Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

সৃজিতকাহিনি

গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার নয়। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিনও ডাব্বাওয়ালার খাবার খাবেন তিনি। মুম্বই পাড়ি দেওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে দাবি করলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ও দিকে ইন্দ্রনীল রায়।লাস্ট রোববার থেকে আর লেক গার্ডেন্স নয়। তাঁর ঠিকানা আরব সাগর তীরের বান্দ্রা। এই মুহূর্তে ব্যস্ত ‘রাজকাহিনীর’ হিন্দি রিমেক ‘বেগমজান’য়ের প্রিপ্রোডাকশন নিয়ে। মুম্বইয়ের ইনিংস শুরু করার আগে সৃজিত আনপ্লাগড...

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৩৩
Share: Save:

আপনি নাকি কার্টার রোডের ফ্ল্যাটে একা?

(হাসি) আমি তো বরাবরই একা।

প্লিজ সৃজিত যাকে ইচ্ছে এই সব বলতে পারেন, আনন্দplus-কে বলবেন না।

হা হা। আনন্দplus-কে আমি সব সময় সত্যি বলেছি। মুসাফির আমি।

কী হয়েছে বলুন তো? খুব কষ্ট হচ্ছে নাকি একা থাকতে?

(প্রচণ্ড হাসি) আরে বরাবরই তো মুসাফির আমি। প্রথমে দিল্লি, সেখান থেকে বেঙ্গালুরু। তার পর ব্যাক টু কলকাতা। এ বার মুম্বই।

শুনলাম রবিবার দু’একজনকে ফোনটোন করে জিজ্ঞেস করেছেন তাঁরা ফ্রি নাকি....

(থামিয়ে দিয়ে) আর যেটা আপনারা বলবেন না তা হল, যে দু’একজনকে ফোন করেছি তারা পুরুষ। এবং রাত্রে ভেবেছিলাম...

রাত্তিরটা ইন্টারেস্টিং...

শেষ করতে দিন আমায়। তাদের ফোন করেছিলাম রাত্রে ডিনার খেতে যাওয়ার জন্য।

আপনার ফ্ল্যাটটা শুনলাম বিরাট। আমির খানের বাড়ির তিন চারটে প্লট ছেড়ে....

হ্যাঁ। ফ্ল্যাটটা বেশ বড়। সি-ফেসিং। ‘বিশেষ ফিল্মস’য়ের তরফ থেকে আমাকে দেওয়া হয়েছে। আমি এখনও মুম্বই অত চিনি না। তবে যেখানে আছি সেটা যে কার্টার রোড তা জানি। কাছাকাছি শুনলাম পরিনীতি চোপড়ার বাড়ি। প্রীতি জিন্টার বাড়ি...

একটু দূরেই রাজেশ খন্নার ‘আশীর্বাদ’।

হ্যাঁ। ওই বাড়িটাও যেতে আসতে দেখছি রোজ। জীবনটা একটু হলেও বদলে গিয়েছে। মুকেশ ভট্টের অফিসে আমাকে একটা আলাদা কেবিন দেওয়া হয়েছে। সেখানে সকাল সকাল চলে যাই। গিয়ে কাজ শুরু করি। সব নতুন লোকজন চারপাশে। কলকাতার সকালের আড্ডাগুলো মিস করছি অলরেডি। তবে কাজটাই অনেকটা সময় নিয়ে নিচ্ছে।

‘বেগমজান’য়ের প্রিপ্রোডাকশানের কাজ?

ইয়েস। ‘বেগমজান’য়ের প্রিপ্রোডাকশনের কাজ। ‘বেগমজান’য়ের চরিত্রে বিদ্যা বালন। সেই সব নিয়েই কেটে যাচ্ছে সারাদিন।

কলকাতা থেকে ‘মিস্ ইউ’ লেখা বিভিন্ন হিরোইনের এসএমএস, হোয়াটস্যাপ আসছে না?

এটুকুই বলব কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই। কেউ আমাকে মিস করছে বলে তো মনে হয় না।

ডিরেক্টররা যে বিশেষ করছে না সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আপনি মুম্বই যাওয়াতে তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই যথেষ্ট খুশি হবেন।

(হাসি) কিন্তু এখানে একটা জিনিস ক্লিয়ার করে দিতে চাই। আমি কিন্তু কলকাতা থেকে ‘গন’ নই। আমি আছি। শুধু ভৌগোলিক একটা চেঞ্জ হয়েছে। আর যেটা হয়েছে সেটা হল এত দিন আমি বাংলা ভাষায় নিজের গল্প বলতাম, এ বার হিন্দিতে বলব। এর পরে হয়তো ইংলিশে বলব।

মানে আরও পশ্চিম? নেক্সট স্টপ কি লস অ্যাঞ্জেলিস?

না না হলিউড নয়। মুম্বইতে বসেও ইংলিশে ছবি বানানো যায়। যে রকম যে রকম সব এগোবে আনন্দplus -কে জানাব...

আচ্ছা হঠাৎ করে যে একা থাকছেন, নিঃসঙ্গ লাগছে না?

মায়ের সঙ্গে তো থাকতাম। তাই মাকে ডেফিনিটলি খুব মিস করেছি। বাকিটা ঠিক আছে।

রান্নাবান্না কে করছে আপনার?

একটা ডাব্বাওয়ালা ঠিক করেছি। সে-ই রাতের খাবারটা দিয়ে যায়। লাঞ্চ তো মুকেশ ভট্টের অফিসেই করে নিই।

কলকাতায় বহু দিন লর্ডস মোড়ের তরকা রুটি ছিল আপনার রাতের সঙ্গী।

আমি খুব খুশি আপনি এটা বললেন।

কেন?

এই যে আমার একটা ইমেজ তৈরি হয়েছে আমার নাকি প্রচুর গার্লফ্রেন্ড, প্রত্যেক রাত্রে আমি নাকি ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাই...

প্লিজ মুখ খোলাবেন না সৃজিত।

হা হা হা হা। কিন্তু লর্ডসের তড়কা রুটি তো এটা প্রমাণ করে যে আমার জীবন মোটেই অত কালারফুল ছিল না। কিন্তু সবটা জেনেও আপনি আর আপনাদের বিভাগীয় সম্পাদক কিছুতেই মানেন না আমার কথা।

আপনার পাস্ট রেকর্ডের জন্যই মানে না কেউ সৃজিত। এখানেও আপনি বেশি দিন ডাব্বাওয়ালার খাবার খাবেন না ফর শিওর। একটু দূরেই বিপাশা, সুস্মিতাদের বাড়ি।

না ভাই। একমাস পরে এসে দেখবেন সেই ডাব্বাওয়ালার খাবারই খাচ্ছি। আর এখন কোনও বান্ধবীটান্ধবি নয়। মন দিয়ে শুধু কাজ করে যেতে চাই।

আপনি কি এখন সিঙ্গল?

ইয়েস।

সিঙ্গল তো অনেক রকমের হয়। আপনি কি সিঙ্গল রেডি টু মিঙ্গল?

(হাসি) আহ্... প্লিজ মন দিয়ে আমার প্রথম হিন্দি ছবিটা আমাকে বানাতে দেবেন?

ওকে। তা হলে কাজের কথায় ফিরি। কেমন লাগছে নতুন সেট আপ? নতুন লোকজন?

মনে হচ্ছে ঠিক ‘অটোগ্রাফ’য়ের আগের সময়টায় ফিরে গিয়েছি। একদম স্ক্র্যাচ থেকে শুরু করলাম আবার। আবার কমফর্ট জোন থেকে বেরোলাম পাঁচ বছর পর। আবার ইউলিসিস পাড়ি দিল। ভীষণ চ্যালেঞ্জিং সেটা আমার কাছে।

একটা কথা বলুন, কলকাতায় তো আপনার একটা ইন্টেলেকচুয়াল ডিরেক্টর ইমেজ রয়েছে। সেটা থেকে বলিউডের হার্ডকোর বাণিজ্যিক পৃথিবীতে পড়ে, কী ধরনের মেন্টাল অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হচ্ছে আপনাকে?

দেখুন, বাংলা ছবি যখনই হিন্দিতে বানানো হয়েছে, সারাদেশের দর্শকের কথা মাথায় রেখে প্রত্যেক পরিচালক কিছু কিছু অ্যাডজাস্টমেন্ট করেছেন। ‘গল্প হলেও সত্যি’ যখন ‘বাবুর্চি’ হয়, তখন হিন্দি ছবির দর্শকের সেন্সিবিলিটি ভেবেই বানানো হয়। আমার মনে হয় না মেন্টাল অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে। তবে এটাও বলি, আমি একটা ব্যাপারে খুব কনশাস। আমি মনে করি, যে কোনও ডিরেক্টরের একটা সিগনেচার থাকে। একটা ট্রেডমার্ক থাকে। হিন্দি ছবি করতে গিয়ে সেই আইডেন্টিটিটা যেন নষ্ট না হয়, সেটা সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। বাংলার দর্শকদের বলছি, হিন্দি ছবির কমার্শিয়াল পৃথিবীতেও আমার ট্রেডমার্কটা তাঁরা ঠিকই খুঁজে পাবেন।

মুম্বইতে কি নতুন টিম আপনার? কলকাতার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরদের নিয়ে যাবেন না?

এখনও কথাবার্তা চলছে। এই বিষয়গুলো ফাইনালাইজড হয়নি। তবে আমার চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সৌম্য মোস্ট প্রোবাবলি মুম্বই আসবে।

যেহেতু ‘রাজকাহিনী’ তাই অনেকেরই খুব আগ্রহ এটা জানার, হিন্দি ছবিতে কোন কোন অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করবেন? কলকাতার কেউ কি থাকবেন?

আর দিন দশেকের মধ্যে আশা করি সব কিছু ফাইনাল হয়ে যাবে। জানাব সব। তা ছাড়া এখানকার অনেকের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে...

যেমন?

যেমন মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তো মনোজভাইকে জুলফিকরের জন্যই চেয়েছিলাম। এ ছাড়া রাজ কুমার রাওয়ের সঙ্গে মিটিং হয়েছে।

আচ্ছা, ‘রাজকাহিনী’ রিলিজের সময় এবং তার পরেও তো ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন আপনি। তা হলে হিন্দি ছবি বানানোর সময় ঋতুপর্ণাকে নিলেন না কেন?

এখানে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করতে চাই। ‘বেগমজান’ কিন্তু ‘রাজকাহিনী’র রিমেক বলতে যা বলে তা নয়। এটা ‘রাজকাহিনী’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বানানো একটা সম্পূর্ণ নতুন ছবি। শুধু যদি রিমেকই হত, তা হলে সেটা আমার কাছেও চ্যালেঞ্জিং হত না। এখানে গল্পটা পঞ্জাবে ফেলা হয়েছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থানটাও অনেকটাই আলাদা। তাই সম্পূর্ণ নতুন ছবি যখন, সেখানে আমাকে নতুন মুখ নিতেই হত।

মুম্বইতে সুযোগের সঙ্গে সঙ্গে কম্পিটিশনও যেমন বেশি, তেমনই পলিটিক্সও তো রয়েছে এক ধরনের। সেটাকে কী ভাবে ট্যাকল করবেন, সেটা ভেবেছেন?

(হাসি) সেটার জন্য কলকাতা আমাকে তৈরি করে দিয়েছে তো।

এটা কি শ্লেষের সঙ্গে বললেন?

না, না, একদমই নয়। কলকাতাতে আমি অনেক কিছু ফেস করেছি যেটাতে আমার নেট প্র্যাকটিসটা হয়ে গিয়েছে। তবে হ্যাঁ, মুম্বই অনেক বড় মাঠ। এখানে স্টেকস অনেক হাই। কম্পিটিশন অনেক বেশি। বাট আই থিংক আ’য়াম রেডি টু টেক অন মুম্বই।

শেষ প্রশ্ন। ভ্যালেনটাইন্স ডে তো রবিবার। তার আগে কার্টার রোডের ফ্ল্যাটে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা কি সত্যি করবেন না এই বছর?

(মস্করার গলায়) দেখুন ভাই সিনেমাটাই তো এখন ভ্যালেন্টাইন।

লাই ডিটেকটরের সামনে এই সব বললে শুধু ‘লাই’ লেখা লাল আলো জ্বলত, সৃজিত।

আনন্দplus-য়ের জন্য ওপেন অফার রইল। যে কোনও দিন রাতে আমার ফ্ল্যাটে আসতে পারেন। আপনারা দেখবেন ম্যায় অউর মেরে তনহাইয়ের মতো ম্যায় অউর মেরে ডাব্বাওয়ালার খাবার রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

SrijitMukherjee Interview entertainment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE