Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Anashua Majumdar

অভিনয়কে পেশা হিসাবে নিতে চাইনি, আমার স্বপ্ন ছিল অন্য: অনসূয়া মজুমদার

৩০ বছরেরও বেশি হয়ে গেল। বেশ কয়েক যুগ কাটিয়ে ফেলেছেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে। ধানবাদ থেকে কলকাতার যাত্রাপথ কেমন ছিল অনসূয়ার?

ধানবাদ থেকে কলকাতা— জন্মদিনে ফিরে দেখা অনসূয়া মজুমদারের যাত্রা।

ধানবাদ থেকে কলকাতা— জন্মদিনে ফিরে দেখা অনসূয়া মজুমদারের যাত্রা। ফাইল চিত্র।

উৎসা হাজরা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:১০
Share: Save:

প্রশ্ন: শুভ জন্মদিন

অনসূয়া: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

প্রশ্ন:এই দিনটা আপনার কী ভাবে কাটাতে ভাল লাগে?

অনসূয়া: জন্মদিন এখন আমার কাছে অতটাও বিশেষ কিছু নয়। বছরের পর বছর এই ভাবে কাজের মধ্যে কাটিয়ে দিতে পারলেই হল। এই দিনে তো আমি বেশি করে কাজ করি। কোনও ছুটি নেই। সবার সঙ্গে থেকে উদ্‌যাপনের আনন্দই তো অন্য রকম, তাই না!

প্রশ্ন: ক’টা বসন্ত পার করলেন পাঠকদের বলা যায় কি?

অনসূয়া: না, সেটা তো বলা যাবে না।একদমই বলা যাবে না। কথায় আছে না, ডিপ্লোম্যাট ইজ় আ পার্সন হু অলওয়েজ় রিমেম্বরস আ ওম্যানস বার্থডে বাট নেভার হার এজ।

প্রশ্ন: আর ইন্ডাস্ট্রিতে ক’টা বসন্ত দেখলেন?

অনসূয়া: সঠিক সংখ্যা বলতে পারব না। তবে বহু বহু বছর কাটিয়ে ফেললাম। তখন চাকরি করতাম। তখন থেকেই পাশাপাশি অভিনয়ও করতাম। তখন অবশ্য নিয়মিত কাজ করা হত না। ২০০৬-এ চাকরি ছাড়ি। ব্যস, তখন থেকে পুরোপুরি মন দিই সিনেমা, সিরিয়াল, নাটকে।

‘মুখার্জিদার বউ’ ছবিতে তাঁর অভিনয়  বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।

‘মুখার্জিদার বউ’ ছবিতে তাঁর অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। ছবি: ফেসবুক।

প্রশ্ন: আপনার ছোটবেলা কেমন ছিল?

অনসূয়া: আমার জন্ম ধানবাদে। সেখানেই আমার শৈশব কেটেছে। তার পর বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাদের নিয়ে কলকাতা চলে আসেন। বাবাকে অনেক ছোটবেলায় হারিয়েছি। লরেটো কলেজে পড়তাম। অভিনয়ের সঙ্গে আমার পড়াশোনার কোনও যোগ নেই কিন্তু।

প্রশ্ন: তা হলে অভিনয় জীবন কী ভাবে শুরু হল?

অনসূয়া: বিষয় আলাদা হলেও কলেজ থেকেই কিন্তু শুরু অভিনেত্রী অনসূয়ার জীবন। আমার অধ্যাপকরা খুব উৎসাহ দিতেন। সিনিয়ররাও খুব অনুপ্রেরণা যোগাতেন। তবে অন্তর্বর্তী কলেজ প্রতিযোগিতায় অভিনয়ের জন্য প্রচুর পুরস্কার পেয়েছি।

প্রশ্ন : সেই যুগের অনুপাতে তা হলে আপনার অভিনয় যাত্রা অনেক সহজ ছিল তাই না?

অনসূয়া: না, সেটা বললে আবার ভুল বলা হবে। ধানবাদের মতো ছোট শহর থেকে এসে কলকাতায় মানিয়ে নেওয়া এতটাও সহজ ছিল না। ভয়ে ভয়ে থাকতাম শহরের মেয়েদের সঙ্গে পাল্লা দিতে। লাজুক ছিলাম খুব। আমি তখন নাচ করতাম। গান শিখতাম। অভিনয় শিখিনি, কিন্তু ইচ্ছেটা বরাবরই ছিল। স্কুলেও প্রচুর নাটক করেছি। কলেজেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতাম। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম অভিনয় আমায় খুব টানে। বুঝেছিলাম, এটা নিয়ে ভাবা উচিত। তবে মজার বিষয়, আমি কখনও অভিনয়কে পেশা হিসাবে নিতে চাইনি। কত্থক শিখতাম। ওটাকেই পেশা হিসাবে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি।

প্রশ্ন: কম বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন, সেই সময় অভিনয় করার জন্য মায়ের থেকে অনুমতি পাওয়া আদৌ কি সহজ ছিল?

অনসূয়া: হ্যাঁ, ভীষণই সহজ ছিল। আমার মা খুবই স্বাধীন একজন মানুষ ছিলেন। মায়ের মধ্যে সাবেকিয়ানা আর আধুনিকতার অদ্ভুত এক মিশেল ছিল। ওঁর খুব উৎসাহ ছিল। মা সব সময় বলতেন, কারও যদি কোনও প্রতিভা থাকে তা হলে তা সবসময় লালনপালন করা উচিত। মায়ের বড় হওয়া বেঙ্গালুরুতে। ওখানেই বিয়ে হয়েছিল। দারুন গান গাইতেন। টেনিস খেলতেন। খুব অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন আমার মা। শুধু মা নয় শ্বশুরবাড়িরও খুব উৎসাহ পেয়েছি। আমার বিয়ের সঙ্গেও কিন্তু অভিনয়ের যোগ রয়েছে।

প্রশ্ন: কী ভাবে?

অনসূয়া: নাটকের মঞ্চেই আমার স্বামীর সঙ্গে আমার আলাপ। দীর্ঘ দিন মঞ্চে অভিনয় করেছি একসঙ্গে। তার পর সম্পর্ক গড়ে ওঠে, বিয়ে করি।

প্রশ্ন: আপনারা তো চার বোন, আপনার পরিবারের আর কেউ অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না?

অনসূয়া: না, আমার বোনেরা কেউ যুক্ত ছিলেন না। তবে আমার ঠাকুরদা পাড়ায় মাঝেমাঝে অভিনয় করতেন। তবে চর্চা ছিল। অরুন্ধতী দেবী আমার সম্পর্কে এক পিসি হন। রমেন রায়চৌধুরী আমার সম্পর্কে দাদা হন। অনেকেই যুক্ত ছিলেন।

প্রশ্ন: আপনি তো ‘সিরিয়াল’ জগতের বিবর্তন দেখেছেন, এই পরিবর্তনটাকে কী ভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

অনসূয়া: জীবনে ধ্রুব সত্য একটাই, তা হল পরিবর্তন। বদল তো সব সময় হবে। তার মধ্যেই নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। সেই স্রোতের সঙ্গেই ভেসে যেতে হবে। না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে। আমার তো ছোটদের সঙ্গে কাজ করতে কিন্তু বেশ লাগে। আর জীবন থেকে বেশি আশা করা উচিত নয়। যতটা ভগবান দেবেন সেটাই মন থেকে মেনে নিতে হবে।

কেরিয়ারের অনেকটা দেরিতে এসে সাফল্য, আক্ষেপ হয় অভিনেত্রীর?

কেরিয়ারের অনেকটা দেরিতে এসে সাফল্য, আক্ষেপ হয় অভিনেত্রীর? ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন: এত বছর ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্তি, কিন্তু ‘গোত্র’, ‘মুখার্জিদার বউ’-এর হাত ধরে এমন ভাবে বড় পর্দায় দেখা গেল আপনাকে। মনে হয় কি অনেকটা দেরি হয়ে গেল সুযোগ পেতে?

অনসূয়া: না। আমি তো ওই ভাবে ভাবি না। আমার মনে হয় এমন ভাবে ভাবলে আমি নিজের সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলব। নিজেকেও সংকীর্ণ মনে হবে। আগে হয়নি এখন হচ্ছে, তাতে ক্ষতির কী আছে।সে ভাবেই দেখি। ভগবান চেয়েছেন সাফল্য দেরি করে আসুক। তাই এসেছে। আর আগে কিন্তু বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মতো পরিচালকের ছবিতেও আমি কাজ করেছি। তবে তা হয় তো এমন বাণিজ্যিক ঘরানার ছবি ছিল না। আমার কোনও ক্ষোভ নেই জীবনে। আমার ধারাবাহিকও তো কম সফল নয়।

প্রশ্ন: ধারাবাহিকেও কখনও আপনি আধুনিকা কখনও আবার আটপৌরে মধ্যবিত্ত বাড়ির ঠাম্মা— দুই ভিন্ন মেরুর চরিত্রে সমান সাবলীল, কী ভাবে?

অনসূয়া: আমায় যে এমন সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাতেই খুশি। আমি এক একটা চরিত্র এক এক রকম ভাবে করার চেষ্টা করেছি। দর্শকও গ্রহণ করেছেন। আর ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনা করেছি বলে আধুনিকার চরিত্রে সমস্যা হয়নি। তবে বাংলাটা আমায় শিখতে হয়েছে। কারণ ধানবাদে তো মোটেই বাংলার চল ছিল না।

প্রশ্ন: এমন কোনও ইচ্ছা অপূর্ণ আছে কি?

অনসূয়া: না, অপূর্ণ থাকা মানেই তো ক্ষোভ থেকে যাওয়া। জীবনে যতটুকু পেয়েছি তাতেই আমি খুশি। যা পাইনি,তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Anashua Majumdar Tollywood Actor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy