...সচরাচর এই দিনটা আমরা তিরুপতিতে কাটিয়ে থাকি। এটা প্রায় সংস্কারই হয়ে গিয়েছিল যে, শ্রী-র জন্মদিন ১৩ অগস্ট মানেই আমরা তিরুপতি। এ বারও তিরুপতি যাচ্ছি, তবে দু’দিন দেরি করে। মেয়েদের পরীক্ষা রয়েছে। সেই ডেটগুলো অ্যাডজাস্ট করে যেতে হচ্ছে বলে দু’দিনের দেরি।
শুধু গত বার আমরা এই বিশেষ দিনটা মুম্বইতে কাটিয়েছিলাম বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সে। ইয়াও চা বলে একটা ওরিয়েন্টাল রেস্তোরাঁ আছে। ওখানে ফিউশন ফুডও খুব ভাল পাওয়া যায়। এই রেস্তোরাঁটা আর চায়না গার্ডেন দু’টোই মুম্বইতে আমাদের খুব ফেভারিট জায়গা। ইয়াও চা-র পার্টিতে গত বার আমাদের সঙ্গে আমার দুই ভাই অনিল আর সঞ্জয়ও ছিল। ডিরেক্টর বাল্কি ছিল। ওর স্ত্রী ছিল। শ্রী-র বোনেরা এসেছিল চেন্নাই আর হায়দরাবাদ থেকে। ওই পার্টির এক-আধ দিন বাদে আবার একটা পার্টি হয়েছিল। সেটা দিয়েছিলেন অমর সিংহ।
গতবার ছিল শ্রী-র পঞ্চাশতম জন্মদিন। অনেক ঘটা হয়েছিল। এ বার সে সব না-হলেও কিছু তো হবেই। এখনও ভাবিনি ওকে কী দেব।
চকোলেট? উঁহু। খাবে না।
একরাশ গোলাপ? নাহ্... লাল ফুল ম্যাডামের পছন্দ নয়।
শ্রীর পছন্দ সাদা অর্কিড, যেগুলো ব্যাঙ্কক-ট্যাঙ্ককে খুব দেখা যায়। বাড়িতে কখনও আমরা নেমন্তন্ন করলেও শ্রী গোটা বাড়ি সাদা ফুলে ভরিয়ে রাখে। মুম্বইতে অবশ্য সাদা অর্কিডের জন্য অর্ডার দিতে হয়। আর শ্রী মাথায় গোঁজে মোগরা ফুল।
ম্যাডামের বিশেষ পছন্দ হল হিরে। স্পটলেস, পিওর ডায়মন্ড। সেই হিরে কেনার জন্য সাউথ আফ্রিকা ছোটার প্রয়োজন নেই। মুম্বইতেই পাওয়া যায়। হয়তো আমার এ বারের উপহারটা সে দিকেই গড়াবে। যদিও কিছু ভাবিনি।
একটা উপহার প্রতি বছরই আমি ওকে দিতে থাকি, তা হল ‘লাভ’। আমি শ্রীকে অসম্ভব ভালবাসি। ও হল আমার সেরা অহংকার। প্রথম প্রথম যখন বিয়ে হয়েছিল, শ্রীদেবীর মতো একজন ডানাকাটা সুন্দরী সব সময় আমার পাশে এটা ভাবতেই রোমাঞ্চিত লাগত। কেমন স্যুরিয়েল মনে হত। এখন আর স্যুরিয়েল লাগে না। অনেক গা সয়ে গিয়েছে। তবু গর্বটা থেকেই গিয়েছে। থাকবেও।
এই যে পনেরো বছর পর পর্দায় ফিরে এসে আমার স্ত্রী ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ নিয়ে কাঁপিয়ে দিল সেটা তো গর্বেরই! শুধু তো বলিউড বা আমাদের দেশ নয়, সারা পৃথিবীতে লোকে এই ছবি দেখে প্রশংসা করেছে। মাত্র কিছু দিন আগে জাপানে রিলিজ করেছে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’। স্বয়ং জাপানের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ছবিটা দেখে দারুণ আপ্লুত। ফুল হাউজ চলছে ওখানে। আমরা হিসেব করে দেখেছি যত ভারতীয় ফিল্ম ওখানে রিলিজ করেছে তার মধ্যে মোট কালেকশনে ‘থ্রি ইডিয়টস্’য়ের পরেই ‘ইংলিশ ভিংলিশ’।
শ্রীকে নিয়ে আমার পরের ছবিটার কাজও অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বিষয়টা রেডি। স্ক্রিপ্ট ঘষামাজা চলছে। আশা করি জানুয়ারিতেই ফ্লোরে যেতে পারব। এর বেশি কিছু এখন ভাঙছি না। আমাদের বিয়ে হওয়ার আগে শ্রীর তিনটে ছবির প্রোডিউসর ছিলাম আমি। সেই সময়ে ওর মধ্যে যে শৃঙ্খলা, যে পারফেকশনের পিছনে দৌড়নোর আগ্রহ লক্ষ করেছি আজও তাই।
খুব ন্যাচারাল অ্যাকট্রেস। আর একজন দারুণ মানুষ। আমি তো এত বছর পরেও ওর প্রেমে ডুবে রয়েছি। এই ইন্টারভিউতেও চিত্কার করে বলতে কোনও অসুবিধা নেই যে, ইয়েস আই অ্যাম ইন লাভ। আই অ্যাম স্টিল ডিপলি ইন লাভ উইথ মাই ওয়াইফ।
শ্রী আমার দারুণ গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট সিস্টেম। গত দশ-বারো বছরে আমি উত্তুঙ্গ সাফল্য যেমন দেখেছি তেমনই দেখেছি অনেক ঝড়ঝাপ্টা। অনেক কালো দিন। শ্রী সব সময় আমার সঙ্গে ছিল। একবার তো অফিসের একটা সই জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলায় বেচারিকে আদালত পর্যন্ত আমায় টেনে নিয়ে যেতে হয়েছিল। একটা চেক ওর নাম করে আমার এক প্রাক্তন কর্মী সই করে দেয়। তখন ভরা আদালতে দাঁড়িয়ে শ্রীকে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে সইটা ও করেনি। মোটেও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। কিন্তু ও খুব সসম্মানে সামলে ছিল, যা দেখেটেখে আমার মনে হয়েছিল বিবি হো তো অ্যায়সি! এটা ২০০৬-০৭ এর কথা। তার পর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ওকে দেখেছি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে ঝগড়াঝাঁটি মন কষাকষি হয়ে থাকে আমাদের মধ্যে তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ওকে মেজাজ হারিয়ে ফেটে পড়তে খুব কমই দেখেছি।
হ্যাঁ, শ্রী খুব আপসেট হয়ে গিয়েছিল সেলিব্রিটি ক্রিকেটে টালিগঞ্জ প্লেয়ারদের নিয়ে তৈরি বেঙ্গল টাইগার্সকে যা তা হারতে দেখে। প্রথম বার তো টানা যখন টিম হারছে ও প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বলেছিল, মনে হয় না আদৌ এরা ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে বলে। কমিটমেন্টে কিছু একটা মিসিং তো দেখাই যাচ্ছে। আমার সঙ্গে শ্রী টিমের যুগ্ম মালিক। গত বছরও দেখলাম ক্রমাগত হারে ও ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। আবার খুব রেগে গেল।
আসলে শ্রীর মানসিকতা একজন উইনারের, যে সব সময় নিজের সেরাটা উজাড় করে দেয় আর হারবে কখনও চিন্তাই করে না। মাধুরী আর ওর লড়াই নিয়ে যখন মুম্বই সরগরম তখনও শ্রী চুপচাপ নিজের কাজটাই করে গিয়েছে। মিডিয়া কী লিখছে ভেবে নিজের স্পেসটা নষ্ট করেনি। শ্রী আর মাধুরী আজও যে দারুণ বন্ধু তা নয়। তবে পরস্পরের প্রতি কোনও বিদ্বেষ নেই। মুখোমুখি হলে এখনও যথেষ্ট সৌজন্যমূলক।
আমার ভাই অনিলের সঙ্গে অদ্ভুত কেমিস্ট্রি ছিল শ্রীর। আসলে দু’জন দারুণ পাওয়ারফুল অভিনেতা এক সঙ্গে পর্দায় এলে এই কেমিস্ট্রি অনিবার্য। অনিলের সঙ্গে ও চোদ্দোটা ফিল্ম করেছে। কমল হাসনের সঙ্গে ২০-২৫টা। রজনীকান্তের সঙ্গে ১৮-২০টা। জিতেন্দ্রর সঙ্গেও অনেকগুলো ছবি। ঋষি কপূর, অনুপম খের সবার সঙ্গে কাজ করেছে। শ্রীর সেরা নায়কদের মধ্যে মিস্টার বচ্চনও পড়বেন। যখনই ওঁরা একসঙ্গে এসেছেন স্ক্রিন ফেটে গিয়েছে।
এখনও আমরা যখন অ্যাওয়ার্ড ফাংশান-টাংশানে একসঙ্গে যাই এখনকার অ্যাকট্রেসরা শ্রীকে দেখতে পেলেই দৌড়ে আসে। আর বলে ওর ফিল্মগুলো একটা সময় দেখে কী রকম ইন্সপায়ার্ড হয়েছে। টিভিতে পুরনো ছবি দেখেও লোকে ফোন করে। টেক্সট করে। শ্রী নিজেও এখনকার প্রিয়ঙ্কা-দীপিকাএদের খুব পছন্দ করে। দেখা হলেই ওদের প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। আর ওরাও খুব সশ্রদ্ধ থাকে, যেটা দেখলে এক জন সিনিয়রের মন আনন্দে ভরে যাবেই। আপনাদের পাতায় কিছু দিন আগে শুনলাম সুস্মিতা সেন দারুণ প্রশংসা করেছে শ্রী-র। টিভিতে সে দিন ‘জুদাই’ দেখাচ্ছিল। আমার স্ত্রীর কাছে দেখলাম টানা ফোন আর এসএমএস এসে যাচ্ছে।
এগুলো দেখলে আরও গর্ব হয়। মনে হয় আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ শ্রী-ই। জন্মদিনে আজ ওর জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা ছাড়া নিজের জন্যও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আপনি বললেন একটা সেনটেন্সে আমার শ্রীদেবীকে ব্যাখ্যা করতে! আমি বলব একটা সেনটেন্স পুরো খরচাই হবে না। একটা শব্দই ওকে ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট!
পারফেক্ট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy