Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
bela bose

পাল্লা দিতেন হেলেনের সঙ্গে, ষাটের দশকে বলিউড-জয়ী এই বেলা বসুকে ভুলে গিয়েছে সবাই

স্কুল শেষ হওয়ার পরে বেলা ঠিক করলেন ছবিতে গ্রুপ ডান্সার হওয়াকেই পেশা হিসেবে নেবেন। সেই মুহূর্তে মা এবং ছোট ছোট চার ভাইবোনের পাশে দাঁড়াতে কিশোরী বেলার সামনে আর কোনও পথ খোলা ছিল না।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ১৬:১৪
Share: Save:
০১ ১৬
বাবার অকালপ্রয়াণে হঠাৎই স্তব্ধ হতে বসেছিল সংসারের চাকা। মা এবং ছোট ছোট ভাইবোনের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছিলেন কৈশোরেই। খলনায়িকা থেকে নায়িকা। চরিত্রাভিনেত্রী থেকে কৌতুকাভিনয়। সব ধরনের ভূমিকায় অনন্য ছিলেন বেলা বসু।

বাবার অকালপ্রয়াণে হঠাৎই স্তব্ধ হতে বসেছিল সংসারের চাকা। মা এবং ছোট ছোট ভাইবোনের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছিলেন কৈশোরেই। খলনায়িকা থেকে নায়িকা। চরিত্রাভিনেত্রী থেকে কৌতুকাভিনয়। সব ধরনের ভূমিকায় অনন্য ছিলেন বেলা বসু।

০২ ১৬
টেলিফোনের ওপারে নয়, লাইট সাউন্ড ক্যামেরার পিছনে থাকা এই বেলা বসু সব কিছুকে ছাপিয়ে বলিউডে বাজিমাত করেছিলেন নিজের নৃত্যশৈলিতে। ষাটের দশকে টিনসেল টাউন জয় করা এই বঙ্গললনা এখন হারিয়ে গিয়েছেন বিস্মৃতির অতলে।

টেলিফোনের ওপারে নয়, লাইট সাউন্ড ক্যামেরার পিছনে থাকা এই বেলা বসু সব কিছুকে ছাপিয়ে বলিউডে বাজিমাত করেছিলেন নিজের নৃত্যশৈলিতে। ষাটের দশকে টিনসেল টাউন জয় করা এই বঙ্গললনা এখন হারিয়ে গিয়েছেন বিস্মৃতির অতলে।

০৩ ১৬
কলকাতায় এক সম্পন্ন পরিবারে বেলার জন্ম ১৮ এপ্রিল, ১৯৪১। আর্থিক সঙ্কটে পড়ে তাঁর বাবা অমূল্যরতন বসু কলকাতা ছেড়ে বম্বে (আজকের মুম্বই) পাড়ি দেন ১৯৫১ সালে। সেখানে তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। নতুন শহরে কিছু দিন চলার পরেই ছন্দ পতন। ১৯৫৩ সালে পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বেলার বাবা।

কলকাতায় এক সম্পন্ন পরিবারে বেলার জন্ম ১৮ এপ্রিল, ১৯৪১। আর্থিক সঙ্কটে পড়ে তাঁর বাবা অমূল্যরতন বসু কলকাতা ছেড়ে বম্বে (আজকের মুম্বই) পাড়ি দেন ১৯৫১ সালে। সেখানে তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। নতুন শহরে কিছু দিন চলার পরেই ছন্দ পতন। ১৯৫৩ সালে পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বেলার বাবা।

০৪ ১৬
শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেন বেলার মা, লীলাবতীদেবী। তিনি ছিলেন গৃহবধূ। পরে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি হাসপাতালে যোগ দেন নার্স হিসেবে। এই পরিস্থিতিতে, স্কুলের পাঠ শেষ হতেই মায়ের পাশে দাঁড়ালেন বেলা। সঙ্কটের সময়ে কাজে লাগল বেলার নৃত্যশিক্ষা। মুম্বই গিয়ে বেলা কত্থক, কথাকলি-সহ বিভিন্ন ধরনের নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেন বেলার মা, লীলাবতীদেবী। তিনি ছিলেন গৃহবধূ। পরে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি হাসপাতালে যোগ দেন নার্স হিসেবে। এই পরিস্থিতিতে, স্কুলের পাঠ শেষ হতেই মায়ের পাশে দাঁড়ালেন বেলা। সঙ্কটের সময়ে কাজে লাগল বেলার নৃত্যশিক্ষা। মুম্বই গিয়ে বেলা কত্থক, কথাকলি-সহ বিভিন্ন ধরনের নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

০৫ ১৬
বেলা যাঁর কাছে নাচ শিখতেন, তিনি পারিশ্রমিক নিতেন না। তিনি তাঁর ছাত্রীদের সুযোগ করিয়ে দিতেন হিন্দি ছবিতে গ্রুপ ডান্সার হিসেবে কাজ করার। সেখান থেকে যা পারিশ্রমিক আসত, সেটা তাঁকে দিয়ে দিতে হত।

বেলা যাঁর কাছে নাচ শিখতেন, তিনি পারিশ্রমিক নিতেন না। তিনি তাঁর ছাত্রীদের সুযোগ করিয়ে দিতেন হিন্দি ছবিতে গ্রুপ ডান্সার হিসেবে কাজ করার। সেখান থেকে যা পারিশ্রমিক আসত, সেটা তাঁকে দিয়ে দিতে হত।

০৬ ১৬
সে ভাবেই বলিউডে সুযোগ পান বেলা। স্কুলে পড়তে পড়তেই গ্রুপ ডান্সার হিসেবে তাঁর হাতেখড়ি হয় হিন্দি ছবিতে। মুম্বইয়ে বেলা থাকতেন অন্ধেরীতে। মাঝে মাঝেই স্কুলফেরত বান্ধবীদের সঙ্গে পৌঁছে যেতেন স্টুডিয়োর দরজায়। শুটিংয়ের পরিবেশের সঙ্গে কিছুটা পরিচিতি ছিল সেই সূত্রেই।

সে ভাবেই বলিউডে সুযোগ পান বেলা। স্কুলে পড়তে পড়তেই গ্রুপ ডান্সার হিসেবে তাঁর হাতেখড়ি হয় হিন্দি ছবিতে। মুম্বইয়ে বেলা থাকতেন অন্ধেরীতে। মাঝে মাঝেই স্কুলফেরত বান্ধবীদের সঙ্গে পৌঁছে যেতেন স্টুডিয়োর দরজায়। শুটিংয়ের পরিবেশের সঙ্গে কিছুটা পরিচিতি ছিল সেই সূত্রেই।

০৭ ১৬
স্কুল শেষ হওয়ার পরে বেলা ঠিক করলেন ছবিতে গ্রুপ ডান্সার হওয়াকেই পেশা হিসেবে নেবেন। সেই মুহূর্তে মা এবং ছোট ছোট চার ভাইবোনের পাশে দাঁড়াতে কিশোরী বেলার সামনে আর কোনও পথ খোলা ছিল না। বেলার গুণ ছিল, যে কোনও নাচ তিনি এক লহমায় তুলে নিতে পারতেন।

স্কুল শেষ হওয়ার পরে বেলা ঠিক করলেন ছবিতে গ্রুপ ডান্সার হওয়াকেই পেশা হিসেবে নেবেন। সেই মুহূর্তে মা এবং ছোট ছোট চার ভাইবোনের পাশে দাঁড়াতে কিশোরী বেলার সামনে আর কোনও পথ খোলা ছিল না। বেলার গুণ ছিল, যে কোনও নাচ তিনি এক লহমায় তুলে নিতে পারতেন।

০৮ ১৬
কিন্তু চেহারার কাছে হার মানল দক্ষতা। স্বাভাবিক ভারতীয় কিশোরীদের তুলনায় বেলা ছিলেন অনেকটাই লম্বা এবং রোগা। ফলে প্রায়ই বাদ পড়তেন নাচ থেকে। কারণ বাকিদের সঙ্গে তাঁর উচ্চতায় সাদৃশ্য থাকত না।

কিন্তু চেহারার কাছে হার মানল দক্ষতা। স্বাভাবিক ভারতীয় কিশোরীদের তুলনায় বেলা ছিলেন অনেকটাই লম্বা এবং রোগা। ফলে প্রায়ই বাদ পড়তেন নাচ থেকে। কারণ বাকিদের সঙ্গে তাঁর উচ্চতায় সাদৃশ্য থাকত না।

০৯ ১৬
এই উচ্চতাই এক দিন বেলাকে সুযোগ করে দিল সমবেত থেকে একক নৃত্যশিল্পী হওয়ার। বেলাকে দেখে পছন্দ হল পরিচালক নরেশ সেহগলের। চল্লিশ জন সমবেত শিল্পীর মধ্যে থেকে তিনি বেছে নিলেন সবথেকে লম্বা বেলাকেই। প্রস্তাব দিলেন ছবিতে একক নৃত্যশিল্পী হওয়ার।

এই উচ্চতাই এক দিন বেলাকে সুযোগ করে দিল সমবেত থেকে একক নৃত্যশিল্পী হওয়ার। বেলাকে দেখে পছন্দ হল পরিচালক নরেশ সেহগলের। চল্লিশ জন সমবেত শিল্পীর মধ্যে থেকে তিনি বেছে নিলেন সবথেকে লম্বা বেলাকেই। প্রস্তাব দিলেন ছবিতে একক নৃত্যশিল্পী হওয়ার।

১০ ১৬
পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে বেলা বসু হয়ে উঠলেন বলিউডের এক জন একক নৃত্যশিল্পী বা সোলো ডান্সার। তাঁর প্রথম বড় ব্রেক এসেছিল ‘ম্যাঁয় নশে মেঁ হুঁ’ ছবিতে। ১৯৫৯-এ মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে নায়ক নায়িকা ছিলেন রাজ কপূর এবং মালা সিনহা।

পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে বেলা বসু হয়ে উঠলেন বলিউডের এক জন একক নৃত্যশিল্পী বা সোলো ডান্সার। তাঁর প্রথম বড় ব্রেক এসেছিল ‘ম্যাঁয় নশে মেঁ হুঁ’ ছবিতে। ১৯৫৯-এ মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে নায়ক নায়িকা ছিলেন রাজ কপূর এবং মালা সিনহা।

১১ ১৬
কঠোর পরিশ্রমে নৃত্যশিল্পী হিসেবে বলিউডে নিজের পায়ের নীচে জমি মজবুত করেন বেলা। হয়ে ওঠেন হেলেন-আশা পারেখ-মুমতাজের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। শাস্ত্রীয় নৃত্য থেকে বলিউডি নাচ—বেলা বসুর বিচরণক্ষেত্র ছিল অবাধ।

কঠোর পরিশ্রমে নৃত্যশিল্পী হিসেবে বলিউডে নিজের পায়ের নীচে জমি মজবুত করেন বেলা। হয়ে ওঠেন হেলেন-আশা পারেখ-মুমতাজের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। শাস্ত্রীয় নৃত্য থেকে বলিউডি নাচ—বেলা বসুর বিচরণক্ষেত্র ছিল অবাধ।

১২ ১৬
১৯৬২ সালে ‘সওতেলা ভাই’ ছবিতে গুরু দত্তের বিপরীতে বেলার অভিনয় নজর কেড়েছিল দর্শকদের। সে বছরই তিনি ‘হাওয়ামহল’ ছবিতে অভিনয় করেন হেলেনের বোনের ভূমিকায়। ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেও বেলার কথা ভাবতে লাগলেন পরিচালক প্রযোজকরা।

১৯৬২ সালে ‘সওতেলা ভাই’ ছবিতে গুরু দত্তের বিপরীতে বেলার অভিনয় নজর কেড়েছিল দর্শকদের। সে বছরই তিনি ‘হাওয়ামহল’ ছবিতে অভিনয় করেন হেলেনের বোনের ভূমিকায়। ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেও বেলার কথা ভাবতে লাগলেন পরিচালক প্রযোজকরা।

১৩ ১৬
নায়িকা হিসেবে বেলাকে প্রথম দেখা গিয়েছিল ‘নাগিন অউর সপেরা’ ছবিতে। ১৯৬৬ তে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে বেলার বিপরীতে নায়ক ছিলেন মনোহর দেশাই। এর পাশাপাশি তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য বাকি ছবি হল ‘বন্দিনী’, ‘প্রফেসর’, ‘আম্রপালী’, ‘শিকার’, ‘প্রেমপত্র’, ‘জিদ্দি’, ‘চিত্রলেখা’, ‘পুনম কে রাত’, ‘বক্সার’, ‘অভিনেত্রী’ এবং ‘জয় সন্তোষী মা’।

নায়িকা হিসেবে বেলাকে প্রথম দেখা গিয়েছিল ‘নাগিন অউর সপেরা’ ছবিতে। ১৯৬৬ তে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে বেলার বিপরীতে নায়ক ছিলেন মনোহর দেশাই। এর পাশাপাশি তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য বাকি ছবি হল ‘বন্দিনী’, ‘প্রফেসর’, ‘আম্রপালী’, ‘শিকার’, ‘প্রেমপত্র’, ‘জিদ্দি’, ‘চিত্রলেখা’, ‘পুনম কে রাত’, ‘বক্সার’, ‘অভিনেত্রী’ এবং ‘জয় সন্তোষী মা’।

১৪ ১৬
১৯৬৭ সালে বিয়ে করেন বেলা। তাঁর স্বামী আশিস কুমার সেনগুপ্ত ছিলেন একাধারে লেখক, পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতা। বিয়ের পরে ধীরে ধীরে অভিনয় করা কমিয়ে দেন বেলা।

১৯৬৭ সালে বিয়ে করেন বেলা। তাঁর স্বামী আশিস কুমার সেনগুপ্ত ছিলেন একাধারে লেখক, পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতা। বিয়ের পরে ধীরে ধীরে অভিনয় করা কমিয়ে দেন বেলা।

১৫ ১৬
এর পর দুই সন্তানের মা হওয়ার পরে তিনি অভিনয় পুরোপুরি ছেড়ে দেন। বেলার মেয়ে মঞ্জুশ্রী এক জন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। ছেলে, অভিজিৎ একটি আর্থিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী।

এর পর দুই সন্তানের মা হওয়ার পরে তিনি অভিনয় পুরোপুরি ছেড়ে দেন। বেলার মেয়ে মঞ্জুশ্রী এক জন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। ছেলে, অভিজিৎ একটি আর্থিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী।

১৬ ১৬
বেলার স্বামী প্রয়াত হয়েছেন ২০১৩ সালে। প্রায় আশি বছরের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাওয়া এই প্রাক্তন অভিনেত্রীর অবসর এখন কাটে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে। লাইট সাউন্ড ক্যামেরার দুনিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন অনেক আগেই। প্রচারের আলো থেকেও দূরে থাকতে ভালবাসেন অতীতের এই তারকা।

বেলার স্বামী প্রয়াত হয়েছেন ২০১৩ সালে। প্রায় আশি বছরের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাওয়া এই প্রাক্তন অভিনেত্রীর অবসর এখন কাটে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে। লাইট সাউন্ড ক্যামেরার দুনিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন অনেক আগেই। প্রচারের আলো থেকেও দূরে থাকতে ভালবাসেন অতীতের এই তারকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy