সাহানা বাজপেয়ী।
সাহানা মানে ঐতিহ্যের গান ভিন্ন ধারায় গাওয়া...জনপ্রিয়তার জন্য?
ভিন্ন ধারার ভাবনাটাই আপেক্ষিক। প্রথম থেকেই আমার গানের অ্যারেঞ্জমেন্টস্ আলাদা। তাই আমায় ভিন্ন ধারায় ফেলা হয়েছে।
কিন্তু শান্তিনিকেতনের মেয়ে হয়ে বাঁক বদল করতে হল কেন?
যে সময় আমরা শান্তিনিকেতনে বড় হয়েছি সে সময় আমাদের বয়সের গায়কেরা, বিশেষত শান্তিনিকেতনের বাইরে, রবি ঠাকুরের গানকে ঘুমপাড়ানি, বোরিং ইত্যাদি তকমায় ভূষিত করতে পিছপা হত না। এ দিকে আমরা সকলে তখন মৌসুমী ভৌমিক, সুমনদা, অঞ্জন দত্ত, শিলাজিতদা, নচিকেতা শুনছি। বাংলা গানে আধুনিকের জোয়ার এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে বব ডিলান, বিটলস্, লিওনার্ড কোহেন, পল সিমন আরও অনেকে ছিলেন। মনে হয়েছিল গতানুগতিক যন্ত্রানুষঙ্গের বাক্সের বাইরে ভাবা দরকার। যন্ত্রানুষঙ্গ সমসাময়িক না হওয়ায় আমাদের প্রজন্ম রবি ঠাকুরের গান শোনার স্পৃহা হারাচ্ছিল। তাই ২০০১ সালে (কপিরাইট ওঠার ঠিক তিরিশ দিন আগে) আমরা শান্তিনিকেতনে সিডি বানিয়েছিলাম। শান্তিনিকেতনে রবি ঠাকুরের গান অন্যরকম অ্যারেঞ্জমেন্টে। সকলেই বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী।
কারা ছিলেন?
বিক্রমদা, প্রিয়মদা, অর্ণব, মনোজদা, মনীষাদি, ঋতপাদি, ইন্ডিয়ান আইডল আর রামলীলা-বাহুবলী খ্যাত অদিতি পাল। সকলে খুব পছন্দ করেছিলেন কিন্তু। আমার মনে আছে আমাদের বন্ধুরা এসে বলেছিল এই প্রথম রবি ঠাকুর ভালবেসে শুনছি। এই অনুভূতি আজও অন্য ভাবে কাজ করার উৎসাহ দেয়। আসলে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিলমিশ খুব জরুরি।
নয়তো কেউ রবীন্দ্রনাথের গান শুনবে না বলছেন?
দেখুন আমি মিলমিশের কথা বলছি। আনন্দের মিশ্রণ। যেটা হয়তো অনেকের মনে হবে অকারণে পাকামি। কিন্তু আমাদের কাছে এই অ্যারেঞ্জমেন্ট খুব জরুরি ও প্রাসঙ্গিক।
‘রবীন্দ্রনাথের কথা বুঝে গান গাওয়া খুব জরুরি’
তাহলে বাংলা চলচ্চিত্রে 'পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে' বা 'মায়াবনবিহারিনী' যে ভাবে গাওয়া হল সেটা ঠিক?
ঠিক বেঠিক বলার আমি কেউ না। কপিরাইট চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন ভাবে রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া হয়। তার মধ্যে কিছু ভাল কাজ হয় কিছু হয় না। রবীন্দ্রনাথের কথা বুঝে গান গাওয়া খুব জরুরি। শ্রোতারা কেউ ভাল গান শোনেন কেউ শোনেন না। সবটাই আপেক্ষিক।আমি একটা গানে রক অ্যারেঞ্জমেন্ট চাই, আপনি এস্রাজ আর পাখোয়াজ চান। এই আর কী!
আর ছবিতে 'পাগলা হাওয়া'
'বং কানেকশন'-এ 'পাগলা হাওয়া' শুনতে একটুও অসুবিধে হয়নি। আমি খোলা মনের মানুষ। শিল্পীর স্বাধীনতায় আমার পূর্ণ সমর্থন আছে।
বুঝলাম। এত কিছু করেও তো গান শোনানোর জায়গা কমে আসছে। সিডি নেই।
তাতে কী? পোর্টাল আছে তো। তবে সিনেমায় গান না গাইলে, টেলিভিশনে মুখ না দেখালে, সেই শিল্পী যে গান গায় সেটাই মানুষ জানতে পারে না! কিছু প্রোডাকশন হাউজ শিল্পীদের সেই জায়গাটা দিচ্ছে। সিঙ্গলস আসছে তাই। গান ধীরে ধীরে শোনার চেয়ে দেখার শিল্প হয়ে উঠছে। এটাই ভবিতব্য। তবে পৃথিবীটা তো গোল। এরকম দিন নিশ্চই আসবে মানুষ মন দিয়ে ভালবেসে রাতের পর রাত গান শুনবে। তবে গান গাওয়া গান বাঁধা চালিয়ে যেতে হবে। দমে গেলে হবে না।
আপনি তো কখনওই দমেন না! আর আপনার পি আর অসম্ভব ভাল!
(প্রচণ্ড হাসি) সত্যি যদি তাই হতো তো আমি বছরে পঞ্চাশটা ছবির মধ্যে চল্লিশটাতেই গাইতাম।
কিন্তু সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতো পরিচালক আপনার বন্ধু!
তাতে কী! বন্ধুদের সঙ্গে পি আর হয় না! ঝগড়া হতে পারে।
‘আমি মানুষটাই খুব আদুরে’
যে বন্ধুদের সঙ্গে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন তাঁদরে গান শোনেন?
আমি বিক্রমদার গান রোজ শুনি। আমাদের প্রজন্মে ওর মতো করে আর কেউ বোধহয় রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে পারবে না। এছাড়াও রাজেশ্বরী দত্ত, মোহন সিংহ খাঙ্গুরা, শান্তিদেব ঘোষ, পূর্বা দাম, প্রমিতা মল্লিকের গান শুনি। আর সুফি, আফ্রিকান মিউজিক, বিদেশি ফোক, দিশি লোকগান শুনি। আসলে গান শোনা আমার কাছে রেওয়াজের মতো।
আরও পড়ুন, ‘মনসুন মেলডিস’ নিয়ে আসছেন প্রিয়ম-অংশু
নিন্দুকেরা বলেন আপনি আদুরে গলায় গান করেন...
তাই নাকি! আমি মানুষটাই খুব আদুরে। আদর খেতে আর করতে খুব ভালবাসি। আর আমি যে ভাবে কথা বলি সে ভাবেই গাই। আলাদা কিছু আরোপ করি না।
লন্ডনে সোয়াস ইউনিভার্সিটিতে বাংলা পড়িয়ে কি মনে হয় বাঙালির কদর বিশ্বে আছে?
কেন থাকবে না? তবে রবীন্দ্রনাথকে বাংলায় যে ভাবে অনুধাবন করা যায় সাহেবরা অন্য ভাষায় ঠিক সেই ভাবে পারেন না!
আরও পড়ুন, ‘প্রেম আর কাজ আমি জীবনেও গুলিয়ে ফেলিনি’
শিল্পী অর্ণবের সঙ্গে এখন বন্ধুতা নাকি প্রেম?
সোজা উত্তর এলো না। বললেন, পুরো বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক। গানে ঢুকলেন সাহানা...নতুন উদ্যোগে আর আমি সেই মলয় বাতাসে ভেসে গেলাম সাহানার গলার সুরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy