অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়েছিল বিকেলে। গরম। তবে তখন ক’দিন নিয়ম করেই হাজিরা দিচ্ছিল কালবৈশাখী। সঙ্গে ফাউ বৃষ্টি। সে দিন রোদ পড়ে আসা বিকেলেও হাওয়া ছিল প্রচুর। তাই ফুরফুরে ছিল তাদের মেজাজ। তারা অর্থাত্ খুদে সেলেব ব্রত এবং তিয়াসা। ‘হামি’র বন্ধুরা।
ভিক্টোরিয়ার সামনে ঘোড়ার গাড়িদের ভিড়। সেখানেই তখন বাবা-মায়ের সঙ্গে অপেক্ষা থুড়ি খেলায় ব্যস্ত ছিল তারা। সেখান থেকে সদলবলে গেলাম ময়দানে। শহর কলকাতায় ভরে যাওয়া পোস্টারের সৌজন্যে তারা এখন বেশ পরিচিত। তাই ক্যামেরা অন করতেই কৌতূহলী ভিড় জমল ইতিউতি। তবে ব্রতর তাতে থোড়াই কেয়ার। ‘‘কী কী করতে হবে তুমি শুধু বলো’’— ছবির প্রোমোশনে যে কোনও প্রফেশনালের মতোই বলে উঠল ব্রত।
মাস দু’য়েক আগেই ‘হামি’র কারিগর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘হামি কিন্তু ঠিক এখনকার ঘটনা নিয়েই। এই যে স্কুল, বাচ্চা, টিচার— কার কেমন ব্যবহার, চারপাশে যা হচ্ছে তা নিয়েই গল্প। আর খুব ভাল কাজ করেছে বাচ্চাগুলো।’’ শিবপ্রসাদের কথা মিলে গেল। বিকেলের রোদ গায়ে মেখে ময়দানের সবুজ ঘাসে ‘ভুটু ভাইজান’ নেচে উঠল সলমন খানের স্টেপেই।
আরও পড়ুন, ‘পুরস্কারের জন্য আমি কাউকে বোতল দিতে পারব না’
শিবপ্রসাদ-নন্দিতার কারখানা থেকে গত কয়েক বছরে যা যা বেরিয়েছে তা একই সঙ্গে রূপে লক্ষ্মী এবং গুণে সরস্বতী। ‘বেলাশেষ’, ‘প্রাক্তন’, ‘পোস্ত’— একদিকে যেমন বক্স অফিসকে খুশি করেছে, তেমনই জিতে নিয়েছে সমালোচকের প্রশংসা। ‘হামি’ সেই ট্রেন্ড বজায় রাখতে পারবে কিনা, সে উত্তর দেবে আগামী ১১মে। তবে প্রিভিউ রেজাল্ট বেশ ভাল। রিলিজের আগে ‘হামি’র দুই শিশু অভিনেতার সঙ্গে আড্ডায় বসে মনে হল, অফস্ক্রিন যারা এত জমাটি, অনস্ক্রিনে না জানি, ক’টা ছক্কা মেরেছে!
সে দিন ‘হামি’র জেনারেল নলেজ টেস্ট করতে চেয়েছিলাম আমরা। শিবু আঙ্কল, নন্দিতা আন্টির আর কোনও ছবি দেখেছিস? ব্রতকে প্রশ্নটা করে তোপের মুখে পড়লাম। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে সে বলল, ‘‘আঙ্কল, আন্টিটা আবার কে?’’ পাশ থেকে হাসতে হাসতে ধরিয়ে দিল তিয়াসা, ‘‘ওর সব শিবু, নন্দিতা…।’’
আচ্ছা, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করলি…। কথা শেষ করতে না দিয়েই ব্রতর প্রশ্ন, ‘‘হ্যাঁ, হ্যাঁ… চূর্ণীদি…বলো কী বলবে?...’’ অভিনয় ছাড়াও চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় আর কি কাজের জন্য বিখ্যাত জানিস? সমস্বরে সঠিক উত্তর দিল দুই খুদেই। এ হেন যে প্রশ্নই করা হল, ফুল মার্কস পেল দু’জনেই।
তবে এক বছরের ব়়ড় কলিগ তিয়াসা প্রশ্ন করলেই ব্রতর অন্য মূর্তি। কান ধরে তিয়াসা যখন জানতে চাইল, ‘‘বলতো তনুশ্রী আন্টিও অভিনয় ছাড়া আর একটা প্রফেশনে খুব ফেমাস, কী সেটা?’’ ব্রত উত্তর দেওয়ার আগে প্রথমে কিছুটা ভাবল। তার পর বিরক্ত হল। তার পর রেগে গিয়ে বলল, ‘‘ধুত্তোর, যত্ত সব। আমি এ বার প্রশ্ন করব…।’’ তাতেই রাজি তিয়াসা।
আরও পড়ুন, প্রেম নিয়ে কথা বলা কি ইশার বারণ?
আগেও বলেছি, আবার বলছি, ব্রত কিন্তু প্রোমশন করল প্রফেশনালের মতোই। সাবজেক্টের বাইরে একটুও গেল না সে। কারণ তিয়াসার কাছে জানতে চাইল, ‘‘তোর কাছে হামি মানে কী?’’ তিয়াসাও চূড়ান্ত প্রফেশনাল। তার উত্তর, ‘‘হামি আমার কাছে মিষ্টি একটা জিনিস। হামি আমার কাছে একটা ফিল্ম…।’’
‘হামি’দের দুষ্টুমি।
খেলাটা ঘুরে গেল ঠিক এর পরেই। ময়দানের কিশোর পা ফুটবল ছেড়ে তখন শুটিং দেখতে ব্যস্ত। গাছতলায় এসে পর পর দাঁড়িয়ে বাদামওয়ালা, আইসক্রিমের গাড়ি। ব্রতর কাছে তিয়াসার প্রশ্ন, ‘‘তুই বল তো, হামি মানে কী?’’
ঠিক এই মুহূর্তটার জন্যই যেন অপেক্ষা করছিল ক্লাস টু-য়ের ব্রত। ফিচেল হেসে পাশে বসা তিয়াসাকে একটা ‘হামি’ খেল সে। আশপাশের ভিড়টা থেকে ছিটকে এল হাততালি। ‘‘ভাল করেছ বাবু…’’ মন্তব্য শুনে লাজুক হাসল ‘ভুটু ভাইজান’। তিয়াসার চোখে তাত্ক্ষণিক বিস্ময়। তার পরই ব্রতর কান ধরে শাসন করতে শুরু করল তৃতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া।
শেষ বিকেলের আলোয় ভিক্টোরিয়ার পরীও যেন প্রশয়ের হাসি হাসল…।
ছবি এবং ভিডিও: মৃণালকান্তি হালদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy