হুমা কুরেশি
সাক্ষাৎকারের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গিয়েছে তিন ঘণ্টা আগে। মেকআপে ব্যস্ত আছেন বা ইচ্ছাকৃত দেরি করছেন, এমনটা নয়। আসলে চেন্নাই থেকে কলকাতার নির্দিষ্ট ফ্লাইটটাই ধরতে পারেননি হুমা কুরেশি। সুপারস্টার রজনীকান্তের ‘কালা’ ছবিতে যে অভিনয় করছেন তিনি। দেরির জন্য দুঃখপ্রকাশ করে জানালেন, বুঝতে পারেননি আগের দিন অতক্ষণ শ্যুটিং চলবে।
‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’, ‘দেড় ইশকিয়া’, ‘বদলাপুর’, ‘জলি এলএলবি টু’ পেরিয়ে গুরিন্দর চড্ডার ‘পার্টিশন: নাইন্টিন ফর্টি সেভেন’। ইন্ডাস্ট্রির বাইরের লোক হয়েও তো দিব্যি চালিয়ে খেলে যাচ্ছেন। সিক্রেটটা কী? ‘‘বদ্তমিজ, দায়িত্বজ্ঞানহীন, অপেশাদার...,’’ প্রচণ্ড জোরে হেসে উঠলেন হুমা। ‘‘এগুলোর ঠিক উল্টোটা হলেই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা যায়। দায়িত্বজ্ঞান আমার ছিলই। পেশাদার তো বটেই। বদ্তমিজ হওয়াটাও বেশ কমিয়ে ফেলেছি।’’
আরও পড়ুন: টলিউডের তিন তারকার বন্ধুত্ব কতটা?
দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা। বাবা লখনউ থেকে দিল্লি এসে শুরু করেন রেস্তোরাঁর ব্যবসা। হিন্দি ছবির জগতে তাই হুমা কুরেশিকে প্রথম প্রথম শুনতে হয়েছে ‘কাবাবওয়ালার মেয়ে’। ‘‘ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কখনও হীনমন্যতা কাজ করেনি। আমার অভিনয় করার শখ। ঠিক করেছিলাম, ওটার শেষ দেখে ছাড়ব।’’ কিন্তু বাবা-মা মেয়ের শখকে প্রথম দিকে পাত্তা দেননি। ‘‘ওদের দোষ দিই না। টিনএজে প্রত্যেক দিন একটা একটা নতুন নতুন খেয়াল চাপে। ওরা তো আর বুঝতে পারত না, অভিনয়টা আমার ক্ষেত্রে তেমনটাই কি না! আমি কি সত্যিই অভিনয় করতে চাই, না কি সময় নষ্ট করছি। এখন অবশ্য বাবা-মা খুব খুশি,’’ বলেন হুমা।
মুম্বইয়ে বান্দ্রার ফ্ল্যাটেই এখন বাবা-মা-ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন হুমা। হিন্দি ছবির তারকারা যেখানে পারিবারিক বাড়ি ছেড়ে নিজের জন্য একার ফ্ল্যাট কিনছেন, সেখানে দিল্লি থেকে বাবা-মাকে নিয়ে আসা একেবারেই যে ছকে পড়ছে না... প্রশ্নের শেষ অংশ আন্দাজ করেই হয়তো কথা শেষ করতে দিলেন না। বললেন, ‘‘আই লভ মাই ফ্যামিলি। আর দিনের শেষে ফাঁকা ফ্ল্যাটে ফিরতে চাই না।’’ বয়ফ্রেন্ডও তো অপেক্ষা করতে পারেন? ‘‘সেটা খোঁজ করার দায়িত্ব তো সাংবাদিকদের। আমি কেন বলব?’’ বেশ আক্রমণাত্মক। কিছু দিন আগে বলেছিলেন, তিনি দিল্লির গুন্ডা। এ বার প্রত্যক্ষ করা গেল।
বয়ফ্রেন্ডের কথা না-ই বা বললেন, বন্ধুদের কথা তো বলতেই পারেন? ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও বন্ধুই কি নেই? ‘‘অনেকে আছে। দু’-একজনের নাম করাটা ঠিক হবে না।’’ বললেন বটে। তবে ইন্ডাস্ট্রির গু়ঞ্জন, সোহেল খানের সঙ্গে ব্রেক আপের পর বলিউডে তাঁর বন্ধু নেই বললেই চলে। তবে তাতে কাজের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধায় নিশ্চয়ই পড়তে হয়নি? ‘‘আমি তো থিয়েটার করে এসেছি। অভিনয়ের ভিতটা আমার যথেষ্ট মজবুত।’’
সেই শক্ত ভিতের জোরেই গুরিন্দর চড্ডার হলিউডি ছবিতে আত্মপ্রকাশ। তাঁর চরিত্র আলিয়াকে ডি-গ্ল্যাম বললেও অর্ধেক বলা হয়। ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনের বাড়ির কাজের লোক সে। ‘‘স্বপ্ন সত্যি হয়ে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা। শুধু আমার চরিত্রের জন্য বলছি না। গুরিন্দর এত তথ্য জোগাড় করেছিল যে, আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ইতিহাস অনার্স পড়ার সময়ও এত কিছু জানতাম না,’’ হেসে বলেন গার্গী কলেজের প্রাক্তনী। গুরিন্দর পরিচালিত ছবি হোক কি রজনীকান্তের বিপরীতে, তিনি নাকি অভিনয়ের জন্য কখনও আগাম প্রস্তুতি নেন না। বলছিলেন, ‘‘আমি ডিরেক্টর্স অ্যাক্টর। পরিচালক যেমনটা বলবেন, আমি তেমনটা করে দেব।’’
তাই কি স্টারডমকে সিরিয়াসলি নেন না? ‘‘আমি তো নিজেকেই সিরিয়াসলি নিই না,’’ স্পষ্ট জবাব হুমার। ‘‘অনেক দিন বাঁচতে হলে হাসিখুশি থাকাটা খুব জরুরি। আমি তাই হাসিঠাট্টা নিয়েই থাকতে চাই।’’ কিন্তু তাঁর সম্পর্ক নিয়ে যখন ট্যাবলয়েডগুলোতে মুখরোচক গল্প বেরোয়, তখনও কি হাসিখুশি থাকতে পারেন? আবারও থমথমে হয়ে গেল নায়িকার মুখ। কাটাকাটা শব্দে বললেন, ‘‘আমি কোনও রিঅ্যাক্ট করিনি।’’
তবে তাঁর ওজন সংক্রান্ত ট্রোলের জবাব তিনি দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়াতেই। ‘‘ক্রেডিটটা অবশ্য আমার ম্যানেজারের প্রাপ্য। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে আমি একেবারে ‘অঙ্গুঠাছাপ’। এই দেখুন বসে থাকতে থাকতে তিন-চারটে ভিডিয়ো আমাকে পাঠিয়ে যাচ্ছে,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন হুমা।
কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি বৈঠক সেরে আরও তিনটে অনুষ্ঠানে যেতে হবে তাঁকে। রাতেই আবার ফেরত চেন্নাই। সব ইন্টারভিউতেই বলেন, তাঁর রিলেশনশিপ স্টেটাস সিঙ্গল। সেটার কি কোনও বদল হল? ‘‘অন্য রকম উত্তর চান বলছেন? কিন্তু সেটা খুঁজে বের করা তো আপনাদের কাজ। আমি কেন সহজ করে দেব!’’ হেসে উঠলেন হুমা কুরেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy