Advertisement
E-Paper

বাংলা নববর্ষ আদৌ মনে দাগ কাটে? প্রবাসে পয়লা বৈশাখেও কি সুমন, ইন্দ্রনীল, অদ্রিজা একলা?

কেউ কলকাতাতেই বড় হননি। কেউ কর্মসূত্রে প্রবাসী। বাংলা নববর্ষ এঁদের বেল-জুঁই-রজনীগন্ধা, হালখাতা, মিষ্টির বাক্সের কথা মনে করায়?

পয়লা বৈশাখ কেমন কাটে সুমন ঘোষ, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, অদ্রিজা রায়ের?

পয়লা বৈশাখ কেমন কাটে সুমন ঘোষ, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, অদ্রিজা রায়ের? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:১১
Share
Save

ক্যালেন্ডারের পাতায় প্রতি বছর ১৪ অথবা ১৫ এপ্রিল লাল দাগ। তার আগে অন্দরমহলের বাড়তি যত্ন। বাড়িঘর ঝাড়পোঁছ করে হারানো জৌলুস ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। ব্যাগভর্তি চৈত্র সেলের বাজার। নতুন জামার গন্ধ। দিনের দিন সকাল থেকে মন্দিরে পুজোর ডালা হাতে লম্বা লাইন। ব্যবসায়ীদের খাতাপুজো। দোকানে দোকানে হালখাতা, মিষ্টির বাক্স, নরম-ঠান্ডা পানীয়ে চুমুক। ওই দিন বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানানোর দিন।

বৈশাখের প্রথম দিন বেল, জুঁই, রজনীগন্ধায় মাতোয়ারা। কলকাতার অলিতেগলিতে উৎসবের আবহ। বাড়িতে বাড়িতে ভালমন্দ রান্নার খোশবাই। যাঁরা প্রবাসে থাকেন, তাঁদের কাছে পয়লা জানুয়ারি যত প্রাসঙ্গিক, ততটাই কি পয়লা বৈশাখ? পরিচালক সুমন ঘোষ, অভিনেত্রী অদ্রিজা রায়, অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত কর্ম এবং জন্মসূত্রে প্রবাসী।

পয়লা বৈশাখের দিন কী করেন তাঁরা? দিনটা কি তাঁদের কাছে আর পাঁচটি দিনের সমান?

এ বছর কলকাতায় এক টুকরো ‘আমি’ রেখে যাচ্ছি

সুমন ঘোষ। কলকাতায় জন্ম নয় তাঁর। রিষড়ায় বেড়ে উঠেছেন। তবু পয়লা বৈশাখের উন্মাদনা ছিল। “প্রতি বছর ওই দিনের জন্য মা নতুন জামা কিনে দিত। ওর মজাই আলাদা”, বললেন আনন্দবাজার ডট কমকে। আর ছিল পাঁঠার মাংস, ধোঁয়া ওঠা ভাত, বাড়তি একটি কি দুটো পদ। সবটাই মায়ের হাতের রান্না, যেন অমৃতসমান। আর ছিল পাড়ার স্পোর্টস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান। সব মিলিয়ে ‘পুরাতন’ পরিচালকের ছোটবেলায় প্রতি বছর ‘নতুন’ হয়ে ধরা দিত পয়লা বৈশাখ। যদিও রিষড়ায় হালখাতা, মিষ্টির বাক্স দেওয়া-নেওয়ার চল ছিল না।

কাট টু বড়বেলা। শিক্ষকতার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বাইরে তিনি। “ওখানে বাংলা নববর্ষের কোনও ছায়া নেই। দিনটাও তাই যেন বছরের বাকি দিনগুলোর মতোই হয়ে গিয়েছে”, দাবি পরিচালকের। তার পরেই তাঁর মনে পড়েছে, এ বছর তিনি কলকাতায় এক টুকরো ‘আমি’কে রেখে যাচ্ছেন তিনি। কী ভাবে? “বাংলা নববর্ষের আগে মুক্তি পেল ‘পুরাতন’। যে কোনও পরিচালকের কাছে তাঁর ছবি সন্তানসম। তাই মনে হচ্ছে, নিজের ছায়াকেই রেখে যাচ্ছি। শহরবাসী ভালবাসুক, যত্ন করে নাড়াচাড়া করুক। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ুক আমার সন্তানের খ্যাতি।” এ বছর পয়লা বৈশাখে সুমন মাঝ-আকাশে থাকবেন। বর্তমান ঠিকানায় পৌঁছোতে লম্বা উড়াল তাঁর।

এখন কাজের সময়, নববর্ষ পালনের সময় পড়ে থাকবে

এই প্রজন্মের অভিনেত্রী অদ্রিজা রায়। তিন বছর ধরে মুম্বইয়ের বাসিন্দা। হিন্দি ধারাবাহিকের জনপ্রিয় নাম। আরব সাগরের পার থেকেই বললেন, “ছোটবেলায় অবশ্যই এই দিন ঘিরে হুল্লোড় থাকত। মা কী জামা কিনে এনেছে? এই আগ্রহ দিয়ে শুরু। দিনের দিন দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী মন্দিরে প্রতি বছর ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিতে যেতাম। ভালমন্দ খাওয়া, হালখাতা—কিচ্ছু বাদ থাকত না।” ২০২৩-এও সেই স্মৃতি মনে করে কলকাতায় ফিরেছিলেন। একটি দিনের বাহানায় সাত দিন কাটিয়ে গিয়েছিলেন শহরে।

এ বছর? অনেক অভিজ্ঞ হয়ে গিয়েছেন অদ্রিজা। সাফ জবাব দিলেন, “পয়লা বৈশাখ পালনের সময় পড়ে থাকবে। এখন মন দিয়ে কাজ করার সময়, পরিশ্রমের বয়স। এই বয়স পেরিয়ে গেলে পায়ের নীচের জমি শক্ত করব কখন?” অভিনেত্রী আরও জানিয়েছেন, মু্ম্বইয়ে দুর্গাপুজোয় ধুমধাম হলেও পয়লা বৈশাখের উন্মাদনা নেই। তাই মনখারাপের সুযোগও নেই। তা ছাড়া, ভোর থেকে শুটিংয়ের ব্যস্ততাও থাকবে। কাজ শুরুর আগে বাড়ির নীচের মন্দিরে প্রার্থনা জানানোর চেষ্টা করবেন। অদ্রিজার পয়লা বৈশাখ এটাই।

বাঙালি অথচ পয়লা বৈশাখের স্মৃতি নেই...

পরিচালক সুমন ঘোষ তাঁর বাংলা নববর্ষ নিয়ে যখন বলছেন তখন পাশে বসে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। পরিচালকের ‘পুরাতন’ ছবিতে তিনি নায়ক। তাঁর দিকে ফিরতেই দাঁতে নখ কাটতে কাটতে জবাব দিলেন, “জানতাম, আমার পালাও আসবে। কিন্তু বলব কী? আমার এই দিন ঘিরে কোনও স্মৃতি নেই, উন্মাদনাও! বাংলার বাইরে বেড়ে উঠলে যা হয়।” তাই ইন্দ্রনীলের কাছে পয়লা বৈশাখ আর বছরের বাকি দিনে কোনও তফাত নেই। বলতে বলতেই উজ্জ্বল তাঁর মুখ, “এ বছর নতুন ছবি উপলক্ষে নতুন জামা হয়েছে। যার মধ্যে একটি ছবির প্রযোজক-নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের দেওয়া। আর ওঁর বাড়িতে পেট ভরে বাঙালি খাবার খেয়েছি। কলকাতাতেও থাকলাম বেশ কিছু দিন।”

দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতোই এই প্রথম ইন্দ্রনীলের পয়লা বৈশাখ পালন হয়ে গেল। তা-ও আগাম! তাতেই খুশি তিনি। দিনের দিনে যথারীতি তিনি ফের শহরের বাইরে।

সংক্ষেপে
  • পয়লা বৈশাখ মানেই বাঙালির বাঙালিত্বের উদ্‌যাপন। সাদা-লাল শাড়ির ফ্যাশন, বাঙালি খাওয়া-দাওয়া, হালখাতা— এই সবই জাগিয়ে তোলে বাঙালির স্মৃতিমেদুরতাকে।
  • বছর ঘুরে আবার আসছে বাংলার নববর্ষ। ১৪৩২ আরও অনেক নতুন কিছু নিয়ে আসবে। নববর্ষকে কী ভাবে স্বাগত জানাবে বাঙালি? তারই হাল হদিস।
suman ghosh Indraneil Sengupta Adrija Roy Poila Baishakh 1431

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}