিকে চলে গিয়েছেন অনিকেত। তাঁর ‘শঙ্কর মুদি’ মুক্তির অপেক্ষায়। ‘কবীর’ও সিরিয়াস ঘরানারই ছবি।
অনিকেত যেমন নিজের জঁর বদলেছেন, তেমনই দেবও। ‘কবীর’-এর প্রযোজক তিনিই। নায়ক তো বটেই। নায়িকার জন্য বাংলা-মুম্বই জুড়ে খোঁজ চলছিল। তবে ঘরের মেয়ে রুক্মিণী থাকতে বেশি কাঠখড়় পোড়াতে হয়নি। তা হলে কি দেবের ছবি মানেই রুক্মিণী নায়িকা? অনিকেত বিষয়টা খোলসা করলেন, ‘‘তা কেন! একটু অবাঙালি মুখ প্রয়োজন ছিল। সে কারণেই মুম্বইয়ের কাউকে ভাবছিলাম। আবার এ দিকে ভাল বাংলা বলতে পারাও জরুরি ছিল। সব মিলিয়ে রুক্মিণীকে একদম যথাযথ মনে হল।’’
দেব-রুক্মিণীকে নিয়ে ওয়র্কশপ করছেন অনিকেত। ‘কবীর’-এর ক্যানভাস বেশ বড়। মুম্বইয়ের জাভেরি বাজার, কলকাতার খিদিরপুরে শ্যুট হবে। আছে নর্থ বেঙ্গলও। এখনও রেকির কাজ চলছে। সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয় নিয়ে হঠাৎ কাজ করলেন যে? ‘‘যে সন্ত্রাসবাদ চলছে তার পিছনেও একটা দর্শন আছে। কবীর একটা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। এখুনি ছবিটা নিয়ে বেশি বলা সম্ভব নয়,’’ ব্যাখ্যা অনিকেতের।
‘কবীর’-এর সিনেম্যাটোগ্রাফার হরেন্দ্র সিংহ ও দেবের সঙ্গে পরিচালক
দেব, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবং অনিকেত মিলে একটা টিম তৈরি হয়েছে। দেবের সঙ্গে কমলেশ্বরের আলাপ অনেক পুরনো। সেখানে অনিকেত যুক্ত হওয়ায় অনেকের ভ্রু কুঁচকেছে। ইন্ডাস্ট্রিতে নানা ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী আছে। অনিকেত অন্তত দেবের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে পড়তেন না। প্রশ্ন উঠেছে, ‘অনিকেত ভিড়ল কী করে?’ জবাবে পরিচালক হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘এটা সংবাদমাধ্যমের গসিপের বিষয়। আমার নয়। দেবের প্রচেষ্টাটা ভাল লাগছে। ও নিজের মতো করে আলাদা কিছু করতে চাইছে।’’
দেবের সঙ্গে আলাপের পিছনেও একটা গল্প আছে। ‘বিনয়-বাদল-দীনেশ’ ছবির পরিচালক কমলেশ্বর। চিত্রনাট্য অনিকেতের। আসলে ‘বিনয়-বাদল-দীনেশ’ অনিকেতের ড্রিম প্রজেক্ট। অনেক দিন ধরে প্রযোজকের সন্ধানে ঘুরছিলেন। এক পরিচিত মারফত দেব সেটা জানতে পারেন। এর পর দু’জনে মিটিং করেন। সেখানেই ঠিক হয় দেব প্রযোজনা করবেন ছবিটি। ‘‘দেব এক কথায় রাজি হয়ে যায়। তার পর জিজ্ঞেস করল, কোনও কমেডি ছবির গল্প মাথায় আছে কি না। একটা চিত্রনাট্য তৈরি ছিল। গল্পটা শোনাতেই রাজি হয়ে গেল। তার পর আমি ওকে ‘কবীর’-এর স্ক্রিপ্ট শোনালাম। এটা করতেও রাজি হয়ে গেল। এ ভাবেই আমি ভিড়়লাম, বুঝলেন তো,’’ দরাজ গলায় হেসে অনিকেতের জবাব।
‘কবীর’-এর শ্যুটিং শেষ হয়ে গেলেই শুরু হবে ‘বিনয়-বাদল-দীনেশ’-এর কাজ। দেব করছেন দীনেশের চরিত্র। পিরিয়ড ফিল্মের ঝক্কি কম নয়। রিসার্চে কোনও রকম ফাঁকি রাখেননি অনিকেত। স্বাধীনতা আন্দোলন, সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি কমেডি ছবিটির পরিকল্পনাও দ্রুত এগোচ্ছে। পরিচালক জানালেন, এটা মাল্টিস্টারার ছবি হতে চলেছে।
অনিকেতের পরিকল্পনা কিন্তু এখানেই থেমে নেই। ব্রাত্য বসু, গৌতম হালদার এবং অঞ্জনা বসুকে নিয়ে একটি শর্ট ফিল্ম করছেন ‘আবছায়া’। এ দিকে আবার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি থ্রিলার প্রজেক্টও করছেন। সেখানেও রয়েছেন অঞ্জনা।
বোঝাই যাচ্ছে, পরিচালকের হাত ভর্তি প্রজেক্ট। সচরাচর একসঙ্গে এত কাজ বাংলা ছবির ক্ষেত্রে দুর্লভই বটে। এর মাঝেই ‘আলেয়া’ ছবিতে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে রয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘অনেক দিন তো হাল্কা হয়ে কাজ করলাম। এখন একটু দৌড়লে ক্ষতি কী!’’
ছবি: সুদীপ্ত চন্দ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy