২২ নভেম্বর ২০২৪
film

ISKABON: ‘এক দশক’ পরেও জঙ্গলমহল নিয়ে বেশ কতকগুলি প্রশ্ন রেখে গেল ‘ইস্কাবন’

এই ছবি ফিরিয়ে নিয়ে যাবে অতীতের ইতিহাসের কোনও এক অধ্যায়ে; কোনও এক মাওবাদী অধ্যুষিত গ্রামীণ জীবনযাত্রায়। 

‘ইস্কাবন’

‘ইস্কাবন’

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২২ ১৮:৩২
Share: Save:

সময়টা ২০০৯। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের প্রায় শেষ অধ্যায়। জঙ্গলমহল অশান্ত। খবরের কাগজে রোজ শিরোনামে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলি। এক দিকে ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস না করে মাও-সে-তুংয়ের আদর্শে সশস্ত্র বিপ্লব যা বাংলার রাজনীতির অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায়। এই সব নিয়েই তৈরি বাংলা ছবি ‘ইস্কাবন’। যে ছবিতে রাজনীতি রয়েছে, রয়েছে ভালবাসার গল্প। যে ছবিতে মানুষকে মানুষ বলার স্বাভাবিক ছন্দ রয়েছে। রয়েছে বিপ্লব, রাষ্ট্র ও জনতার এক আকাশকুসুম দ্বন্দ্ব। মনদীপ সাহার পরিচালনায় ‘ইস্কাবন’ তাই আর পাঁচটা ছবির থেকে আলাদা।

ছবিতে চিত্রনাট্য থেকে পরিচালনা, সমস্ত ক্ষেত্রেই এমন এক বিষয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে, যে বিষয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। সেই কারণেই বিশেষ বাহবা তাঁর প্রাপ্য। তবে ছবির নাম ‘ইস্কাবন’ কেন, তা নিয়ে খানিক ধন্দ রয়েই গিয়েছে।

‘ইস্কাবন’-এর একটি দৃশ্য

‘ইস্কাবন’-এর একটি দৃশ্য

ইস্কাবন'-র শ্যুটিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বেলপাহাড়ি, ধঙ্গিকুসুম, চিরুবোরা, খাগড়ার মতো এলাকা। যে এলাকাগুলিকে এক সময় মাওবাদীদের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করা হত। ছবির কাহিনি অনুযায়ী, নরেনজি এক জাঁদরেল মাওবাদী নেতা। যিনি জঙ্গলমহলে বিপ্লবী এবং নাশকতামূলক কাজকর্ম চালাচ্ছেন। মানুষকে শেখাচ্ছেন ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস’। কিছুতেই শায়েস্তা করতে না পেরে তাঁকে ধরতে পাঠানো হয় আধা সামরিক বাহিনী। নেতৃত্বে লেফটেন্যান্ট নবাগতা সঞ্জু ওরফে কর্নেল শিব মুখোপাধ্যায়। গ্রামে গিয়ে নরেনজির দলেরই এক সদস্য গোলাপী নামে এক মহিলার প্রেমে পড়ে শিব। গোলাপীও সেই প্রেমে সিলমোহর দেয়। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে শিবকে অপহরণ করে দলের আরও এক নেতা সত্য। চলে বন্দুক, বোমার লড়াই। তার পর...? জঙ্গলের মধ্যে পুলিশ-মাওবাদীদের এনকাউন্টারের দৃশ্য থেকে গ্রাম ও জঙ্গলমহলের পরিবেশ, সব কিছুই এক কথায় জমিয়ে তুলেছেন মনদীপ। তার যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে রাধামাধব মণ্ডলের গল্প।

গল্পে সত্যর চরিত্র সৌরভ দাস নিজের মতোই সাবলীল। লেফেটেন্যান্টের ভূমিকায় সঞ্জুর অভিনয় যথেষ্ট নজর কেড়েছে। গোটা গল্পটিকে যেন এক সুরে বেঁধে রেখেছিলেন তিনি। অন্য দিকে গোলাপীর চরিত্রে অনামিকা চক্রবর্তী দশে দশ না পেলেও অন্তত পাঁচ পেয়েছেনই। ছবি অনুযায়ী জঙ্গলমহলের মাওবাদী এলাকায় দীর্ঘ কাল থাকার পরেও তাঁর সংলাপে যথেষ্ট আড়ষ্টতা চোখে পড়েছে। চোখ-মুখে গ্রামের সারল্য থাকলেও কথা বলার সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই উধাও হয়ে গিয়েছে আঞ্চলিক টান। তাঁকে বড় বেশি শহুরে মনে হয়েছে। আবার সঞ্জুর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁর মুখেই ফুটে ওঠা, “মেয়েমানুষ কি? মানুষ ভাবতে শেখো, শুধু মানুষ...” এই সংলাপ যদিও মন ছুঁয়ে যায়। ছবিতে সিপিএম নেতা সন্তু সোরেনের ভূমিকায় খরাজ মুখোপাধ্যায় এক কথায় অনবদ্য। পাশাপাশি দুলাল লাহিড়ী, পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায়, সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রত্যেকেই নিজেদের ভূমিকায় দারুণ।

‘ইস্কাবন’-এর একটি দৃশ্য

‘ইস্কাবন’-এর একটি দৃশ্য

তবে বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাঁক থেকে গিয়েছে। এমন এক সিরিয়াস বিষয়ে গান দেওয়ার কি খুব প্রয়োজন ছিল? যদিও আপাদমস্তক এমন রাজনৈতিক ছবিতে গান যেন কানের আরাম। আবার পুকুরপাড়ে গোলাপী ও শিবের প্রথম দেখার পরে তাঁদের কথোপকথন বড্ড বেশি মেকি।

ছবি জুড়ে যে নায়ক যত বেশিই থাকুক না কেন, প্রথম থেকেই ছবির মুখ্য চরিত্রে কিন্তু একজনই ছিলেন। তিনি হলেন নরেনজি। অনেকের মনেই এবার হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে। এই নরেনজি কি কিষেণজির প্রতিরূপ? যে কিষেণজি ছিলেন জঙ্গলমহলের ত্রাস। ছবিতে কি শেষ পর্যন্ত নরেনজি ধরা পড়ছেন? গল্প অনুযায়ী জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমনে কতটা সফল সরকার? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে অবশ্যই দেখতে যেতে হবে ‘ইস্কাবন’। যে ছবি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে অতীতের ইতিহাসের কোনও এক অধ্যায়; কোনও এক মাওবাদী অধ্যুষিত গ্রামীণ জীবনযাত্রায়। যে ইতিহাস ছবিতে ধরে রেখেছেন সঞ্জু, সৌরভ, মনদীপ, রাধামাধব, অনামিকারা।

অন্য বিষয়গুলি:

film review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy