সাহসী ফ্রেমে স্বস্তিকা।
বেশ কঠিন এক দৃশ্য। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘শাজাহান রিজেন্সি’র ইউনিট তটস্থ। বিপদের আশঙ্কা আছে এমন একটি শট দিচ্ছেন স্বস্তিকা...সৃজিত উত্তেজিত। বারে বারেই বেশ চিৎকার করে বলছেন, ‘‘ভেবলিকে দেখ। ভেবলি কেয়ারফুল।’’
বন্ধুতা কখনও মরে না। সৃজিত যেমন বলেছিলেন, ‘‘রসায়ন থাকলে সেটা সারাজীবন থেকে যায়। রোজ কথা হলেও থাকবে। পাঁচ বছর কথা না হলেও থাকবে। তবে জীবনে কিছু প্রসেস ইররিভারসিবল হয়। এক বার কিছু ঘটে গেলে সেটা মুছে দেওয়া যায় না। পরিস্থিতির চাপে যাই ‘চির’ থাক সেটা ইররিভারসিবল হয়। আমরা দু’জনেই প্রফেশনাল। যদি ধরেও নিই, ওর আমার দারুণ ঝগড়া তাতেও কিচ্ছু যায় আসে না।’’
ফিরে আসি শুটের দৃশ্যে।
পরিচালকের আসন থেকে স্বস্তিকাকে সতর্ক করার জন্য নানা রকম নির্দেশও দিচ্ছেন সৃজিত...(বিপদের আশঙ্কা কেন? ছবির তাগিদে বলা বারণ। শুধু দেখে যেতে হবে!)
আরও পড়ুন: ‘স্বস্তিকা রেডি ফর ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’?
স্বস্তিকা যদিও একেবারেই ভীত নয়। শট দেওয়ার পরেও যা, আগেও তাই মনে হল তাঁকে। বললেন, ‘‘আমার কোনও কিছুতেই ভয় লাগে না! পরিচালক বললে আমি দশ তলা থেকে ঝাঁপও দিতে পারি।’’ পাশেই ছিলেন তাঁর স্টাইলিস্ট, ডিজাইনার অজপা মুখোপাধ্যায় (স্বস্তিকার বোন)। তিনি বললেন, ‘‘এটা কী বললি! এ বার হেডলাইন হবে, সৃজিত বললে আমি ঝাঁপ দিতেও প্রস্তুত, ব্যস হয়ে গেল!’’
স্বস্তিকা আবার বললেন, ‘‘আরে সিনেমার জন্য, পরিচালক (মানে যে কোনও পরিচালক) বললেই আমি সব রকম ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, এটাই বলেছি!’’
পাঁচ বছর পরে সৃজিতের সঙ্গে কাজ। ঝুঁকি মনে হয়নি?
‘‘আমি সৃজিতের সঙ্গে দেড়খানা ছবিতে কাজ করেছি। ‘মিশর রহস্য’ তো গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স! এই ছবিতে এত ভিড়। দারুণ সব অভিনেতা! আমার চরিত্রের গুরুত্ব বুঝেই অভিনয় করতে রাজি হয়েছি। আর ছোটবেলা থেকেই তো ‘চৌরঙ্গী’ ছবিটার সঙ্গে একটা ভাল লাগা আছে...’’
সুইমিং পুলের দৃশ্য শেষ। (লুকের কথাও বলা বারণ!) এ বার আবার তাঁকে তৈরি হতে হবে। মধ্যরাত অবধি শুট। কাকভোরে জামশেদপুর। আবার পরের দিন কলকাতায়, সোজা শুটে। দম ফেলার সময় নেই।যদিও নিজে তিনি অনেক বার বলেছেন, একটা ছবির কাজ শেষ করে অন্য ছবিতে হাত দেওয়ায় তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ‘‘বছরে ছ’টা ছবি করতেই হবে, নিজের কাছে এমন দাবি নেই আমার।’’
আরও পড়ুন: ফিরতে চান? আপনাদের জন্য সাজেশন দিলেন স্বস্তিকা
ভিন্ন রূপে স্বস্তিকা।
কিন্তু এই ছবিতে সৃজিত, পরম সকলে আছেন। সৃজিত আর আপনি তো ছবি টুইট করে, জন্মজন্মান্তরের কথা বলে সকলকে চমকে দিয়েছেন। এই নিয়ে অজস্র খবর হয়েছে...
এ বার ঘুরে তাকালেন স্বস্তিকা। সোজা কথা বলার পুরনো ভঙ্গি। ‘‘দেখুন, আমি ছবিটা পোস্ট করিনি। সৃজিত করেছে। কেন করেছে তার উত্তর ওর কাছে আছে। আমাকে জুড়বেন না। আর আপনি খবরের কথা বলছেন? সৃজিত তো দূরের ব্যাপার, আমি আমার ভগ্নীপতির সঙ্গে ছবি দিলেও লোকে তাকে আমার নতুন বয়ফ্রেন্ড ভাবে! আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করাই বন্ধ করে দিয়েছি! উফ্ফ্!’’
এত দিন পরে পরিচালক হিসেবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে কী পরিবর্তন দেখলেন?
‘‘ও এখন অনেক শান্ত। আগে সৃজিতের ফ্লোরে লঙ্কাকাণ্ড হত। মনে হত, কোনও দক্ষযজ্ঞ চলছে। এখন দেখছি ওর ধৈর্য বেড়েছে। অযথা চিৎকার করে না। এই ছবির চিত্রনাট্য এক কথায় অসাধারণ। অনেক জটিল সম্পর্কের কথা আছে যা মানুষ দেখতে চাইবে। আবার এই প্রথম আমি আর অনির্বাণ জুটি। সেটাও অন্যরকম অভিজ্ঞতা...।’’ বলে চলেছেন স্বস্তিকা। বোঝা যায় ছবির সঙ্গে তিনি একাত্ম হয়ে আছেন।
এই ছবিতে তিনি ‘চৌরঙ্গী’র করবী। অভিনয় করতে গিয়ে সুপ্রিয়ার কথা মাথায় রেখেছিলেন?
‘‘একেবারেই না। ওই হ্যাংওভার আমার কোনও দিন নেই। মানে কারওর মতো করতে হবে বললে আমি যত ভাল ছবি হোক, করতে পারব না। এমনকি ঋতুদার সঙ্গে যেটুকু কাজ করেছি তখনও বলেছিলাম, আমি করছি এ ভাবে, ভুল হলে তুমি বলে দিও।’’ তাঁর অভিনয়ের জায়গাটা বুঝিয়ে দিলেন স্বস্তিকা।
আরও পড়ুন: সমাজের সেন্সরশিপ নিয়ে মতামত দিতে স্তনের ছবি শেয়ার করলেন স্বস্তিকা
বাঙালি সাজে স্বস্তিকা।
এ বার মমতাশংকরের সঙ্গে টক্কর দিতে নিজেকে প্রস্তুত করছেন তিনি। সেই মিসেস পাকড়াশি আর করবীর লড়াই?
‘‘প্রেক্ষাপট তো বদলে গেছে। তবে ‘জাতিস্মর’-এ মমতাশংকর আমার মা ছিলেন। এ বার সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজে! এটা দর্শকদের পছন্দ হবে।’’
স্বস্তিকাও কি শান্ত হয়ে গেলেন? ধীরস্থির উত্তর যেন...
‘‘নাহ্, আসলে সকাল থেকে বিষণ্ণ দৃশ্য করতে করতে ওর মাঝেই থেকে গেছি...’’
সৃজিতকে বলে সুইসোটেলে নিজের রুমে গেলেন স্বস্তিকা।এক বার শুধু বললেন, ‘‘আপনি আমাদের একসঙ্গে ছবি দেওয়ার কথা বলছিলেন না? সৃজিত খুব এক্সাইটেড এই ছবিতে আমি কাজ করছি বলে। তাই বোধহয় ও দু’জনের ছবি দিয়ে টুইট করেছিল।’’
তাঁর শরীরের বৃষ্টিগন্ধ ছড়িয়ে, শ্রাবণের গোধূলি আলোয় যেন মিলিয়ে গেলেন স্বস্তিকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy