ঋত্বিক-রাহুল
তাঁদের বন্ধুত্ব পুরনো। সেরা নতুন প্রতিভার মনোনয়নও পেয়েছিলেন একই বছরে। আবার একটি চ্যানেলের পার্টিতে এক জন অপরকে বলেছিলেন, ‘‘বেশি ড্রিঙ্ক করিস না।’’ তাঁরা ঋত্বিক চক্রবর্তী ও রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের নতুন ছবি ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’-য় শ্রীকান্তের চরিত্রে ঋত্বিক ও হুকুমচাঁদের ভূমিকায় রাহুল। দক্ষিণ কলকাতায় পরিচালকের ফ্ল্যাটেই আনন্দ প্লাসের সঙ্গে আড্ডা দিতে বসেছিলেন দু’জনে। এক জনের পরনে সাদা পাঞ্জাবি, অন্য জন আবার কালো টি-শার্টে। ঋত্বিকের পুরু গোঁফের রহস্য জিজ্ঞেস করায় বললেন, ‘‘আগামী সব ছবিতে আমার চরিত্রের গোঁফ রয়েছে।’’ আর সাক্ষাৎকারের আগে ও পরে রাহুলের প্রিয় সঙ্গী সিগারেট। দিনে নাকি ২০টা!
চিত্রনাট্যই রসদ
ঋত্বিকের কথায়, ‘‘শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্তের সঙ্গে এই শ্রীকান্তের ছোটবেলার অনেক মিল। তবে একটা বড়সড় অমিল রয়েছে। ফলে ব্যক্তিত্বটাই বদলে গিয়েছে।’’ রাহুলের কথায়, ‘‘এক জন ক্ষমতাবান মানুষ যেমন হতে চায়, হুকুমচাঁদও তেমনই। শ্রীকান্তের জীবনে রাজলক্ষ্মীর আসার পথ তৈরি করে দেয় সে।’’ রাহুলের চরিত্রটি পরিচালকের কল্পনাপ্রসূত। তবে শ্রীকান্তের চরিত্রে কাজ করে তুলনার চাপ কী ভাবে সামলাবেন ঋত্বিক? ‘‘কিছু মানুষ তুলনা করে শান্তি পায়, আমি তা নিয়ে ভাবি না,’’ জবাব তাঁর।
ক্লাসিক্যাল বাঙালিয়ানা
পিরিয়ড ছবিতে পরিচালকদের প্রথম পছন্দ কি তাঁরা? রাহুলের কথায়, ‘‘আমরা যারা অ্যানালগ ও ডিজিটাল, দুটো পৃথিবীই দেখেছি, তাদের পিরিয়ড ছবি করা সহজ। কারণ প্রি-মোবাইল যুগের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ আমাদের মধ্যে রয়েছে।’’ সেই সূত্রে ঋত্বিক বললেন, ‘‘বিষয়টা তেমন নয়। ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘রসগোল্লা’ পিরিয়ড ছবি। সেখানে আমরা নেই। তবে আমাদের চেহারায় ক্লাসিক্যাল বাঙালিয়ানা রয়েছে, সেটা কারণ হতে পারে।’’
‘মাস’-এরই তো হতে চাই...
ঋত্বিক কি ক্লাসের না মাসের? বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললেন, ‘‘মাসেরই তো হতে চাই। কবীর সুমনের একটা গান আছে, ‘যতই গান গাই, গোপনে হতে চাই, ব্র্যাকেটে বম্বে... ’ (বলতে বলতেই হাসি) শুধু ক্লাসের হয়ে থাকতে চাই না। আবার পুরোপুরি যে আমজনতার, সেটাও বলব না।’’ রাহুলের কেরিয়ার শুরু হয়েছিল জমাটি বাণিজ্যিক ছবি দিয়ে। বললেন, ‘‘আমার অনেক প্রতিভাবান বন্ধু, যারা এক কালে ভাল গান গাইত, এখন সফ্টওয়্যার প্রফেশনাল। অভিনয় করতে চাইতাম, তা-ই হয়েছি। এটাই এত আনন্দের যে, ক্লাস-মাস নিয়ে ভাবি না।’’
আগ্রহ শেষ হলে আমি শেষ...
ঋত্বিকের ব্যক্তিজীবন নিয়ে গুজব-রটনা নেই। ইন্ডাস্ট্রিতে থেকেও কী করে তা সম্ভব? রাহুলের দিকে কেমন প্রশ্ন ধেয়ে আসতে পারে আন্দাজ করে আগেই ঋত্বিককে ঠেললেন তিনি। হাসতে হাসতে ঋত্বিক বললেন, ‘‘যখন অভিনেতা হইনি, তখনকারই মন্ত্র, ব্যক্তিজীবন কাউকে জানাব না। আমার ব্যক্তিজীবন এতটাও আকর্ষক নয় যে, তা দর্শককে আনন্দ দিতে পারবে।’’
অন্য দিকে রাহুলের বিবাহ-বিচ্ছেদ, প্রেমের রটনা দীর্ঘ দিন ছিল শিরোনামে। এতে কি ইমেজে ধাক্কা লাগে? রাহুল বললেন, ‘‘আমাকে নিয়ে আগ্রহ আছে বলেই এই সাক্ষাৎকার হচ্ছে। মানুষের আগ্রহ শেষ হয়ে গেলে আমি শেষ। বিয়ের খবর যেমন হয়েছে, বিয়ে ভাঙারও খবর হয়েছে। ঝামেলা হয়েছিল, তা নিয়ে নানা লোকের নানা মত। কিন্তু ঠিক আছে... আমি ইমেজনির্ভর নই। এখন যদি মিটুর মতো আন্দোলনে আমার নাম জড়ায়, সেটা নিয়ে চিন্তিত হব। কিন্তু বিয়ে ভাঙা ইমেজে ধাক্কা দিয়েছে বলে মনে করি না।’’
তুই অজিত ছাড়, আমি করব!
অরিন্দম শীলের ‘ব্যোমকেশ গোত্র’য় অজিতের ভূমিকায় কাজ করেছেন রাহুল। এই চরিত্রটি আগে করতেন ঋত্বিক। কথাপ্রসঙ্গে রাহুল বলছিলেন, ‘‘ঋত্বিকের বদলে যদি আমাকে ভাবা হয়, তার মানে আমি রেসে ভাল দৌড়চ্ছি।’’
সমসাময়িকদের মধ্যে শুধু মাত্র ঋত্বিককে তাঁর চেয়ে এগিয়ে রাখলেন রাহুল। শোনালেন অজিত বদলের নেপথ্যের অন্য গল্পও। ‘‘আমরা ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’র শুটিং করছিলাম। এক রাতে ওকে বলেছিলাম, ‘তুই অজিত ছাড়, আমি করব।’ তত দিনে অবশ্য ঋত্বিকও করবে না বলে ঠিক করে নিয়েছে। তবে আমি তাতে আরও আগুন দিয়েছিলাম। অরিন্দমদা (শীল) এই কথাবার্তার কিছুই জানতেন না।’’
আজ একটা লোক সেজেছিলাম...
পর্দায় বাবাকে দেখে পান্ত (ঋত্বিকের ছেলে) ও সহজ (রাহুলের ছেলে) কী বলে? ঋত্বিক বললেন, ‘‘মোবাইল আর পর্দার ফারাক ছেলে এখনও বোঝে না। তবে বাড়ি ফিরলে জিজ্ঞেস করে, ‘আজ কী সেজেছিলে?’ বলি, একটা লোক সেজেছিলাম। পরের দিন ছেলে আবার বলে, ‘আগের দিনেরটাই সেজেছিলে?’ আমি বলি, না, আজ অন্য আর একটা লোক সেজেছিলাম।’’ রাহুলের কথায়, ‘‘কোনও ভাবে সহজ ‘বাতাসে গুনগুন’ গানটা দেখেছিল, যেখানে ওর বাবা-মা অন্তরঙ্গ ভাবে নাচ করছিল। তা দেখে অবশ্য কোনও প্রশ্ন করেনি।’’
হাসির রোল উঠল ঘর জুড়ে!
ছবি: সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy