Advertisement
০৯ নভেম্বর ২০২৪
Entertainment News

ঐতিহ্য আর গর্বের মিশেল এলিট-ও বন্ধ হচ্ছে!

ক্রমবর্ধমান মার্কেট ইকনমির আস্ফালনের কাছে ইতিহাস বড়ই মূল্যহীন। তবে কি এ ভাবেই ভেসে যাবে একের পর এক হেরিটেজ! গৌতম ঘোষের সংযোজন: “ইউরোপের দেশগুলি কিন্তু পেরেছে। সেখানে সিঙ্গল স্ক্রিনের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়েই রমরমিয়ে চলছে মাল্টিপ্লেক্স।”

এলিট এখন যেমন। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

এলিট এখন যেমন। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

অময় দেব রায়
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ১৭:২১
Share: Save:

১৯৪০। স্বাধীনতার তখনও বাকি ৭ বছর। চৌরঙ্গি চত্বরে যাত্রা শুরু নতুন সিনেমা হলের। নাম এলিট। অল্প সময়েই নজরকাড়া সাফল্য। এক দিকে যেমন হাতিবাগানে মিনার, মিত্রা, দর্পণাকে ঘিরে নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালির সেলুলয়েডের স্বপ্নপূরণ। অন্য দিকে ধর্মতলায় এলিট, মেট্রো, লাইটহাউস, গ্লোব মানেই সাহেবসুবো ও বাঙালিবাবুদের থিকথিকে ভিড়। যাত্রা শুরু ইংরেজি ছবি দিয়ে। পরবর্তীতে অন্যান্য বিদেশি ভাষার ছবি, বাংলা, হিন্দি বাদ যায়নি কিছুই।

রোজ হাউসফুল বোর্ড। অন্য সবার থেকে এলিটের কদর ছিল একটু আলাদা। কারণ তার প্রজেকশন। এমন উন্নতমানের প্রজেকশন তখন কলকাতার অন্য কোনও হলে ভাবাই যেত না। স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন চিত্র পরিচালক নীতিশ মুখোপাধ্যায়। এটা শুধু তাঁর কথা নয়। ‘ভুবন সোম’ ছবির প্রিমিয়ারে হল ভর্তি দর্শকের সামনে এই একই কথা বলেছিলেন মৃণাল সেন। এলিট ছিল তাঁর হট ফেভারিট।

চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের মনে পড়ে যায়, পরিবারের সঙ্গে এলিটে ছবি দেখতে যাওয়ায় স্মৃতি। একটু বড় হয়ে দেখেছিলেন রাশিয়ান হ্যামলেট। এতটাই ভাল লেগেছিল যে একই ছবি দেখতে পর পর দু’দিন ছুটলেন এলিটে। কলেজ বেলায় সুযোগ পেলেই চলে যেতেন ধর্মতলায়। ঢুকে পড়তেন কোনও না কোনও সিঙ্গল স্ক্রিনে।

আরও পড়ুন, ‘মিঠুনদাই আমার প্রথম গুরু’, বললেন সেলিব্রিটি হয়ে ওঠা ডান্সিং আঙ্কল

এলিটের সিঁড়ি বেয়ে একতলা থেকে দোতলায় উঠতে গিয়ে মাঝের ল্যান্ডিংয়ে বিশাল একটা আয়না। আয়তন প্রায় ১০ ফুট বাই ১২ ফুট। উল্টো দিকের দেওয়ালে সাঁটানো থাকত পোস্টার। উল্টো করে। যাতে আয়নায় তার প্রতিফলন হয়। আর দর্শক সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে দেখে নিতে পারে সিনেমার যাবতীয় ডিটেলস। এ সব এখন অতীত। হলের বাইরে বার কাম রেস্তরাঁ। দর্শক আকর্ষণের যাবতীয় উত্তরাধুনিক পসরা। তবু লোক নেই। বহু দিন লাভের মুখ দেখেনি এলিট। শেষ সাত দিন টিকিট বিক্রি শূন্য। গত ৩১ মে। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে আর একটি দীর্ঘশ্বাস। তালা পড়ল ৭৮ বছরের ঐতিহ্যে। বন্ধ হয়ে গেল এলিট।


১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮। এলিট সিনেমার সামনে টিকিটের লাইন। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভের সৌজন্যে।

শুধু কি এলিট! প্রায় রোজ মুছে যাচ্ছে একের পর এক সিঙ্গল স্ক্রিন। সঙ্গে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বহু পুরনো স্মৃতি। বেশ কয়েক বছর আগে কথা হয়েছিল মিনার সিনেমার পুরনো কর্মচারী স্বপন কর্মকারের সঙ্গে। তাঁর কথাগুলো এখনও কানে বাজে। “চোখের সমনে একে একে হারিয়ে গেল পূরবী, পূর্ণ , মেট্রো— আরও কত কত হল। একের পর এক হল ভেঙে গড়ে উঠলো ঝাঁ-চকচকে শপিং মল। নতুন প্রজন্ম আর যা-ই করুক যেন সিনেমার ব্যবসায় না আসে। কত দিন আর মৃতদেহ আগলে থাকা যায় বলুন। সময় থাকতে থাকতে আমাদেরও মায়া কাটিয়ে ফেলাই ভাল।”

আরও পড়ুন, ‘মায়ের মতো’ পোশাক পরেননি, ট্রোলড করিনা!

ক্রমবর্ধমান মার্কেট ইকনমির আস্ফালনের কাছে ইতিহাস বড়ই মূল্যহীন। তবে কি এ ভাবেই ভেসে যাবে একের পর এক হেরিটেজ! গৌতম ঘোষের সংযোজন: “ইউরোপের দেশগুলি কিন্তু পেরেছে। সেখানে সিঙ্গল স্ক্রিনের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়েই রমরমিয়ে চলছে মাল্টিপ্লেক্স।”

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বাংলা সিনেমার স্বার্থে আমরা কি পারি না এই হলগুলিকে বাঁচাতে আরও একটু উদ্যোগী হতে?

অন্য বিষয়গুলি:

Elite Cinema Cinema Hall Tollywood Celebrities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE