অভিনেত্রী নুসরত ফারিয়া জন্মসূত্রে বাংলাদেশের মানুষ হলেও, এ পার বাংলার মানুষের মনে মজবুত বাসা তৈরি করে নিয়েছেন অভিনয়-দক্ষতায়। ছবির পাশাপাশি এ বার সুরেও মাতিয়ে দেবেন দর্শককে। আজই মুক্তি পাবে তাঁর সিঙ্গল মিউজ়িক ভিডিয়ো ‘পটাকা’। প্রেমের ভাঙন থেকে কী করে মেয়েরা বেরিয়ে আসবে তাই নিয়েই এই মিউজ়িক ভিডিয়োটি। এই গান থেকে যা আয় হবে, তা খরচ করা হবে বাচ্চাদের পড়াশোনায়।
নুসরত পড়াশোনার ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস। ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে পড়াশোনা নিয়ে খুব চাপ ছিল। নুসরতের কথায়, ‘‘ছোটবেলা কেটেছে আর্মি ক্যান্টনমেন্টে। শুধু পড়াশোনাই করেছি। স্কুলে যেতাম, পড়াশোনা করে বাসায় ফিরে আসতাম। সে রকম বন্ধু আমার ছিল না। বাবা সারাক্ষণ লেখাপড়ায় জোর দিতেন। তাই খুব পড়েছি। রেজ়াল্টও ভাল ছিল। আর আমি ন্যাশনাল ডিবেটে চ্যাম্পিয়নও হয়েছি।’’ বাণিজ্য নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে, এখন আবার আইন নিয়ে পড়ছেন নুসরত।
এত পড়াশোনার মাঝে হঠাৎ অভিনয় জগতে আসার পথ কতটা মসৃণ ছিল? নুসরত বললেন, ‘‘একেবারেই মসৃণ ছিল না। বাড়িতে সকলেই খুব রাগ করেছিলেন। এক-দেড় বছর আমার সঙ্গে কেউ কথা বলেনি পর্যন্ত! পরে আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক হয়েছে।’’
তবে পড়াশোনাটা তিনি চালিয়ে যেতে চান। তার পাশাপাশি অভিনয় আর গানও। যদিও তিনি গান শেখেননি। তা হলে হঠাৎ গানের প্রতি এত আগ্রহ? নুসরত বললেন, ‘‘গান না শিখলেও স্কুলের অনুষ্ঠানে গান, নাচ, বিতর্ক সব কিছুতেই অংশগ্রহণ করতাম। আমার ক্লাসিক্যাল মিউজ়িক খুব ভাল লাগে। নজরুল সঙ্গীতও আমার খুব পছন্দের। গান আমাকে সব সময়েই অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তাই ঠিক করেছিলাম গান নিয়ে বড় আকারে কিছু করব। এত দিনে সেই সুযোগ পেলাম।’’
টলিউডে পর পর এত কাজ করলেও বাংলাদেশই তাঁর কাছে আসল ঠিকানা। তাই টলিউডে কাজ করেও বার বার বাসায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করে তাঁর। ‘‘কাজের ক্ষেত্রে কোনও সীমারেখা থাকা উচিত নয়। তাই আমি দুই বাংলাতেই কাজ করব। কিন্তু থাকব বাংলাদেশে। এখানে উড়ে উড়ে এসে কাজ করে পালিয়ে যাব,’’ মিষ্টি হেসে স্পষ্ট জবাব নুসরতের।
যে দেশের প্রতি নায়িকার এত টান, সেই দেশের মানুষের কাছে অনেক সমালোচিতও হয়েছেন তিনি। কাজের খাতিরে অভিনয় জগতে যে রকম পোশাক পরতে হয় বা গানের কথায় বিশেষ শব্দপ্রয়োগ নিয়েও সমালোচনা হয়, তখনও কি রাগ হয়নি? নুসরতের কথায়, ‘‘সমালোচনার সঙ্গে আমি অভ্যস্ত। কিন্তু আমার ভাগ্য ভাল। দর্শক আমাকে এত ভালবাসেন যে, আমি যা-ই করি, তাঁরা সেটা ব্যক্তিগত ভাবে নিয়ে নেন। কারও ব্যক্তিগত আবেগে আঘাত করে থাকলে সেটা আমার ভুল। আমাকেও সেটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। কিন্তু আমি তো এক জন অভিনেত্রী। কাজের জন্য আমি যেটা করি, আসলে তো আমি তা নই। সেটা এখন আমার দর্শক বুঝতে শিখেছেন।’’
এত কাজের মাঝেও অবসর পেলেই দিদির মেয়ে ফলকের সঙ্গে সময় কাটান। ভালবেসে তাকে ডাকেন ‘লালা’ বলে। নায়িকার সবচেয়ে পছন্দের অবসর যাপন হল ‘লালা উইথ খালা’ টাইম। দিদির থেকেও খালাকেই বেশি ভালবাসে তাঁর লালা, গর্বভরে জানালেন নায়িকা।
তা হলে কি সামনেই বিয়ে করে সংসার পাতার পরিকল্পনা? সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিলেন, ‘‘একেবারেই না। বিয়েতে কত খরচ হয়! আমি সব খরচ বাঁচিয়ে দামি গাড়ি কিনব। তার পর (একটু ভেবে) বিয়ে করব। এত কাজের মাঝে প্রেম করার সময় কোথায়, বলুন তো?’’
প্রাণচঞ্চল এই মিষ্টি মেয়েটি চান দুই বাংলাকে মিলিয়ে দিতে। তাঁর নিক্তিতে দুই বাংলাকেই সমান জায়গায় রাখলেন। এ পার বাংলার জিতের ছবি যেমন ভাল লাগে, ও পার বাংলার অরফিন শুভর অভিনয়ও পছন্দের। সপরিবার ‘বেলাশেষে’ দেখে চোখে জল এসে গেলে, ‘প্রেমী ও প্রেমী’ দেখে সেই চোখেই হাসি খেলা করে। সাক্ষাৎকার শেষেও বাংলাদেশের পরশ রেখে গেলেন তাঁর প্রিয় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানে...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy